চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান

সরকারি নির্দেশনা না মানায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে জরিমানা

স্টাফ রিপোর্টার: লকডাউনের প্রথম দিনে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে মাঠে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সরকার ঘোষিত ৭দিন লকডাউনের প্রথমদিনে এ অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় মাস্ক না পরায় ও সরকারি নির্দেশনা না মানায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি কিছু জায়গায় মানুষের মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হয়। সরকার ঘোষিত লকডাউন মেনে সংক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রয়োজন ছাড়া কেউ যাতে ঘর থেকে বের না হোন সেই আহ্বান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারকগণ। অন্যথায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়।
ভালাইপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা ভালাইপুর মোড়ে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে মাস্ক পরিধান না করায় এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা আদায়। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা ভালাইপুর মোড়ে মাস্ক পরিধান না করা এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার অপরাধে ৪টি মামলায় ৪ জনকে এক হাজার ৯শ টাকা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করেন নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান। এদিকে ভালাইপুর মোড়ের বাস কাউন্টারগুলো যাতে বেশি ভাড়া আদায় না করে তার জন্য সতর্ক করার পাশাপাশি জনগণের মাঝে মাস্ক বিতরণ করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতে সহযোগিতায় ছিলেন পেশকার সোবহান আলী, মোবাইল কোর্ট ও অফিস সহায়ক আরমান আলী ও গোকুলখালী ফাঁড়ি পুলিশের একটি দল।
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে। এ সময় সংক্রমণরোধে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সচেতনতা বাড়াতে লোকজনকে সচেতন করার পাশাপাশি জরিমানা আদায় করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্বে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান। ভ্রাম্যমাণ আদালতসূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার বেলা ১২টার দিকে কার্পাসডাঙ্গা বাজারে হুসাইন টেলিকমে সরকারি নির্দেশ অমান্য করার কারণে ১৮৮ ধারায় এক হাজার টাকা, হোটেল রেজাউলকে ১৮৬০ এর ১৮৮ ধারায় ৫শ ও রেস্টুরেন্ট ও মিষ্টিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশন করার জন্য এক হাজার টাকা এবং মাস্ক পরিধান না করার জন্য দুজন পথচারীকে জরিমানা করা হয়েছে। এ সময় উপজেলা প্রশাসের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান সংক্রমণরোধে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সচেতনতা বাড়াতে লোকজনকে সচেতন করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সহযোগিতায় ছিলেন পেশকার জিহন আলী, খায়রুল কবির দিনার, রফিকুল ইসলাম ও কার্পাসডাঙ্গা ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যের একটি টিম।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, সরকারি আইন অমান্য করে লকডাউনের মধ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে হালখাতা করার সময় আমিন জুয়েলার্সের মালিকের নিকট থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালের দিকে মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হয়। সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহামুদুল হাসানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতে শহরের কোর্ট রোডে আমিন জুয়েলার্সের মালিকের নিকট থেকে ৫শ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া সরকারি আইন অমান্য করে লকডাউনের মধ্যে মাস্কবিহীন বাইরে ঘোরাফেরা করার সময় এক পথচারীর নিকট থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মোহাম্মদ অনিক ইসলামের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত শহরের কলেজ মোড় এলাকায় মাস্কবিহীন ঘোরাফেরা করায় এক পথচারীর নিকট থেকে ২শ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
মেহেরপুরে করোনাভাইরাস সচেতনতার লক্ষ্যে পৃথক অভিযানে মুখে মাস্ক না থাকায় এবং লকডাউন না মানায় ১৩ জনের কাছে ৫ হাজার ৭শ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মেহেরপুর জেলার মোট ৬টি স্থানে একই সাথে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের একাধিক সহকারী কমিশনারগণ ও সেখানে পুলিশের একাধিক টিম উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মুখে মাস্ক না থাকায় এবং লকডাউন না মানাই মেহেরপুর শহরের কাথুলী বাসস্ট্যান্ড, হোটেল বাজার, কলেজ মোড় ও কোর্ট মোড় মোট ৬টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১৩ জনের কাছে ৫ হাজার ৭শ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এ সময় মানুষকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সচেতন করেন তারা, এছাড়াও অসহায় মানুষদের মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হয়।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মোহাম্মদ অনিক ইসলামের নেতৃত্বে শহরের কলেজ মোড়ে, সুজন দাশগুপ্ত এর নেতৃত্বে কাতুলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায়, মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে কোর্ট মোড়, মেহেরপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়ানুর রহমানের নেতৃত্বে হোটেল বাজার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন তারা। এ সময় অন্যদের মধ্যে সেখানে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাফিজ আল আসাদ, মেহেরপুর সদর থানার ওসি শাহদারা খান, গোয়েন্দা পুলিশের ওসি জুলফিকার আলী প্রমুখ।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, লকডাউনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় এসবি সুপার ডিলাক্সের চালককে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে গাংনী সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুর-এ আলম সিদ্দিকীর ভ্রাম্যমাণ আদালত এ জরিমানা আদায় করেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, এসবি সুপার ডিলাক্স পরিবহনের -(ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৩৩৮০) ওই বাসটি মেহেরপুর থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। গাংনী বাসস্ট্যান্ডে বাসটি আটক করা হয়। এ সময় দোষ স্বীকার নির্দেশনা ভঙ্গের বিষয়টি আর করবে না বলে মুচলেকা প্রদান করেন বাসের চালক। ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মুজিবনগরে লকডাউনের প্রথম দিনে জীবনযাত্রা আগের দিনের মতো কিছুটা স্বাভাবিক ছিলো। দোকানপাট বন্ধ থাকলেও মানুষের চলাচলের ওপর কোনো প্রভাব পড়েনি। অটোরিকশা, পাখিভ্যান, চলছে মাটিবাহী ট্রাক্টরতে চলছেই এবং চায়ের দোকানগুলোতে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। বেলা ১১টার দিকে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুজন সরকার উপজেলা বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ১১ জনকে ৬ হাজার টাকা জরিমানা করেন। একই সাথে সাধারণ মানুষকে সচেতন করাসহ মাস্ক বিতরণ করেন তিনি। এ সময় জনসাধারণ ও ব্যবসায়ীদের সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার জন্য উপদেশ প্রদান করেন। এ সময় মুজিবনগর থানা অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) শরিফুল ইসলাম ও এসআই বাবলু সেখানে সহযোগিতা করেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More