কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন আগামীকাল

ভোটের ৩০ ঘণ্টা আগে সবুজ ও মাসুদ প্যানেল : ঘুরলো নির্বাচনী মোড়

দর্শনা অফিস: কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন আগামীকাল শনিবার। ভোটের মাত্র ৩০ ঘণ্টার আগে ক্ষমতাসীন সবুজ ও মাসুদের প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ঘুরলো নির্বাচনী মোড়। ক্ষমতার পালা বদলের সম্ভাবনা অনেকটা ক্ষীণ। এবার অপেক্ষার পালামাত্র। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক ৬ বারের সভাপতি আজিজুল হক অবসর গ্রহণের কারণে তারই সংগঠনের হাল ধরেন ছেলে ফিরোজ আহমেদ সবুজ। বাবার সংগঠনের হাল ধরে প্রথম নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হলেও তার দক্ষতা ও দুরদর্শিতায় ভোটারদের মন জয় করে পরবর্তীতে নির্বাচিত হন সভাপতি পদে। বর্তমান পরিষদের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ শ্রমিক স্বার্থে কাজ করে নিজের অবস্থান করেছেন আরো মজবুত। এদিকে ৮বার শ্রমিক-কর্মচারীদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন মাসুদুর রহমান মাসুদ। সাধারণ সম্পাদক পদে শ্রমিক স্বার্থ আদায় ও চিনিকলের উন্নয়নে কাজ করে দক্ষতা, দুরদর্শিতা, আন্তরিকতার পরিচয় দিয়ে নিজের অবস্থান যেমন করেছেন শক্তিশালী, তেমনিভাবে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন শ্রমিক-কর্মচারীদের হৃদয়ের মনিকোটায়। মাসুদুর রহমান বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েও দিয়েছেন তার যোগ্যতার পরিচয়। ফলে এবারের নির্বাচনে তিনি খোস মেজাজে রয়েছেন বিজয় নিশ্চিত মনে করে। ৮৫ বছর বয়সী কেরুজ চিনিকলের ইতিহাসে ৮বার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের রেকর্ড ভেঙেছেন মাসুদুর রহমান। আজ বাদে কাল নির্বাচন। নির্বাচনের ৩০ ঘণ্টা আগেই বর্তমান সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ ও মাসুদুর রহমান দীর্ঘ বৈঠকের পর অবশেষে প্যানেল ঘোষণা করলেন গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে। প্যানেল ঘোষণার সাথে সাথে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে রব রব ভাব হয়। সবুজ/মাসুদ শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা কেরুজ আঙিনা। এ ঘোষণার পর ক্ষমতাসীন এ দুনেতার ফের বিজয় নিশ্চিত হয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েন শ্রমিক-কর্মচারীরা। এদিকে সাবেক ৩বারের সভাপতি তৈয়ব আলী (বাইসাইকেল) প্রতীক নিয়ে বিজয় নিশ্চিত বললেও তিনি কোন প্যানেলে অন্তর্ভূক্ত হননি বলে জানান। ৩ বার দায়িত্ব পালনকালে শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করায় তার অবস্থান মজবুত বলেও দাবি করেন। সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স (আনারস) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে প্রিন্সের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি। এদিকে এবারই প্রথম সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জয়নাল আবেদীন নফর। নফর (হারিকেন) প্রতীকে ভোট করছেন। নতুন হিসেবে অল্প সময়ের মধ্যে ভোটারদের আস্থাভাজন হয়েছেন বলে দাবি করে তিনি জানান, এবারের নির্বাচনে সকল অপশক্তির মোকাবেলা করে আমাকেই নির্বাচিত করবেন ভোটাররা। এবারের নির্বাচনে ২৫টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রার্থীরা। এবার সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ (ছাতা) ও সাবেক সভাপতি তৈয়ব আলী (বাইসাইকেল) প্রতীকে লড়বেন। সহসভাপতি পদে নির্বাচিত হবেন দুজন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এসএম কবীর (কলস), আনিসুর রহমান (গরুরগাড়ী), রেজাউল করিম (টেবিল) ও মফিজুল ইসলাম (তালাচাবি), সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ (চাঁদতারা), সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স (আনারস) ও নতুন প্রার্থী জয়নাল আবেদীন নফ (হারিকেন) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে থাকবেন। যুগ্ম-সম্পাদক পদেও দুজন নির্বাচিত হবেন। ভোটযুদ্ধে মাঠে রয়েছেন বর্তমান যুগ্ম-সম্পাদক খবির উদ্দিন (আম), সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান (চেয়ার), হাফিজুর রহমান (হাঁস), মহিদুল ইসলাম (হাতপাখা) ও আতিয়ার রহমান (মাছ) প্রতীকে ভোট করবেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ইকবাল হোসেন (কাপপিরিচ) ও বাবুল আক্তার (প্রজাপতি), দফতর সম্পাদক পদে সালাউদ্দিন সনেট (উড়োজাহাজ) এবং আবুল হোসেন (হরিণ), প্রচার সম্পাদক পদে সাংবাদিক ইয়াসির আরাফাত মিলন (কুড়েঘর), মিজানুর রহমান (মোরগ) ও আব্দুল কুদ্দুস (মোবাইল ফোন)। কোষাধ্যক্ষ পদে কায়েশ আব্দুল্লাহ (রিকশা) ও আবু সাঈদ (কাঁঠাল) প্রতীকে ভোট করবেন। এছাড়া ৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১ ও ৬ নং ওয়ার্ডে ৪জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। যারা ভোটযুদ্ধে রয়েছেন তাদের মধ্যে ২নং ওয়ার্ডে বাবর আলী (বেলচা), আব্বাস আলী (বালতি) ও আমিরুল ইসলাম (ডাব)। ৩নং ওয়ার্ডে জাহিদুল ইসলাম (ডাব), মোজাহারুল ইসলাম (হাতুড়ি), শরিফুল ইসলাম (টর্চলাইট) ও শফিকুল ইসলাম (আখের আটি)। ৪নং ওয়ার্ডে মতিয়ার রহমান (ডাব), কামরুল হাসান লোমান (আখের আটি), মাহমুনুল হাসান (টর্চলাইট)। ৫নং ওয়ার্ডে সাইফ উদ্দিন সুমন (ডাব), সাহেব আলী (টর্চলাইট) ও হারিজুল ইসলাম (আখেরআটি) এবং ৭নং ওয়ার্ডে জাহিদুল ইসলাম (গাভী), জহিদুল ইসলাম (বালতি) ইদ্রিস আলী (ডাব), রবিউল ইসলাম (বেলচা) আজাদুল ইসলাম (হাতুড়ি) ও তারাপদ (আখেরআটি) প্রতীকে নির্বাচন করবেন। এদের মধ্যে দুটি ওয়ার্ডে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় ৪জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন ১নং ওয়ার্ডের সেলিম খান এবং ৬ নং ওয়ার্ডের মাজেদুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম ও মজিবর রহমান। এবারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান কেরুজ চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব পরিবহন বিভাগের (প্রকৌশলী) আবু সাইদ, সদস্য প্রশাসন বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপক (পার্সনাল) আলআমিন, উপ-ব্যবস্থাপক (হিসাব) জাবেদ হাসান, জুনিয়ার অফিসার (বাণিজ্যিক) জহির উদ্দিন। নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে কেরুজ পুরাতন হাইস্কুলের পরিবর্তে প্রাইমারি স্কুলভবনে ভোট গ্রহণ করা হবে। ১০টি বুথে ১১৮৭ জন ভোটার গোপন ব্যালেটের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More