ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: চারিদিকে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে মহেশপুরের মনিপুরি ইলিশ চাষের খবর। মাছগুলো কেবল বড় হচ্ছে। কিছুদিন পরেই বাজারজাত করা হবে। মানুষ মুখিয়ে আছে এই মাছ ভক্ষন করতে। বাজারে প্রায় সময়ই ইলিশ মাছের দাম চড়া, ইচ্ছা থাকলেও সবার কেনার ক্ষমতা নেই। আবার বছরের অধিকাংশ সময় ঠিকমতো ইলিশ পাওয়াও যায় না। এই অবস্থার অবসান ঘটাতে ঝিনাইদহের মহেশপুরে শুরু হয়েছে মনিপুরি ইলিশের চাষ। মাছটি দেখতে মাথার অংশ ইলিশের আর পেছনের অংশ পুটি মাছের মতো, কিন্তু স্বাদ ও গন্ধে পুরোটাই ইলিশ। অনেকে মাছটিকে পেংবা বলেও চেনেন। মহেশপুরের মৎস্যচাষিরা এই প্রথম মনিপুরি ইলিশের চাষ করেছেন। উপজেলার বাশবাড়িয়া ও পান্তাপাড়া ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে প্রায় অর্ধশত পুকুরে ১২ লাখ পোনা ছাড়া হয়েছে। ২ মাস আগে পোনা ছাড়া হয়েছে। ৭ থেকে ৮ মাস বয়স হলেই বাজারে তোলা যাবে। মিঠাপানিতে উৎপাদিত এই মাছ বাজারে পর্যাপ্ত আমদানি হলে ইলিশের চাহিদা অনেকটা পুরণের পাশাপাশি চাষিরাও লাভবান হবেন। মহেশপুরের তুলসীতলা গ্রামের মৎস্যচাষি আব্দুল আলিম জানান, উপজেলার পান্তাপাড়া ও বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পান্তাপাড়া, তুলসীতলা ও বাগানমাঠ গ্রামে অর্ধশত পুকুরে এই মনিপুরি মাছের চাষ হয়েছে। অলিমুজ্জামান প্রথম মাছটি এই এলাকায় নিয়ে এলেও বর্তমানে আয়াত আলী, আত্তাব আলী, সজিব হোসেন, ওসমান গণী, জায়েদ আলী, আব্দুর রহিম, নয়ন মিয়া, সাহাবুদ্দিন আহম্মদ, ইদ্রিস আলী, মনিরুল ইসলাম, মকছেদ আলী, জুলমত আলী, আলিউজ্জামানসহ বেশ কয়েকজন মৎস্যচাষি এই মাছের চাষ করেছেন। প্রথম বছরেই এই পুকুরগুলোতে ১২ লাখ পোনা ছাড়া হয়েছে। আব্দুল আলিম আরো জানান, তিনি ৪ বিঘা জলাকারের একটি পুকুরে ৬০ হাজার পোনা ছেড়েছেন। প্রতিটি বাচ্চা মাছ ১ টাকা ৫৫ পয়সা করে কিনতে হয়েছে। পুকুরে পোনা ছাড়ার সময় কেজিতে ৫ হাজার বাচ্চা ছিলো, যা গত দেড় মাসে অনেকটা বড় হয়েছে। বর্তমানে ৩৫ টি মাছে এক কেজি ওজন হচ্ছে। তিনি ময়মনসিংহ থেকে এই মাছের পোনা আমদানি করেন বলে জানান। মাছটি ভারতের মনিপুরি রাজ্যে চাষ হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। সেখানে ৮ শত থেকে ৯ শত টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ময়মনসিংহের একটি হ্যাচারী মালিক ২০১৯ সালে মা মাছ সংগ্রহ করেন। এরপর সেই মাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করে বাচ্চা তৈরী করেছেন। তিনিই এই মাছের পোনা বিক্রি করছেন। ময়মনসিংহ জেলার বন্ধন হ্যাচারির মালিক কামাল হোসেন জানান, তারা এ বছর পেংবা মাছের পোনা ছেড়েছেন। প্রায় ১৫ লাখ পোনা বিক্রি করেছেন। যার বেশির ভাগই ঝিনাইদহে দেয়া হয়েছে। মহেশপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানান, মাছটি চাষিরা সংগ্রহ করলেও তারা সার্বক্ষণিক দেখভাল করছেন। কখন কি পরিচর্যা করতে হবে তা দেখিয়ে থাকেন। তিনি আরো বলেন, মাছটি পেংবা বলেও অনেক স্থানে পরিচিত। তবে ভারতের মনিপুরি রাজ্যে এর বেশি চাষ হওয়ায় এটাকে মনিপুরি ইলিশ হিসেবে পরিচিত।
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ