গাংনী প্রতিনিধি: করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে মেহেরপুর জেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর বিধি-নিষেধ পালন শুরু হয়েছে। নির্দেশনা মানাতে প্রথম দিনেই কঠোর অবস্থানে প্রশাসন ও পুলিশ। বিকেল থেকে রাত অবধি চলেছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দীর্ঘ অভিযান। অভিযানে ১৭টি মামলায় ৮ হাজার ৪শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। দিনব্যাপী প্রশাসন, পুলিশের কঠোরতায় সফলভাবে দিনটি পার হয়েছে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। এ ধরনের জনসচেতনতা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে মেহেরপুর জেলাকে করোনা মুক্ত করা সম্ভব বলেও মনে করেন তারা।
গতকাল সকাল থেকে নির্দেশনা অনুযায়ী চলাচল করেনি গণপরিবহন। গাংনী বাজারের কয়েকটি স্থানসহ এ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বাজার ও সড়কগুলোতে ছিলো পুলিশের কড়া টহল। ঘর থেকে বের হওয়া মানুষকে নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে যথার্থ প্রয়োজন নিশ্চিত হয়েই ছাড় দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। অযথা বের হয়েছেন যারা তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে নিজ বাড়িতে। সকালে গাংনী শহরের টহল তদারকিতে ছিলেন ওসি বজলুর রহমান। নির্দেশনা অনুযায়ী দুপুর বারটা বাজতেই বন্ধ করে দেয়া হয় সকল প্রকার দোকানপাট। আর চায়ের দোকানগুলো খুলতে দেয়া হয়নি সকাল থেকেই। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ক্যাম্পগুলোর বিভিন্ন দল নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করেছেন। পুলিশের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান নিয়ে মাঠে ছিলেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমি খানম।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনারুল ইসলাম বাবু নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে গাংনী বাজারে নির্দেশনা বাস্তবায়নে সহায়তা করেন। ঘর থেকে বের হওয়া মানুষকে নানাভাবে সচেতন করে ঘরে ফেরান তারা।
সকালের অভিযান শেষ করে বিকেল থেকে আবারও শুরু হয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের কঠোর অভিযান। গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমি খানম গাংনী থানা পুলিশের একটি দল নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরু করেন পূর্ব মালসাদহ গ্রাম থেকে। নির্দেশনা অমান্য করে সেখানে একটি দোকান খোলা থাকায় জরিমানা আদায় করে দোকানটি বন্ধ নিশ্চিত করা হয়। এর পরে গোপালনগর, মড়কা, রাইপুর, ইকুড়ি, হেমায়েতপুর, গজারিয়া হেমায়েতপুর, আমতৈল, মানিকদিয়া, মিনাপাড়া, কুঞ্জনগর, শিমুলতলা, কামারখালী, বামন্দী, অলিনগর, তেরাইল, জোড়পুকুরিয়া, মহেষপুর, চেংগাড়া, পশ্চিম মালসাদহ ও গাংনী বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন তিনি। রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত একটানা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মানুষকে ঘরে থাকতে সচেতন করা হয়। অভিযানের সময় যে সকল দোকানী দোকান খুলে আড্ডার ব্যবস্থা করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়াও মাস্কবিহীন ও বিনা কারণে ঘর থেকে বের হওয়া পথচারীদেরকেও জরিমানা করা হয়। মোট ১৭টি মামলায় ৮ হাজার ৪শ’ টাকা জরিমানা আদায় করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমি খানম বলেন, দুই সপ্তাহ আমরা কঠোরভাবে নির্দেশনা পালন করতে পারলে করোনা পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে। তাই সচেতনতামূলক জরিমানা আদায়ের মাধ্যমে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই দুই সপ্তাহে যারা কর্মহীন হবেন তাদের জন্য সরকারের সহযোগিতা রয়েছে। কাজেই কোন অজুহাতে নির্দেশনা অমান্য করা যাবে না।
এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দীর্ঘ অভিযানের খবর পৌঁছে যায় গাংনী উপজেলার এ প্রান্ত থেকে ওইপ্রান্ত পর্যন্ত। ফলে দোকানপাট বন্ধ করে বাড়িতে ফিরে যান অনেক দোকানী ও পথচারীরা। ভ্রাম্যামাণ আদালতের এ ধরনের অভিযান বিভিন্ন মহল সাধুবাদ জানিয়ে তা চলমান রাখার আশা প্রকাশ করেন।
জানা গেছে, চলমান নির্দেশনার আলোকে চায়ের দোকান পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে পাখিভ্যান, নছিমন, করিমনসহ সকল প্রকার গণ পরিবহন। এতে যারা কর্মহীন হবেন তাদের জন্য রয়েছে সরকারি খাদ্য ও অর্থ সহায়তা। কর্মহীন কোনো মানুষের খাদ্য প্রয়োজন হলে ৩৩৩ নম্বরে কল দিয়ে খাদ্য সহায়তা পাওয়া যাবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ