সংক্রমণ রোধে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ সারাদেশে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ডোজের টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন
স্টাফ রিপোর্টার: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দ্বিতীয় ডোজ শুরুর দিনে সারাদেশে মোট টিকা নিয়েছেন ৯৬ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ৮১ হাজার ৩২৩ জন। আর প্রথম ডোজের টিকা গ্রহীতার সংখ্যা নেমে এসেছে ১৪ হাজার ৮০৪ জনে। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে মোট ৯৬ হাজার ১২৭ জন টিকা নিয়েছেন। প্রথম ডোজের করোনার টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৯ হাজার ২৭৮ জন পুরুষ ও ৫ হাজার ৫২৬ জন নারী। আর দ্বিতীয় ডোজের টিকাগ্রহণকারীদের মধ্যে পুরুষ ৬০ হাজার ৫২৮ জন ও নারী ২০ হাজার ৭৯৫ জন। তাদের মধ্যে টিকা নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার উপসর্গ রিপোর্ট করেছেন দুজন। এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় দ্বিতীয় ডোজের প্রথম দিন টিকা নিয়েছেন ৬৯৮ জন।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জানুয়ারি দেশে প্রথম পরীক্ষামূলক টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। ওইদিন প্রথম টিকা নেন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। প্রথম দফায় কয়েকশ মানুষকে পরীক্ষামূলকভাবে টিকা দেয়া হয়। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে শুরু হয় টিকাদান কর্মসূচি।
দেশব্যাপী টিকা প্রয়োগ কর্মসূচির অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গায় করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ডোজের টিকা কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান দ্বিতীয় ডোজ টিকাদানের মধ্যদিয়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। জেলায় প্রথম দিনে মোট ৬৯৮ জন ও নতুনরা প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১০৭ জন। এর মধ্যে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৪৬১ জন ও প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৮ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ৭৮ জন ও প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৬০ জন, দামুড়হুদা উপজেলায় দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ৭৩ জন ও প্রথম ডোজ নিয়েছেন ২৮ জন, এবং জীবননগর উপজেলায় দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ৮৬ জন ও প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১১ জন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ জানুয়ারি প্রথম ধাপে ৫৮ হাজার টিকা চুয়াডাঙ্গায় পৌঁছায়। ফেব্রুয়ারি মাসের ৭ তারিখ প্রথম ডোজ দেয়া শুরু হয়। এ পর্যন্ত প্রথম ডোজের মধ্যে ৫৬ হাজার ৬১৯ জনকে ওই টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে। জেলায় ৬৫ হাজার ১৮৬ জন মানুষ টিকা নিতে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। প্রথম ডোজের বাকি থাকা টিকা দ্বিতীয় ধাপের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদিকে পুরো জেলায় করোনাভাইরাসের টিকাদান নিয়ে কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগের ৫০টি দল।
টিকা নেয়ার পাশাপাশি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান বলেন, জেলার স্বাস্থ্যবিভাগের প্রধান হওয়ার কারণে এবং বাকিদের মধ্যে ভীতি কাটাতে ফ্রেব্রুয়ারিতে আমিই প্রথম টিকা গ্রহণ করেছিলাম। আজ টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিলাম। শারীরিক কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে তিনি জানান। এছাড়াও সবার প্রতি আহ্বান থাকবে করোনার টিকা নিন, অন্যদেরও উৎসাহিত করুন। টিকা নিতে আগ্রহীরা সকাল থেকেই নির্ধারিত কেন্দ্রে আসছেন। প্রথম ডোজ গ্রহণ করে তার দুই মাস পর সময় পূর্ণ হলে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে আসছেন মানুষ। টিকা নিতে তাদের মধ্যে আগ্রহ দেখা গেছে।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মনসুর আলম খান টিকা গ্রহণের মধ্যদিয়ে মেহেরপুরে দ্বিতীয় ডোজের টিকা গ্রহণ শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে তিনি ওই দ্বিতীয় ডোজের ওই টিকা গ্রহণ করেন। ইতোমধ্যে মেহেরপুর জেলায় তিনটি উপজেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজের ১২ হাজার ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে। মেহেরপুরের মানুষ স্বাস্থ্য সম্পন্নভাবে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা গ্রহণ করছেন। এদিকে সকালের দিকে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ পরিদর্শন করেন। জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মনসুর আলম খান সেখানে এসে পৌঁছুলে হাসপাতালের সুপার ডা. মো. রফিকুল ইসলাম তাকে স্বাগত জানান। এ সময় সেখানে অন্যান্যের মধ্যে সিভিল সার্জন ডা. মো. নাসির উদ্দিন, আরএমও ডা. মো. মোখলেছুর রহমান, জেলা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু তাহের সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহে করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রদাণ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই জেলা সদর হাসপাতালসহ ৬ উপজেলার নির্ধারিত টিকা কেন্দ্রগুলোতে টিকা প্রদান করা হচ্ছে। সকালে জেলা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, প্রথম ডোজের প্রদাণের শুরুতে যারা টিকা গ্রহণ করেছিলেন তারা টিকা নিচ্ছেন। লাইনে দাড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকা প্রদাণ করা হচ্ছে। এছাড়াও নতুন টিকা গ্রহণকারীরাও রেজিস্ট্রেশন করছেন। সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম জানান, গতকাল বুধবার ঝিনাইদহে ৪ হাজার ৮’শ অ্যাম্পুল টিকা এসেছে। প্রতি অ্যাম্পুলে ১০ জন করে সর্বমোট ৪৮ হাজার জন টিকা গ্রহণ করতে পারবেন। গতকাল বুধবারই জেলার অন্যান্য উপজেলায় টিকা পৌঁছুনো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে একযোগে টিকা প্রদাণ শুরু করা হয়েছে।
মহেশপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকালে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোভিড-১৯ টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রদানের শুভ উদ্বোধন করলেন স্থানীয় এমপি চঞ্চল। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাশ্বতী শীলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ভ্যাকসিন প্রদানের উদ্বোধন করেন ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. শফিকুল আজম খাঁন চঞ্চল। অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান ময়জদ্দীন হামীদ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জমির মো. হাসিবুস সাত্তার, মহেশপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুর রহমান, মান্দারবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন অর রশিদ প্রমুখ। এমপি চঞ্চল এ সময় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে যেয়ে রোগীদের খোঁজখবর নেন।
উল্লেখ্য, প্রথম ডোজ নেয়া কেউ এসএমএস না পেলেও তিনি যে তারিখে প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন, সেই তারিখের দুই মাস পর টিকা কার্ড নিয়ে আগের কেন্দ্রে গিয়ে দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More