চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রায় সবক’টি পাড়াতেই ছড়িয়েছে ছোঁয়াচে : ঘরে ঘরে দেখা দিচ্ছে উপসর্গ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনা ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। ঘরে ঘরে স্বর্দি কাশি জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনই করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেয়ার সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে যতো বেশি, কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যাও ততো বেশি শনাক্ত হচ্ছে। পরিস্থিতি বেশামাল হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। রোববার নতুন শনাক্ত হওয়া ৩১ জনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা শহরের একজন চিকিৎসক রয়েছেন। জুয়েলার্স ব্যবসায়ী সমিতির জেলা সভাপতিরও কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। এছাড়া, চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য কর্মকর্তারও গতকাল করোনা শনাক্ত হয়েছে। তিনি অবশ্য যশোরে নমুনা দিয়েছিলেন। গতকাল অফিসে দায়িত্ব পালনের সময় করোনা পজিটিভ রিপোর্ট জানতে পেরে প্রাইভেটকারযোগে যশোরের বাড়িতে চলে যান তিনি।
চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগে হাতে রোববার ৭১ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। এর মধ্যে পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ৩১ জনের। যার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদরেই ২৩ জন। জেলা শহরে ১৮ জন। যা চমকে ওঠার মতোই। অবাক হলেও সত্য যে, জেলা শহরের প্রায় প্রতিটি মহল্লায় করোনা ভাইরাস রোগী শনাক্ত হচ্ছে। বাড়ছে পারিবারিকভাবে আক্রান্তের সংখ্যা। করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক গুলশানপাড়ার ফেরদৌসওয়ারা সুন্নার পরিবারের ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বড়বাজার পাড়ায় আরও ৪ জনের করোনা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। দৌলাতদিয়াড়ে ৩ জন, আলুকদিয়া ১জন, মুসলিমপাড়ায় ১জন, মুক্তিপাড়ায় ১জন, বাগানপাড়ার ১জন, পোস্ট অফিসপাড়ার ১জন, এতিমখানাপাড়ার ১জন, কলেজপাড়ার ২জন, শেখপাড়ার একজন, (তিনি জুয়েলার্স মালিক সমিতির নেতা) ফার্মপাড়ার ১জন, ইমার্জেন্সি সড়কের একজন (তিনি একজন চিকিৎসক), সরোজগঞ্জর একজন (তিনি সদর হাসপাতালের আইসোলেশনেই দায়িত্বপালন করেন), ফেরিঘাট সড়কের ১জন। আলমডাঙ্গা উপজেলায় তিন জনের মধ্যে বাবুপাড়ায় ২জন ও বেলগাছির ১জন রয়েছে। দামুড়হুদা উপজেলার ৫ জনের সকলেই দর্শনার। দর্শনা ইসলাম বাজারের ৩ জন, কেরুজ আবাসিক এলাকার ১জন ও দক্ষিণচাঁপুরের ১জন।
এদিকে, গতকাল রাতে চুয়াডাঙ্গা শহরের এক চিকিৎসকের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বিকেলেও তিনি শহরে মোটরবাইক নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন। রাতে রিপোর্ট প্রকাশের অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, একজন চিকিৎসক হয়েও নমুনা দেয়ার পর রিপোর্ট না জেনেই তিনি কিভাবে বাইরে ঘোরাঘুরি করেন! একজন চিকিৎসকের কাছে নিশ্চয় এটা আশা করা যায় না। অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য কর্মকর্তার গতকাল করোনা শনাক্ত হয়েছে। তিনি গত বৃহস্পতিবার নিজ এলাকা যশোরে নমুনা দিয়েছিলেন। গতকাল রোববার সকালে কপোতাক্ষ ট্রেনযোগে চুয়াডাঙ্গায় এসে নিজ অফিসে দায়িত্ব পালনের সময় জানতে পারেন তার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ। পরে তিনি প্রাইভেটকার যোগে যশোরের বাড়িতে চলে যান। অনেকেই বলছেন, দায়িত্বশীল মানুষ হিসাবে তিনি করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেয়ার পর রিপোর্ট না জেনেই অফিসে আসা ঠিক হয়নি।
চুয়াডাঙ্গায় নতুন ৩১ জনের করোনা শনাক্ত দিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪শ। রোববার পর্যন্ত সুস্থ হওয়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২৮ জন। এদিন চুয়াডাঙ্গার আরও ৮৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা জন্য কুষ্টিয়া ল্যাবে প্রেরণ করা হয়েছে। জেলায় আক্রান্তদের মধ্যে রোববার রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি ছিলেন ২২ জন। বাড়িতে চিকিৎসাধীন ১৪৪ জন। ২জনকে ঢাকায় নেয়া হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেব মতে, এ পর্যন্ত ৪০০ করোনা পজিটিভ রোগীর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৬৮ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৯৪ জন, দামুড়হুদা উপজেলায় ৯৮ জন এবং জীবননগর উপজেলায় ৪০ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ২২৮ জন। মারা গেছেন ৬জন। বর্তমান চিকিৎসাধীন ১৬৬ জন। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৮৯ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩৫ জন, দামুড়হুদা উপজেলায় ২৯ জন এবং জীবননগর উপজেলায় ১৩ জন। আক্রান্ত ১৪৪ জন বাড়ীতে আইসোলশনে এবং ২২ জন হাসপাতালে আইসোলেশনে রয়েছে। ঢাকায় রেফার্ড হয়েছেন ২ জন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবির জানান, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। বিভিন্ন এলাকার মানুষের জেলাশহরে অবাধ যাতায়াতের কারণে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। করোনার প্রকোপ কমাতে হলে সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমানো সম্ভব নয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More