মাংসের দোকানে বড় গামলা : প্রতিনিয়ত প্রকাশ্যে ঠকছে ভোক্তা জিতছে বিক্রেতা

নজরুল ইসলাম : যে যখন পারছে সুযোগ বুঝে মানুুষ হয়ে ঠকাচ্ছে অপর মানুষকে। অন্যকে ঠকাতে পারলে নিজে লাভবান হওয়া যায় এমনই ধারণা অনেকের মধ্যে বিদ্যমান। অপরকে ঠকালে যে নিজে ঠকতে হয় এটা বেমালুম ভুলে যায় আমরা। তারপরও থেমে নেই মানুষ ঠকানোর কৌশল। তারই অংশ হিসেবে মাংস বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ প্রায় শোনা যায়। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবস্থা নিয়ে থাকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। তারপরও থেমে থাকে না অনেকেই। চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংসবিক্রির দোকানে ইদানিং রাখা হচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় বড় বড় গামলা। মাংসবিক্রির দোকানে এত বড় গামলা রাখার কারণ অনেকেরই অজানা। ফলে গামলার কারণে প্রতিনিয়ত প্রকাশ্যে ঠকছে ক্রেতা জিতছে বিক্রেতা। ক্রেতাদের মনে প্রশ্ন এত বড় গামলা রাখার হেতু কি? মাংসবিক্রির অজুহাতে শুধুই কি ক্রেতা ঠকানোর কৌশল ?
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটনায় শহরের সাথে গ্রামের খুব একটা পার্থক্য নেই। হাত বাড়ালেই প্রয়োজনীয় মালামাল নাগালের মধ্যে চলে আসায় যত্রতত্র গড়ে উঠেছে হাট বাজার। আর এসব বাজার থেকে মানুষ তার চাহিদা মোতাবেক দৈনন্দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয় করে থাকে। শহরের বাজারগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই বিক্রি হয়ে থাকে গরু ছাগলের মাংস। সরেজমিনে দেখাযায় মাংসবিক্রির দোকানিরা তাদের দোকান গড়ে তোলেন একটু উচু জায়গায়। বিশেষ করে গরুর মাংসবিক্রেতারা। যাতে করে ক্রেতা নিচ থেকে দোকানের সবকিছু অবলোকন করতে না পারে। দর্শনার মাংসবিক্রির দোকানগুলো ঘুরে দেখাগেছে, গরুর মাংস বিক্রির প্রায় দোকানে ডিজিটাল পাল্লায় আগে থেকেই বসিয়ে রাখা হয়েছে বড় মাপের একটি গামলা। বিক্রেতারা মাংস বিক্রির সুবিধার অজুহাতে ওইসব বড় বড় গামলা ব্যবহার করে থাকেন। আসলে তা নয়, সুযোগ বুঝে ওই গামলার মধ্যে কোল ঘেষে আড়াল করে আগে ভাগেই রাখা থাকে চর্বি, হাড়ের বড় টুকরা এবং মাথার মাংস। যা মাংসের দামে বিক্রি করে থাকে বিক্রেতারা। গ্রাম থেকে দর্শনা বাজারে মাংস কিনতে আসা নিয়ামত, সুজন, জাকির, আলী হোসেন, রবগুল, বারেক, রহিম জানালেন, মাংসবিক্রির সুবিধার জন্য বিক্রেতারা বড় বড় গামলা ব্যবহার করছে বলেই তো জানি। কৌতুলহলবসত মাংস কিনতে গিয়ে গামলা চেক করতেই দেখি আগে ভাগেই বিক্রেতা গামলার কোল ঘেষে রেখে দিয়েছে চর্বি এবং একটুকরা হাড়। এ নিয়ে বাকবিত-াও হয় বিক্রেতার সাথে। উপায় নেই প্রায় দোকানে একই অবস্থা। আবার অনেক দোকানদার ডিজিটাল পাল্লায় গামলার ওজন দিয়ে রাখে না। মাংসের সাথে গামলা ওজন হয়ে থাকে। এতে করে প্রতিনিয়ত ঠকছে ক্রেতা জিতছে বিক্রেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মাংস বিক্রেতা জানালেন, গরুর মাংস ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকায় বিক্রি হয়। কোনোভাবে ১শ’ গ্রাম হেরফের করতে পারলেই ৫০ টাকা ফাউ পকেটে ঢুকে যায়। গামলা রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করলে মাংস বিক্রেতা একটু থেমে জানালেন, মাথার মাংস বিক্রি হয় ২শ থেকে আড়ইশো টাকা দরে। গামলার বদৌলতে মাংসের দামে বিক্রি করা যায় মাথার মাংস। এছাড়াও গামলার কারণে ফেলে দেয়া হাড়গুলো ছোট ছোট করে কেটে মাংসের মধ্যে মিশিয়ে বিক্রি করা যায়। তবে শহরের পরিচিত লোকজনের সাথে বিক্রেতারা একাজগুলো সাবধানে করে। গ্রামের বাজারগুলোতে সবসময় গরু জবাই হয় না। গ্রাম থেকে মাংস কিনতে আসা মানুষগুলোর সাথে এ কাজগুলো সহজেই করা সম্ভব হয়। তাদের আসলে শহরের বাজারে এসে এসব যাচাই বাচাই করা সম্ভব বা সাহস থাকে না। বিশেষ করে শুক্রবারের দিন গ্রামে অনেক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। সেদিন গরুর মাংসের চাহিদাও থাকে বেশি। এ ছাড়াতো রয়েছে ডিজিটাল পাল্লার মারপ্যাচ। বর্তমানে মাংস বিক্রির ক্ষেত্রে ৫০ গ্রামের নিচে বাটখারা ব্যবহৃত হয় না। কোনো কসাইয়ের দোকানে নেই। অথচ ডিজিটাল পালায় পয়েন্ট উঠলে তার দাম ধরে নেয়া হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছে ভুক্তোভোগী মহল।
এ ব্যাপারে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান জানান, যে কোনোভাবেই ক্রেতা ঠকানো আইনত অপরাধ। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More