সুদিন ফিরেছে মেহেরপুরের গমচাষিদের

হুইট ব্লাস্টের প্রভাব নেই : ভালো ফলন ও দামে খুশি কৃষকরা

গাংনী প্রতিনিধি: ২০১৬ সালে ব্লাস্টের আক্রমণে গম চাষে লোকসানের মুখে পড়েন মেহেরপুর জেলার চাষিরা। গত কয়েক বছরে লোকসানের মুখে গম চাষে আগ্রহ হারান কৃষকরা। তারপর থেকে গত ছয় মরসুমে একাধারে হুইট ব্লাস্টের আক্রমণে দিশাহারা ছিলো মেহেরপুর জেলাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের আটটি জেলা। দীর্ঘ ছয় বছর পর মেহেরপুরের কৃষকরা ব্লাস্টমুক্ত গম ঘরে তুলছেন। ভালো ফলন ও বাজারমূল্য থাকায় লাভবান হচ্ছেন জেলার কৃষকরা। তবে হুইট ব্লাস্ট ভাইরাস একেবারে নির্মূল না হলেও চলতি মরসুমে তার প্রভাব পড়েনি গম ক্ষেতে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, মেহেরপুর জেলার মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার কৃষকরা অর্থকরী ফসল হিসেবে গম চাষ করে আসছিলেন। এর মাধ্যমে নিজেদের খাদ্যের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিক্রি করে নগদ অর্থও পাওয়া যেতো। কিন্তু ২০১৬ সালে ব্লাস্টের আক্রমণে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হয় গম চাষে। কৃষি বিভাগের কথা না শুনে যারা গম চাষ করেছিলেন তারা বারবার লোকসানের মুখে পড়েন। একসময় তারাও এ চাষ থেকে সরে আসেন। ২০১৯-২০ মরসুমে পরীক্ষামূলকভাবে বেশ কয়েকটি জাতের গমের আবাদ করে কিছুটা লোকসান কম হয় কৃষকদের। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ মরসুমেও লাভের মুখ দেখতে থাকেন জেলার গমচাষিরা।

গত মরসুমে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সেই জাতগুলোর গম চাষে কৃষকদের আগ্রহী করতে নানামুখী প্রচারণা চালানো হয়। ফলে চলতি মরসুমে দীর্ঘ ছয় বছর পর মেহেরপুরের কৃষকরা ব্লাস্টমুক্ত গম ঘরে তুলছেন। গম চাষে আবারো সুদিন ফিরছে এ জেলার চাষিদের।

২০১৯-২০ মরসুমে একেবারে শূন্য থেকে অনেক বেশি ১১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছিলো। ২০২০-২১ মরসুমে ১১ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়। সে মরসুমেও খুব ভালো অবস্থান তৈরি করতে পারেননি কৃষকরা। হুইট ব্লাস্টের দাপট কমলেও অধিকাংশ জমিতেই দেখা যায় এর প্রভাব। ২০২১-২২ মরসুমে লাভের মুখ দেখেন কৃষকরা। ওই মরসুমে সাড়ে বারো হাজার হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়। ব্লাস্টের প্রভাব থাকলেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। কিছুটা লাভের মুখ দেখা দেয়ায় ২০২২-২৩ মরসুমে ১২ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে জেলায়। পাশাপাশি চলতি মরসুমে অধিকাংশ কৃষকই কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত বারি-৩০ ও ৩৩ গম চাষ করেন। ফলে একদিকে যেমন বেড়েছে গমের চাষ অন্যদিকে দীর্ঘদিন পর গম চাষে আতঙ্ক ছাড়াই লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা।

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের কৃষক মো. শিপন বলেন, ‘এ বছর আমার তিন বিঘা জমিতে গম আছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর খুবই ভালো ফলন হবে। আগের বছরগুলোয় গমে অনেক রোগ ছিলো। কিন্তু এ বছর কোনো  রোগ নেই। গত বছর আমার দেড় বিঘা গমের আবাদ ছিলো। কিন্তু আমি খুব লাভবান হতে পারিনি। আশা করছি, এ বছর ভালো লাভবান হবো।’

একই এলাকার কৃষক সালাউদ্দীন বলেন, ‘আমার দেড় বিঘা গম আছে। গমের চেহারা খুবই ভালো, সুন্দর হয়েছে। ক্ষেতে  গেলেই মনটা খুশিতে ভরে যাচ্ছে। শুধু আমার নয় আমাদের এলাকার সবার গম ভালো হয়েছে।’

গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিকদার মোহাম্মদ মোহাইমেন আক্তার বলেন, ‘গাংনী উপজেলায় ২০১৭-১৮ সালের দিকে গমের আবাদ অনেকটাই শূন্যের কোটায় চলে যায়। সে পরিস্থিতি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। চলতি মরসুমে ৭ হাজার ৬৫  হেক্টর জমিতে গম আবাদ হয়েছে, যা গত বছর ছিলো সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ বেশি হয়েছে। আমাদের কৃষকরা আবারো গম চাষে এগিয়ে এসেছেন। গত বছর গমের দাম ভালো ছিলো। চলতি বছর গমের দাম ভালো পাবে। আবহাওয়া ভালো আছে, কোনোপ্রকার রোগ বালাই নেই। ব্লাস্টের কথা যদি বলি একেবারে নেই বললে চলে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার জানান, ২০১৬ সালে জেলায় প্রথম ব্লাস্ট শনাক্ত হয়। তখন চাষিদের গম চাষে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিলো। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্লাস্ট প্রতিরোধী ও উচ্চফলনশীল বারি ৩৩-৩০ এবং গম গবেষণা ইনস্টিটিউট ডব্লিউএমআরআই ১, ২ ও ৩ জাতের গম আবাদের পরামর্শ দেয়া হয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More