রয়েল পরিবহনের ধাক্কায় শ্যালক-দুলাভাই নিহত

খোয়াভাঙা মেশিন মেরামত করতে যশোর যাওয়ার পথে বিপত্তি

মেহেরপুর অফিস/বারাদী প্রতিনিধি: মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের আমঝুপিতে রয়েল এক্সপ্রেসের ধাক্কায় দুই নির্মাণশ্রমিক নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি মাঠের গ্রামীণ টাওয়ারের নিকট এ দুর্ঘটনা ঘটে। রয়েল এক্সপ্রেস ও শ্যালোইঞ্জিনচালিত ইটভাঙ্গা (খোয়া ভাঙানো) মেশিনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন, মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের বিশ^াসপাড়ার বদরুদ্দিনের ছেলে ওয়াসিম (২৮) ও একইপাড়ায় বসবাসকারী চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার চিৎলা গ্রামের মাহমুদ আলীর ছেলে জাফর আলী (৩৩)। তারা সম্পর্কে শ্যালক-দুলাভাই। রয়েল এক্সপ্রেস পরিবহনের মালিকপক্ষ ও নিহতদের পরিবারের মধ্যে সমঝোতা হওয়ায় প্রশাসনের অনুমতিতে লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের বিশ^াসপাড়ার ওয়াসিম ও তার চাচাতো ভগ্নিপতি জাফর আলী একই গ্রামের আব্দুল জব্বারের শ্যালোইঞ্জিন চালিত ইটভাঙ্গা মেশিন নিয়ে খোয়াভাঙা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। মেশিনটি মেরামতের জন্য তারা বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে যশোরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তারা আমঝুপি হাট ও দিনদত্ত ব্রিজের মাঝামাঝি এলাকায় গ্রামীণ টাওয়ারের নিকট পৌঁছুলে বরিশাল থেকে মেহেরপুরগামী রয়েল পরিবহনের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৩৮৬৩) তাদের ধাক্কা দিয়ে আবারও রাস্তার পাশের একটি গাছের সাথে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই শ্যালোইঞ্জিন চালিত ওই গাড়িতে থাকা ওয়াসিম ও জাফর আলী নিহত হন। এছাড়া রয়েল পরিবহনের ৪-৫ যাত্রী আহত হন। এসময় চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়। তবে ওই পরিবহনে কতজন যাত্রী ছিলো তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

এদিকে আমঝুপি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বিশ^াসপাড়ার পরস্পর আত্মীয় দুটি পরিবারে চলতে শোকের মাতম। উপার্জনক্ষম ছেলে ও জামাইকে হারিয়ে পরিবার দুটিতে চলছে স্বজনদের আহাজারি।

এলাকাবাসীর দেয়া তথ্যমতে আরও জানা যায়, দিনমজুর পরিবারের সন্তান নিহত ওয়াসিম এক কন্যাসন্তানের জনক। তার একমাত্র কন্যা উর্মির বয়স প্রায় ৪ বছর। প্রায় ৬ বছর আগে তিনি আমঝুপি গ্রামের হাটপাড়ার বাবলুর মেয়েকে বিয়ে করে। এদিকে প্রায় একযুগ আগে জাফর বিয়ে করে ঘরজামাই হিসেবে আমঝুপি গ্রামে থাকেন। তিনি দুই পুত্র সন্তানের জনক। তার পরিবারেরও আর্থিক অবস্থা অসচ্ছল। তার বড় ছেলে জিহাদ (৮) প্রথম শ্রেণির ছাত্র ও ছোট ছেলে ইব্রাহিম (৪)। এলাকাবাসী আরও জানায়, ময়নাতদন্ত ছাড়া বিকেলে আমঝুপি কবরস্থানে তাদের মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

মেহেরপুর সদর থানা পুলিশের ওসি শাহ দারা খান দুর্ঘটনার খবর নিশ্চিত করে জানান, খরব পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নিয়েছে ও আহত একজনকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ঘাতক বাসটি ও খোয়াভাঙ্গা মেশিনটি উদ্ধার করে মেহেরপুর থানায় নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

গতরাত সাড়ে ১১টার দিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওসি দারা খান আরও জানান, এ বিষয়ে থানায় কেউ মামলা করেনি। রয়েল পরিবহনের মালিক ও নিহতদের পরিবারের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। সমঝোতা হওয়ায় প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় লাশ দুটি স্বজনদের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More