আলমডাঙ্গার পানব্যবসায়ী সবুর হত্যার রহস্য উন্মোচনের পথে
ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে চাচাশ্বশুর ও পারিবারিক ভ্যানচালক আটক : রিমান্ডের আবেদন
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার হারদী গ্রামের পানব্যবসায়ী আব্দুস সবুর হত্যাকা-ের সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ চাচাশ্বশুরসহ ২ ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার ভোররাতে পুলিশ তাদের আটক করা হয়। দীর্ঘ ১ বছর ৫ মাস পর এ হত্যাকা-ের রহস্য উন্মোচিত হতে যাচ্ছে বলে পুলিশ আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
মামলাসূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২২ জুন রাতে আলমডাঙ্গার হারদী গ্রামের পানব্যবসায়ী আব্দুস সবুরকে (৩৬) গুলি করে হত্যা করা হয়। ভোরে নিজ ঘরের খাট থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যাকা-ের পর আব্দুস সবুরের স্ত্রী সালমা খাতুন জানান, আব্দুস সবুর যে রুমে রাত কাটাতেন তার পাশের রুমে সন্তানসহ তিনি (স্ত্রী) থাকতেন। বন্ধুদের সাথে আড্ডা শেষে আব্দুস সবুর সাধারণত রাত ১টা থেকে দেড়টার দিকে বাড়ি ফিরতেন। বাড়ি ফিরে তিনি তাকে (স্ত্রীকে) ডেকে তুলতেন। কিন্তু ঘটনার রাতে তার আচরণের ব্যত্যয় ঘটে। ২১ জুন রাত ১০টার দিকে আব্দুস সবুর বাড়ি থেকে খেয়ে স্ত্রী সালমা খাতুনের কাছ থেকে ১শ টাকা চেয়ে নিয়ে বাইরে যায়। কখন ফিরে এসেছিলেন তা তিনি জানতে পারেননি। ভোর ৩টার দিকে একটা শব্দ শুনে তার ঘুম ভেঙে যায়। সে সময় তিনি নিজের রুম থেকে বের হয়ে স্বামীর (আব্দুস সবুরের) রুমে যেতে চেষ্টা করেও পারেননি। কেউ বাইরে থেকে তার রুমের দরজার শেকল আগে থেকেই আটকে দিয়েছিলো। এ সময় তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে গিয়ে তার রুমের শেকল খুলে দেয়। তিনি রুম থেকে বের হয়ে দেখেন স্বামীর রুমের দরজা খোলা। ভেতরে গিয়ে খাটে শুয়ে থাকাবস্থায় স্বামী আব্দুস সবুরের গুলিবিদ্ধ লাশ দেখতে পান।
আব্দুস সবুরকে শাবল বা ভারি কোনো কিছু দিয়ে কপালে আঘাত করে হত্যা করা হতে পারে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলো। কিন্তু ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকের বক্তব্য পুলিশের ধারণা পাল্টে দেয়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবীর জানান, শর্টগান অথবা ওয়ান শুটার গানের গুলিতে আব্দুস সবুরের মৃত্যু ঘটেছে। তার মস্তিষ্কের ভেতরে শর্টগান বা ওয়ান শুটার গানের গুলির ৩৬টি স্পিন্ডার পাওয়া গিয়েছিলো। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় এজাহার দায়ের করেন। তবে সেই এজাহারে কাউকে আসামি বা সন্দেহ করা হয়নি।
তবে পুলিশ ঘটনার দিনেই হারদী গ্রামের মৃত কালু ম-লের ছেলে মনির ও একই গ্রামের মৃত কলিম উদ্দীনের ছেলে আতিয়ারকে আটক করে। তারা দুজনেই নিহত আব্দুস সবুরের বন্ধু। দীর্ঘ ১ বছরের অধিক সময়েও পুলিশ এ হত্যাকা-ের রহস্যের কোন কুলকিনারা করতে পারেনি। সাধারণ মানুষও সবুর হত্যাকা-ের কথা ভুলতে বসেছিলো। কিন্তু আলমডাঙ্গা থানার বর্তমান অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবীরের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত মাসুদুর রহমান বেশ কিছুদিন ধরে এ হত্যাকা-ের রহস্য উন্মোচনের জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। এরই প্রেক্ষিতে সবুর হত্যাকা-ের রহস্য উন্মোচিত হতে চলেছে।
নিহত সবুর গভীররাত পর্যন্ত তিনি সবান্ধবে নেশা করতেন। নিজের উপার্জন তো বটেই, তার স্ত্রীর বেতনের টাকাও দেদারচ্ছে উড়াতেন নেশার পেছনে। আব্দুস সবুরের স্ত্রী সালমা খাতুন পল্লী বিদ্যুত সমিতির আলমডাঙ্গা অফিসে কর্মরত। এই নেশা করা নিয়ে স্ত্রীর সাথেও তার সম্পর্কের অবনতি ছিলো। এ বিষয়টি জানার পর পুলিশের বদ্ধমূল ধারণা জন্মে যে, পারিবারিক অশান্তিই এ হত্যাকা-ের কারণ হতে পারে। এ বিষয়টি সামনে নিয়ে পুলিশ ব্যাপক তদন্ত শুরু করে। নিহতের ও তার ঘনিষ্ঠদের মোবাইলফোনের কললিস্ট চেক করা হয়। যে সব নম্বর থেকে অস্বাভাবিকভাবে অতিরিক্ত যোগাযোগ করা হয়েছে তাদেরকে টার্গেট করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। এক পর্যায়ে এ হত্যাকা-ের সাথে জড়িতদের পরিচয় বের হয়ে আসে বলে একটি সূত্র দাবি করে।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডর সাথে জড়িত সন্দেহে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার কুমারীডাঙ্গা গ্রামের মৃত জহির উদ্দীনের ছেলে শফি উদ্দীনকে (৫০) আটক করে। আটককৃত শফি উদ্দীন নিহত আব্দুস সবুরের চাচাশ্বশুর। পরে একই রাতে হারদী গ্রামের রিকন শেখের ছেলে পাখিভ্যান চালক কিরণ শেখকে (২১) আটক করা হয়। আটককৃত কিরণ শেখের ভ্যানে নিহত আব্দুস সবুরের শিশু সন্তান ও স্ত্রী যাতায়াত করতেন। তাদেরকে আটক করতে পুলিশকে বিশেষ কৌশল প্রয়োগ করতে হয় বলে জানা যায়।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবীর জানান, আটক ২ ব্যক্তি এ হত্যাকা-ের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। আশা করছি হত্যাকা-ে জড়িত বাকিদের খুব দ্রুত আটক করা সম্ভব হবে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আটককৃতদের গতকাল আদালত হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ।