স্টাফ রিপোর্টার: দেশের মুদ্রাবাজারে চলছে ডলার সঙ্কট। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় এ অবস্থা। সঙ্কট মোকাবিলায় এরই মধ্যে ব্যয় কমিয়েছে সরকার। অন্যদিকে এ সুযোগে ইচ্ছামতো দামে খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে আবার ঘটেছে ডলারপাচারের চেষ্টা। গত বুধবার চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের সময় ৮০ হাজার ডলার উদ্ধার করে বিজিবি। এ ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডলারপাচার ঠেকাতে দেশের সব সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া নজরদারি বাড়িয়েছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশও।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর ডিবির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, কেউ যদি অবৈধভাবে ডলার মজুত করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া কেউ অবৈধভাবে জাল ডলার তৈরি করে, সে তথ্য পেলেও চালানো হবে অভিযান। এ বিষয়ে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। এরই মধ্যে ডলার নিয়ে খোলাবাজারে কারসাজি করায় দেশে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গত ২ আগস্ট এমন পাঁচটি মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া ৪২ মানি এক্সচেঞ্জকে শোকজ করা হয়েছে। অভিযানে আরও ৯ প্রতিষ্ঠানকে করা হয়েছে সিলগালা। এসব প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স না নিয়ে এতদিন ডলারের ব্যবসা করে আসছিলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডলারে অনিয়ম পেলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। এরই মধ্যে আমাদের অভিযানে পাঁচটি মানি চেঞ্জার হাউজকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাদের কাজে নানা অনিয়ম পাওয়া গেছে। যাদের লাইসেন্স নেই তাদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে।
সীমান্ত দিয়ে ডলারপাচারের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল শাহ মো. ইশতিয়াক বলেন, বিজিবির একটি বিশেষ টহল দল ফুলবাড়ি সীমান্ত পিলার ৮৫ থেকে নিয়ে ৩০০ গজ বাংলাদেশের ভেতরে অভিযান চালায়। এসময় বিজিবির সদস্যরা দেখতে পান এক ব্যক্তি একটি ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছে। বিজিবি তাকে চ্যালেঞ্জ করলে তিনি দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ধরা পড়ার ভয়ে লোকটি ব্যাগ ছুঁড়ে ফেলে পালিয়ে যান। তিনি বলেন, এসময় বিজিবির টহলদল দুটি ভাগে বিভক্ত হয়। একটি দল চোরাকারবারিকে ধাওয়া করে, অন্য দল ব্যাগ উদ্ধার করে। এ সময় ব্যাগে কাগজে মোড়ানো আটটি প্যাকেট পাওয়া যায়। যাতে মেলে মোট ৮০ হাজার ইউএস ডলার।
বিজিবি সদর দপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, ডলারপাচার ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে বিজিবি। একই সঙ্গে সীমান্ত অপরাধ দমনে বাড়ানো হচ্ছে নজরদারি। ডলার যেই পাচার করতে যাক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম মাস জুলাইয়ে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এ মাসে ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার (২.০৯ বিলিয়ন) ডলার এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় যা (এক ডলার সমান ৯৪ দশমিক ৭০ টাকা ধরে) ১৯ হাজার ৭৯২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এই অঙ্ক গত ১৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত অর্থবছরের (২০২১-২২) একই মাসে ১৮৭ কোটি ডলার এসেছিলো।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের জুলাইয়ে ১ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা তার আগের মাস জুনের চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। ওই মাসে ১ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। এছাড়া ২০২০ সালের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছিলো ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার। সামগ্রিকভাবে গত অর্থবছর নেতিবাচক অবস্থায় চলে আসে রেমিট্যান্স। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে কিছুটা আশার সঞ্চালন হয়। এসময় রেমিট্যান্স আসে ২ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থবছরের প্রথম মাসেই রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। আগামীতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে।