স্ত্রীকে ছেড়ে শ্যালিকাকে বিয়ের দাবি শফিকুলের

রাজধানীর কদমতলীতে একই পরিবারের তিনজনকে খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন শফিকুল ইসলামকে সোমবার তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দাবি করেছেন, সেই রাতের ঘটনায় তার কোনো ভূমিকা ছিল না। যদিও তার স্বজনরা বিষয়টি মানতে নারাজ। তাদের ভাষ্য, শফিকুলের পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রী মিলেই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, হত্যায় শফিকুলের কোনো যোগসাজশ ছিল কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতেই তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আবার মুনের বক্তব্যও যাচাই করা হচ্ছে। এজন্য দুজনকে আলাদা জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে তাদের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
শনিবার সকালে রাজধানীর কদমতলীর মুরাদপুর এলাকার লাল মিয়া সরকার রোডের বাসা থেকে জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করে তিনজনকে হত্যার কথা জানান মুন। পরে পুলিশ গিয়ে সেখান থেকে তার বাবা মাসুদ রানা, মা মৌসুমী ইসলাম ও ছোট বোন জান্নাতুল ইসলাম মোহিনীর হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে। অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় মুনের স্বামী শফিকুল ও তাদের মেয়ে মারজান তাবাসসুম তৃপ্তিয়াকে। ‘মা-বাবা-বোনকে খুন করেছি, পুলিশ না আসলে স্বামী-মেয়েকেও মেরে ফেলবো’
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, শফিকুল জিজ্ঞাসাবাদে বলছেন, দাম্পত্য কলহের জের ধরে কয়েক মাস আগে স্ত্রীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। এরপর গত ২৫ এপ্রিল তিনি শ্যালিকা মোহিনীকে বিয়ে করেন। অবশ্য বিয়ে বা বিচ্ছেদের কোনো প্রমাণপত্র তিনি দেখাতে পারেননি। তবে তিনি জোর দিয়ে বলছেন, তিন খুনে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সেই রাতে ঘুমের ওষুধ মেশানো পানীয় খেয়ে পরিবারের অপর সদস্যদের মতো তিনিও অচেতন হয়ে পড়েন। পরে কী ঘটেছে তিনি বলতে পারছেন না। মুন মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ নন বলেও তিনি দাবি করেন। এদিকে মুনের খালা মোছা. ইয়াসমিন প্রথম দিন থেকেই এই হত্যাকাণ্ডে শফিকুলের ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি করে আসছেন। তিনি বলেন, মুন হত্যায় জড়িত হলেও তার একার পক্ষে এ ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। স্বামীর পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী সে হত্যায় অংশ নিতে বাধ্য হয়েছে। কারণ সন্তানকে মেরে ফেলার কথা বলে তাকে জিম্মি করা হয়েছিল। অথচ শফিকুল অচেতন থাকার ভান করে নিজের দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন। পুলিশ তাকে কড়াভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। তিনি জানান, সাত-আট মাস আগে মুন অতিষ্ঠ হয়ে স্বামীকে তালাকের নোটিশ পাঠান। তখন থেকে তিনি এক আত্মীয়ের বাসায় থাকতে শুরু করেন। তবে এর দুই মাস পর পারিবারিক বৈঠকে আর নির্যাতন না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যান শফিকুল। তিনি বিয়ের ছয় মাসের মাথায় মুনের সাবেক প্রেমিক আমিনুল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলা থেকে রেহাই পেতে তিনি শ্বশুরবাড়ি থেকে ২০ লাখ টাকা চেয়ে আসছিলেন। সেইসঙ্গে সম্পত্তিও লিখে দেওয়ার দাবি করেন। টাকা না পেয়েই তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কদমতলী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) জাকির হোসেন বলেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাউকেই দায়ী বা নির্দোষ বলার সুযোগ নেই। এ কারণেই মুনকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পাশাপাশি এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সোমবার শফিকুলকে আদালতে হাজির করা হয়। তাকে সাত দিনের রিমান্ডে চায় পুলিশ। শুনানি শেষে তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ‘মা-বাবা-বোনকে খুন করেছি, পুলিশ না আসলে স্বামী-মেয়েকেও মেরে ফেলবো’
গত শনিবার রাজধানীর কদমতলীর মুরাদপুর হাইস্কুলের ২৮, লালমিয়া সরকার রোডের ছয় তলা বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটে থেকে মাসুদ রানা (৫০), মৌসুমী ইসলাম (৪৫) ও জান্নাতুল ইসলামকে (২০) হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত মাসুদ রানার ভাই সাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে কদমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More