প্রাইভেটকারের ধাক্কায় রিকশা গুঁড়িয়ে গাংনী-আলমডাঙ্গায় আত্মগোপন : বেপরোয়া চালক চুয়াডাঙ্গা থেকে আটক

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর বেইলি রোডে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে রিকশা গুড়িয়ে দেয়া প্রাইভেটকার চালককে আটক করেছে পুলিশ। রোববার ভোরের দিকে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া নতুন বাজার এলাকা থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক তাসকিন আহমেদ শাফী ও তার মা সুমাইয়া শারমীনকে আটক করা হয়। মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা পুলিশের সহযোগিতায় তাদের আটকের পর ঢাকায় নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। পুলিশ জানিয়েছে, রিকশায় ধাক্কা দেয়া প্রাইভেটকারটি জব্দ করা হয়েছে। অভিযুক্ত ওই কিশোর বা তার পরিবার এই গাড়িটির মালিক নয়; গাড়িটির মালিক ওয়ারী থানার এক বাসিন্দা বলেও জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর শ্যামলীতে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মগবাজার এলাকার বাসিন্দা শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা ফখরুল হাসান তার পাঁচ মাসের শিশুপুত্রকে নিয়ে বের হন। তিনি একটি রিকশা নিয়ে মগবাজার থেকে বেইলি রোড হয়ে রমনা পার্কের দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে বেইলি রোডে একটি বেপরোয়া গতির প্রাইভেটকার তাদের বহনকারী রিকশাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে রিকশাচালক আনোয়ার ইসলামসহ গুরুতর আহত হন ব্যাংক কর্মকর্তা ও তার পাঁচ মাসের শিশুপুত্র ইব্রাহিম মোহাম্মদ বিন হাসান। দুর্ঘটনার পর জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল পেয়ে তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।
ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, বেপরোয়া গতিতে ধাক্কা দেয়ায় ফখরুল হাসানের ডান হাত ভেঙে যায়। আর তার পাঁচ মাস বয়সী সন্তানের ডান পা ভেঙে গেছে। রিকশাচালকও পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। এছাড়া ফখরুল ও তার ছেলের মাথাসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তারা সবাই এখন চিকিৎসাধীন।
তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার আরও বলেন, ঘটনার পর প্রাইভেটকারচালক ওই কিশোর গাড়ি নিয়ে বাসায় ফিরে যান। পরের দিন শনিবার (২০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ওই কিশোর মাকে নিয়ে বাসে করে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় তার দাদার বাড়ি চলে যায়। সেখান থেকে আবার চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গায় তার খালার বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপনে থাকে। পরে দুই উপজেলার থানা পুলিশের সহায়তায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। তারা এখন পথে আছে, তাদের ঢাকায় আনা হচ্ছে।
বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ঘটনার পর হাতিরঝিল থানার মীরবাগ এলাকায় ওই কিশোরের বাসা থেকে গাড়িটি জব্দ করা হয়। গাড়ির কাগজপত্র চেক করে দেখা গেছে, গাড়ির মালিক ওয়ারী এলাকার এক বাসিন্দা।
ওই কিশোরের গাড়ি চালানোর লাইসেন্স ছিলো কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার জন্ম ২০০৬ সালে। সে হিসেবে তার বয়স ১৫ বছর। এই বয়সে তার লাইসেন্স থাকার কথা না। সে রাজধানীর একটি স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলো। সেখান থেকে ভর্তি বাতিল করে অন্যত্র ভর্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। তার বাবা একজন আইনজীবী বলে আমরা জানতে পেরেছি।
গাড়ি চালানোর সময় সে মাদকাসক্ত ছিল কি না জানতে চাইলে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, তাকে এখনও আমরা হাতে বুঝে পাইনি। আমাদের একটি টিম তাদের নিয়ে আসছে। বুঝে পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যাবে এবং তার ডোপ টেস্ট করা হবে। বিষয়টি রমনা থানা তদন্ত করে আপনাদের জানাতে পারবে। কারণ এ ঘটনায় রমনা থানায় একটি মামলা হয়েছে।
গাড়ির ধাক্কায় আহত ব্যাংক কর্মকর্তা ফখরুল হাসান বলেন, বাসা থেকে আমার ছেলেকে নিয়ে রমনা পার্কে যাওয়ার জন্য রিকশা নিয়েছিলাম। বেইলি রোডে যাওয়ার পরে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে আমিসহ আমার পাঁচ মাসের শিশু সন্তান পড়ে যাই। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। রাত ১০টার দিকে চোখ খুলে দেখি আমি হাসপাতালে। আমার ডান হাত ভেঙে গেছে। মাথায় আঘাত লেগেছে। আমি অনেক কিছু ভুলে গেছি। আমার পাঁচ মাস বয়সী ছেলের ডান পা ভেঙে গেছে। তার পায়ে আজ (রোববার) বিকেলে অপারেশন করা হয়েছে। আমাদের বহনকারী রিকশারচালকও পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি। আমার ছেলেও মাথায় ব্যথা পেয়েছে। ডাক্তার সিটি স্ক্যান করতে বলেছে। এখনও করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমার স্ত্রী রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। তিনি পেশাগত কাজে ব্যস্ত থাকায় আমি আমার শিশুপুত্রকে নিয়ে ছুটির দিনে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। এ ঘটনায় রমনা থানায় একটি মামলা করেছি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More