পেশাগত কারণে খুন হননি সাংবাদিক হাসিবুর 

কুষ্টিয়ায় হত্যা মামলার অগ্রগতি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: পেশাগত কারণে সাংবাদিক হাসিবুর রহমান খুন হননি বলে দাবি করেছেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম। গতকাল শুক্রবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে এ দাবি করেন তিনি। বিকেল চারটায় নিজ কার্যালয়ে এ হত্যা মামলার অগ্রগতি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন পুলিশ সুপার। এ সময় তদন্তের স্বার্থে তিনি এ হত্যাকা-ের কারণ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে হাসিবুর রহমান হত্যায় জড়িত একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে এসপি খাইরুল আলম বলেন, ওই আসামির ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে বিকেল পাঁচটার দিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতার ইমরান শেখ ওরফে ইমন (৩২) কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়া এলাকার স্যার ইকবাল রোডের বাসিন্দা শামসুল আলমের ছেলে। তার বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ায় অস্ত্র, মাদক, মারামারিসহ অন্তত চারটি মামলা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে এসপি জানান, হাসিবুর হত্যা মামলাটি স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় তিনি সরাসরি তদারক করছেন। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রাথমিক তথ্য পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে শহরের রাজারহাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইমরান শেখকে আটক করা হয়। এরপর তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ, সিডিআর (কল ডিটেইলস রেকর্ড) পর্যালোচনা, ডিজিটাল এভিডেন্সের মাধ্যমে ইমরান শেখের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে ইমরান অনেক তথ্য দিয়েছেন এবং সেসব তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে বলে জানিয়ে এসপি বলেন, ‘এই মুহূর্তে হত্যাকা-ের মোটিভ বিষয়ে বলতে পারছি না। তবে হাসিবুরকে পেশাগত কারণে হত্যা করা হয়নি বা তাকে কোনো এজেন্সিও হত্যা করেনি। কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে, তা জানার জন্য ইমরান শেখকে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এ বিষয়ে আরও পরিষ্কার হওয়া যাবে।’ এ হত্যাকা-ে কতজন জড়িত বা এর পেছনে বড় কোনো মহল আছে কি না, প্রশ্ন করা হলে কোনো মন্তব্য করেননি এসপি খাইরুল আলম। তবে পুলিশের দুজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাসিবুর সাংবাদিক হলেও অন্য পেশায় সময় দিতেন বেশি। তিনি অনেকগুলো সিম ব্যবহার করতেন। তার ব্যবহৃত বিভিন্ন সিমে একদিনে অস্বাভাবিক হারে টাকা লেনদেন হতো। সেগুলো অনলাইন জুয়া নাকি ঠিকাদারি কাজে ব্যবহৃত হতো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, হাসিবুর রহমান হত্যায় সরাসরি বেশ কয়েকজন জড়িত থাকার প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। মাথায় শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করে তাকে হত্যার পর লাশ গড়াই নদে ফেলে দেয়া হয়। এ হত্যাকা-ে যারা অংশ নিয়েছেন, তারা নজরদারিতে আছেন এবং যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হবেন।

প্রসঙ্গত, ৩ জুলাই রাত নয়টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের সিঙ্গার মোড়ে পত্রিকা অফিসে ছিলেন হাসিবুর। তখন মুঠোফোনে একটি কল পেয়ে অফিস থেকে বের হয়ে যান। এর পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। তার মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তার পরিবার।

এর চারদিন পর ৭ জুলাই দুপুরে কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া এলাকায় গড়াই নদের নির্মাণাধীন গোলাম কিবরিয়া সেতুর নিচ থেকে হাসিবুরের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ৮ জুলাই রাতে হাসিবুর রহমানের চাচা মিজানুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে কুমারখালী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। নিহত হাসিবুর কুষ্টিয়া জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় দৈনিক কুষ্টিয়ার খবর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি ঠিকাদারি করতেন। হাসিবুর কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এ ব্লক এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More