স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় নতুন এমপিওভুক্তির আদেশ পাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন পাওয়ার জন্য অনিশ্চিত প্রহর গুনছেন। এমপিওভুক্তির আট মাস পার হতে চললেও এখনো জানেন না কবে তারা বেতন পাবেন। এমনকি কবে নাগাদ বেতন-ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন করবেন তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না তারা। আবেদনের বিষয়টি নির্ভর করছে মাউশি মনোনীত যাছাই বাছাই কমিটি কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র পাওয়ার ওপর। দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও যাছাই বাছাই কমিটি কর্তৃক কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রত্যয়নপত্র পায়নি। কমিটির কাছে বারবার ধরনা দিয়েও কোনো ফল পাচ্ছেন না শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাই তাদের আগামী ঈদ আনন্দ ম্লান হতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা ভুক্তভোগী শিক্ষক-কর্মচারীদের। ২০-২২ বছর ধরে বিনা বেতনে চাকরি করে আসা এসব শিক্ষক-কর্মচারী এক রকম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যাছাই-বাছাই কমিটির গড়িমসির কারণেই বেতন-ভাতার জন্য আবেদন করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ শিক্ষক-কর্মচারীদের। তবে চুয়াডাঙ্গার দুটি কলেজ ইতোমধ্যেই প্রত্যায়নপত্র পেয়েছে বলে জানা গেছে।
নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য ২০২১ সালে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হয়। যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া শেষে দীর্ঘ এক বছর পর গত বছরের ৬ জুলাই ২ হাজার ৭১৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান) এমপিওভুক্ত হয়। বাদ পড়াদের আপিল আবেদনের ভিত্তিতে এ বছরের ১২ জানুয়ারি আরও ১৯৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে সরকার। দুই ধাপে চুয়াডাঙ্গা জেলার ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিও কোডও দেয়া হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির উপযুক্ততা যাচাই বাছাইয়ের জন্য জেলা উপজেলা ও মহানগর পর্যায়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট পৃথক পৃথক যাচাই কমিটি গঠন করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। গত ২২ ডিসেম্বর মাউশির সহকারী পরিচালক (মা-২) এসএম জিয়াউল হায়দার হেনরী স্বাক্ষরিত কমিটি গঠন সংক্রান্ত একটি পত্র দেয়া হয়। ওই কমিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রেকর্ডপত্র সরেজমিনে যাচাই বাছাই করছে। গত জানুয়ারি মাসে চুয়াডাঙ্গা সদর, দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যাচাই বাছাই সম্পন্ন হয়। কিন্তু আজ অবধি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে প্রত্যয়নপত্র দেয়নি যাচাই বাছাই কমিটি। আলমডাঙ্গার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের অভিযোগ এ উপজেলার যাচাই বাছাই প্রক্রিয়াই এখনও সম্পন্ন হয়নি। যাচাই বাছাই কমিটির গড়িমসির কারণে আমরা বেতন-ভাতার জন্য আবেদন করতে পারছি না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রতিষ্ঠান প্রধান বলেন, ‘যাচাই বাছাই কমিটি গড়িমসি না করলে আমরা ফেব্রুয়ারিতে আবেদন করতে পারতাম। সেক্ষেত্রে হয়তো ঈদের আগেই বেতন-বোনাস পেতাম। এখন দেখছি আমাদের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে যাবে। তাছাড়া দীর্ঘ ২০-২২ বছর ধরে বিনা বেতনে চাকরি করে আমরা হাঁপিয়ে উঠেছি। এ অবস্থায় আমরা চুয়াডাঙ্গা জেলা কয়েকশ’ শিক্ষক-কর্মচারী মানবেতর জীবন যাপন করছি। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিন সদস্য বিশিষ্ট যাচাই কমিটির অন্যতম সদস্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ কুমার সাহা বলেন, ‘নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষকদের বেতন-ভাতার জন্য ইংরেজি জোড় মাসের ১ থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করতে হয়। যেহেতু ফেব্রুয়ারি মাস পার হয়ে গেছে তাই আবার এপ্রিল ছাড়া আবেদন করা যাবে না। তাই আমরা প্রত্যয়নপত্র দিতে দেরি করছি। এ ছাড়া কোনো কারণ নেই। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মচারীরা যাতে বেতন-ভাতার জন্য দ্রুত আবেদন করতে পারেন এ জন্য প্রত্যয়নপত্র দিয়ে দেয়া উচিত। তারা কেন দিচ্ছেন না, তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে তারা যাতে জরুরি ভিত্তিতে নতুন এমপিও পাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্রগুলো দিয়ে দেন সে ব্যাপারে আমি বলে দেব।’