দুই লাখ টাকার কবুতর শোভা পাচ্ছে আরিফের খামারে
শখের বসে বিদেশি জাতের কবুতর পালন করে হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা
স্টাফ রিপোর্টার: পশু-পাখি ভক্ত শামিম আহমেদ আরিফ বাণিজ্যিকভাবে কবুতরের খামার করে সফলতা পেয়েছেন। তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। খামারে বিদেশি প্রজাতির ২০ রকমের কবুতর পালন করেন। তার কবুতর খামার দেখে অনেক নতুন উদ্যোক্তা খামার করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। কবুতর পালনে খরচ কম হওয়ায় লাভজনক ব্যবসা। ২ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা দামের কবুতর রয়েছে খামারে। কবুতর বিক্রি করে প্রতি বছর আয় হয় প্রায় ৩-৪ লাখ টাকা। খামারে ৫-৭ লাখ টাকার কবুতর রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সাতগাড়ি পাড়ার বাসিন্দা শামিম আহমেদ আরিফ। ছোটবেলা থেকেই তার পশু-পাখি পালনের প্রতি নেশা ছিলো। পড়াশুনা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির কারণে পশু-পাখি পালন বেশ কয়েকবার বন্ধ হয়ে যায়। তবুও পশু-পাখি পালনের প্রতি আগ্রহ থেকেই যায়। ২০১৮ সালের প্রথম দিকে তার এক সহকর্মী ভাড়া বাড়িতে কবুতর পালন করছে দেখে তিনি খামার করতে আবারও উদ্বুদ্ধ হন। একই বছরে চুয়াডাঙ্গা ফেন্সি পিজন নামের খামার শুরু করেন আরিফ নিজ বাড়ির ছাদে। ১২ হাজার টাকা দিয়ে বিদেশি ৩ জোড়া কবুতর কিনে খামার শুরু করেন। এরপর প্রতি মাসেই খামারে কবুতর বাড়তে থাকে। বর্তমানে খামারের তিনটি শেডে ১শ জোড়ার বেশি বিদেশি জাতের কবুতর রয়েছে। স্ত্রী, সন্তান ও নিজে কবুতর পরিচর্যা করেন। কবুতরের রোগ বালাই ও খরচ কম হওয়ায় লাভজনক ব্যবসা। লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় তার দেখে অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকসহ অন্যরা কবুতর খামার করে উদ্যোক্তা হচ্ছেন। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে অল্প পরিশ্রমে ও স্বল্প পুজি বিনিয়োগ করে।
চুয়াডাঙ্গা ফেন্সি পিজন খামারে বিদেশি প্রজাতির ২০ রকমের কবুতর রয়েছে। কবুতরের জাত গুলো ইস্পেনসিল লাহোড়ী, কালো ইংলিশ নান, কালো ম্যাগপাই পোটার, পোমারিয়ান পোটার, এন্ড্রোলুসিয়ান হাউজ, এলমন্ড মুক্ষি, এন্ড্রোলুসিয়ান শো কিং, সাদা জ্যাকোবিন, সবজি রেসার, কালো লক্ষা, সাদা লাক্ষাসহ অন্য প্রজাতির। ইস্পেনসিল লাহোড়ী জাতের এক জোড়া কবুতরের সর্বোচ্চ দাম ২ লাখ টাকা। আর সবজি রেসারের জাতের এক জোড়া কবুতর সর্বনিম্ন দাম ২ হাজার টাকা। প্রতিদিন কবুতর খামার দেখতে ভীড় করেন সাধারণ মানুষ ও নতুন উদ্যোক্তারা। প্রতি মাসে কবুতর পালনে ৬-৭ হাজার টাকা খরচ বাদে লাভ হয় প্রায় ৩৫-৪০ হাজার টাকা। ক্রেতারা অনলাইনে অর্ডার দিয়ে ও খামার থেকে সরাসরি এসে কবুতরের বাচ্চা কিনে নিয়ে যান চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে। কবুতরের খাবার হিসাবে দেয়া হয় গম, ভূট্টা, খেসারি, কলাই, সোয়াবিন, কুসুম, বাজরা ও সরিষা। প্রতিদিন ২-৩ বার খাবার ও পানি দিতে হয়। আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে কবুতরগুলোকে ওষুধ খাওয়ানো হয়। ১৫-২০ দিনে এক জোড়া কবুতর দুটি ডিম দেয়। ডিমগুলো কবুতরের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে তা দেওয়ার জন্য অন্য কবুতরের কাছে বসানো হয় বাচ্চা ফোঁটানোর জন্য। ডিম থেকে বাচ্চা ফোঁটে ১৭-১৮ দিনে। দেড় মাস বয়সের বাচ্চা বাজারে বিক্রির উপযুক্ত হয়। কবুতরের জাত ভেদে এক জোড়া বাচ্চা ৫- ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
চুয়াডাঙ্গা সাতগাড়িপাড়ার বাসিন্দা সেফালি খাতুন বলেন, আরিফ আমার ছোটবেলার বন্ধু। ছোট থেকে তার পশু-পাখি পোষার প্রতি আগ্রহ ছিলো। ৫ বছরে বড় খামার গড়ে তুলেছে। খামার করার আগে সে আমার কাছ থেকে পরামর্শ নেয়। ঝুঁকি নিয়ে কবুতর খামার করে সফলতা পেয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার শান্তিপাড়ার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, বিজিবিতে চাকরিতে যাওয়ার আগে শখের কবুতরগুলো বিক্রি করে দিই। চাকরি শেষে ২০২১ সালে আবারও আরিফের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকায় কয়েক জোড়া কবুতর কিনে পালন শুরু করি। আমার খামারে ২৫ জোড়ার মতো কবুতর আছে। অবসর সময় কাটছে, অন্যদিকে বাড়তি উপার্জন করতে পারছি।
মোমিন নামের এক তরুণ উদ্যোক্তা বলেন, আরিফ ভাইয়ের কবুতর দেখতে খামারে ছুটে আসি। কবুতর পালন করে তিনি সফলতা পেয়েছেন। কবুতর পালন করে শুধু শখই পূরণ হয় না বাড়তি আয় হয়। বিদেশি জাতের কবুতর আমিও পালন করি।
ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর নেপা গ্রাম থেকে কবুতর খামার দেখতে আসেন রবিউল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি বিদেশি জাতের ৪ জোড়া কবুতরের বাচ্চা ক্রয় করেন প্রায় ১৭ হাজার টাকা দিয়ে। নতুন খামার করার জন্য এ উদ্যোগ।
বিদেশি কবুতর পালনকারী শামিম আহমেদ আরিফ বলেন, ছোটবেলা থেকে পশু-পাখি পালনের প্রতি আগ্রহ ছিলো। ৫ বছর আগে ১২ হাজার টাকা দিয়ে ৩ জোড়া কবুতরের বাচ্চা কিনে পালন শুরু করি। খামারে এখন ১শ জোড়ার বেশি বিদেশি জাতের কবুতর রয়েছে। ৫-৭ লাখ টাকার কবুতর রয়েছে। খরচ বাদে প্রতি মাসে লাভ হয় ৩৫-৪০ হাজার টাকা। ইচ্ছা আছে খামারটি বড় করার। কয়েকজন লোকের কাজের ব্যবস্থা হবে। কবুতর পালন লাভজনক ব্যবসা। রোগ-বালাই কম।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মোস্তফা জানান, আরিফ চাকরির পাশাপশি অবসর সময়ে কবুতর পালন করেন। তাকে দেখে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। খামার পরিদর্শনসহ সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হয়। এ খামারে দুই লাখ টাকা দামের কবুতর আছে।