সড়ক উন্নয়নে দুর্ভোগ চরমে : ধুলাবালুতে অতিষ্ঠ জনজীবন

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা-সরোজগঞ্জ ভায়া খাসকররা সড়কের বেহাল দশা

আলম আশরাফ: সড়ক উন্নয়নের কাজের জন্য পুরোনো পিচঢালাই ওঠানো হয়। তার ওপরে বিছানো হয় ইটের খোয়া। এরপর এভাবেই ফেলা রাখা হয়েছে কয়েক মাস ধরে। যানবাহনের চাকার আঘাতে ইট-বালু গুঁড়া হয়ে লাল পাউডারের মতো হয়ে গেছে। যানবাহন চলাচলের সময় বা সামান্য বাতাসেও এসব ধুলা উড়ে বসে বাড়িঘরে, সবুজ গাছপালার রঙ লাল আস্তর। শুধু ধুলাবালুই নয়; গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির অধিকাংশ জায়গা খানাখন্দে ভরা। গর্তের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এমন চিত্র চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা-সরোজগঞ্জ ভায়া খাসকররা সড়কের। এই সড়কের দুই পাশে আছে বসতবাড়ি, দোকানপাট, স্কুল, মসজিদ, মন্দির। ধুলায় দুর্ভোগের শেষ নেই পথচারী ও আশপাশের বাসিন্দাদের। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ তারা। এসব এলাকাবাসী বলছেন, ‘সড়কে যখন খানাখন্দ ছিলো, তখনও শান্তিতে ছিলাম। এক বছরের বেশি সময় সড়কের কাজ ফেলে রেখেছে। ইটের গুড়োর লাল ধুলাবালুতে ঘরে থাকতে পারছি না। ঘরের খাবার-দাবার, জামাকাপড়, আসবাবপত্র সবকিছু ধুলাবালুতে নষ্ট হচ্ছে। ঘরের সবার সর্দি-কাশি লেগেই আছে।’ পুরো সড়ক যেন ধুলার রাজ্য। নিঃশ্বাস নেয়ার উপায় নেই।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গার হাউসপুর থেকে সরোজগঞ্জ পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সড়কের কাজ ১৮ কোটি ৫৮ লাখ ৪৯ হাজার ৯শ টাকা চুক্তি মূল্যে এ কাজের উদ্বোধন করা ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। তার কিছুদিন পরে কাজ শুরু হয়। আলমডাঙ্গা থেকে সদর উপজেলার আসানন্দপুর গ্রাম পর্যন্ত সড়কের দুপাশে প্রস্থ করে পুরাতন পিচ তুলে বিছানো হয় ইটের খোয়া। রোলার করার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। আসানন্দপুর থেকে সরোজগঞ্জ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির অধিকাংশ জায়গা খানাখন্দে ভরা। গর্তের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। হরহামেশা বিকল হচ্ছে পণ্য বোঝাই যানবাহন। সীমাহীন দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে যাত্রীদের। বিপাকে আছে স্থানীয় বাসিন্দা আর দোকানিরাও।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটিতে ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করলে ধুলাবালিতে সড়ক অন্ধকার হয়ে আসে। এসব বাতাসে উড়ে রাস্তার পাশের বাড়িঘর, গাছপালা, দোকানপাট, স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির, ঝোপঝাড়ের ওপর পড়ছে। আশেপাশের ঝোপঝাড় ও গাছপালার পাতায় লালচে আস্তরণ পড়েছে। পাল্টে গেছে বাড়িঘর, স্কুল, দোকানপাট ও মসজিদের দেয়ালের রঙ। শুধুই তাই-ই নয় ব্যবহারের পোশাক একবারের বেশি ব্যবহারের সুযোগ নেই; ভুক্তভোগীরা আরও জানিয়েছে ঘরের আসবাবপত্র, ব্যবহারিক জিনিসপত্র, খাবার কোনো কিছু রাস্তার ধুলা থেকে রেহায় নেই। ধুলা থেকে বাঁচতে কেউ কেউ পাইপ দিয়ে পানি ছিটাচ্ছেন রাস্তায়। আলমডাঙ্গা থেকে সরোজগঞ্জ পর্যন্ত ১৩টি গ্রামসহ প্রতিদিন অন্তত ১৫-২০ হাজার মানুষ নিয়মিত এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। এছাড়াও ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করেই। পথচারী ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, রাস্তার উন্নয়ন কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে ঠিকই; কিন্তু কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা জানেন না তারা।

রাস্তার পাশে বসবাসকারী মহিদুল, মিরাজ, রাশেদুলসহ কয়েকজন বলেন, কাজটির শুরু থেকেই ধীর গতিতে করা হচ্ছে। প্রথমে খনন করে অনেকদিন ফেলে রাখা হয়েছিলো। কয়েক মাস আগে খোয়া, বালু দিয়ে রোলার করা হয়েছে। ছোট-বড় গাড়ি যাতায়াতের সময় প্রচ- ধুলাবালির সৃষ্টি হচ্ছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে। দ্রুত রাস্তাটি কার্পেটিং করে আমাদেরকে এই দূষণ থেকে রক্ষা করা হোক।

স্থানীয়রা জানায়, ‘সড়কের কাজ না করে কেন এভাবে ফেলে রাখা হলো। এ পথ দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিদিন মানুষকে কী পরিমাণ দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে, তা ভাষায় বলার মতো নয়। একবার কেউ এ পথ দিয়ে গেলে মানুষের চেহারা আর মানুষের থাকে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, এলজিইডি, সবার গাফিলতির জন্যই এই ভয়াবহ কষ্টের মধ্যেই আমাদের বসবাস করতে হচ্ছে।’ একইভাবে বিভিন্ন অফিস আদালত যেতেও চরম বেগ পেতে হচ্ছে পথচারীদের। এছাড়াও ছোট ছোট যানবাহনগুলো বিশেষ করে অটোবাইক ও পাখিভ্যানগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়ক দিয়ে চলাচলের সময়। এ অবস্থায় দূষণ বন্ধের পদক্ষেপসহ সড়ক উন্নয়ন কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More