চুয়াডাঙ্গায় তরমুজ বেচাবিক্রি শুরু; থাওকো কিনে কেজিদরে বিক্রিতে ক্রেতাদের ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার: গ্রীষ্মকালীন ফল তরমুজ চুয়াডাঙ্গার বাজারে পুরোদমে বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে। তবে স্থানীয়ভাবে চাষের তরমুজ এখানে খুব একটা পাওয়া যায় না। দেশের চর অঞ্চলের তরমুজই আশপাশ এলাকার মানুষের ভরসা। এখানকার মানুষের তরমুজ খাওয়ার সাধ জাগলেও সাধ্যে তেমন কুলোচ্ছে না। সাধারণ ক্রেতারা তরমুজের দাম শুনেই হিড়কে পিড়িক হয়ে যাচ্ছেন। কারো কারো কেনার সাধ্য থাকলেও কেজির ওজনে কিনতে যেয়ে লাভ-লোকসানের হিসাব কষতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ছেন। জেলার ক্রেতারা পাইকারি থাওকো কিনলেও বিক্রির সময় সিন্ডিকেট করে ওজনে বিক্রি করছেন বলে সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ। বিষয়টি জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর খতিয়ে দেখবে বলে তারা আশা করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে তরমুজের পাঁচটি আড়ত আছে। এখানে প্রতিদিন গড়ে দুই ট্রাক তরমুজ আসে। এছাড়া আলমডাঙ্গা, জীবননগর, দামুড়হুদা ও জয়রামপুরেও আড়তে পাইকারি তরমুজ বিক্রি হয়ে থাকে। তবে কোনো সাধারণ ক্রেতা ইচ্ছে করলেই এখান থেকে খাওয়ার জন্য এক-দুটো তরমুজ কিনতে পারবেন না। এখানে গাদা হিসেবে নিলাম ডাকের মতো ডাকে বিক্রি হয়। চুয়াডাঙ্গা কোর্ট মোড়ের তরমুজ বিক্রেতা আনারুল ইসলাম লিল্টন জানান, ‘আমরা গাদা ধরে ডাক দিয়ে তরমুজ কিনি। ছোট, মাঝারি ও বড় এই তিন ধরনের তরমুজ গাদা দিয়ে রাখেন আড়তদাররা। আমরা ডাক দিয়ে তরমুজ কিনি। তবে বিক্রির সময় কেজি দরে বিক্রি করি। তিনি জানান, ‘চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে আমার মতো প্রায় একশ’জন খুচরা তরমুজ ব্যবসায়ী রাস্তার ধারে তরমুজ বিক্রি করি।’

চুয়াডাঙ্গা কোর্টপাড়ার বাসিন্দা জামসেদুল হক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘প্রতি বছর তরমুজ বাজারে এলে খাওয়ার ইচ্ছে জাগে। কিন্তু বিক্রেতার কারসাজির কারণে আমরা সাধারণ মানুষ তরমুজ কিনে খাওয়ার মুরোদ হারিয়ে ফেলেছি। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কেজিদরে তরমুজ বিক্রি করছেন। কিন্তু এক কেজি কিনতে চাইলে তারা বিক্রি করছেন না। তারা যেহেতু কেজিদরে কেনেন না তবে কেন কেজি দরে বিক্রি করবেন। কেজি দরে তরমুজ বিক্রির রেওয়াজ চুয়াডাঙ্গায় ছিলো না। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এটা দেখছি। অতিরিক্ত মুনাফার আশায় কিছু ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে এটা হচ্ছে। এই রীতি ও অনিয়ম ভাঙতে হবে। এ জন্য আমরা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

চুয়াডাঙ্গা বড় বাজার থানা মসজিদের সামনের খুচরা তরমুজ ব্যবসায়ী কিরণ শেখ জানান, ‘আমরা বাধ্য হয়েই কেজিদরে তরমুজ বিক্রি করি। একটা তরমুজের দাম ২ থেকে চারশ’ টাকা। আস্ত তরমুজের এমন দাম চাইলে ক্রেতারা হিড়কে যায়। তাই কেজিদর হিসেবে দাম চাই। আমরা বর্তমানে তরমুজ ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।’ কিরণ শেখ আরও বলেন, ‘ক্রেতারা তরমুজ কেটে দেখে নেয়। যদি ভালো লাল না হয় তাহলে ওই কাটা তরমুজ বিক্রি করতে আমাদের বেগ পেতে হয়। ভালো দামও পাইনে। তাছাড়া কিছু কিছু তরমুজ নষ্টও হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের অনেক লোকসান হয়ে যায়। তরমুজে যেমন লাভ আছে, আবার লোকসানও হয়।

চুয়াডাঙ্গা রেল বাজারের বিশিষ্ট তরমুজের আড়তদার আরিফ আহমেদ দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ‘পটুয়াখালী, নাটোর, ভোলা, বরিশাল, বরগুনাসহ বিভিন্ন চর এলাকা থেকে সাধারণত ট্রাকযোগে তরমুজ চুয়াডাঙ্গায় আসে। গ্রীষ্মের ভরা মরসুমে চুয়াডাঙ্গা জেলায় প্রতিদিন চার-পাঁচ ট্রাক পর্যন্ত তরমুজ বেচাকেনা হয়ে থাকে। জেলা শহরেই আসে প্রায় দুই ট্রাক। আমরা বাইরে থেকে তরমুজ কিনে এনেও এখানে বিক্রি করি। আমার বাইরের পার্টির তরমুজ বিক্রি করে দিই। বিক্রি করে দিলে আমরা হাজারে ৬০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত আড়তদারি পেয়ে থাকি। চুয়াডাঙ্গা জেলার খুচরা বিক্রেতাদের ব্যাপারে আরিফ আহমেদ বলেন, ‘খুচরা ব্যবসায়ীদের আহামরি লাভ হয় না। সাধারণ দৃষ্টিতে অনেক লাভ মনে হলেও তাদের লোকসানও কম হয় না। তরমুজ কাঁচা জিনিস। বাইরে থেকে ভেতরে সব কিছু দেখা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে ফল পচা হতে পারে। কোনো কোনো তরমুজের ভেতরে লাল কম হয়। সেক্ষেত্রে বেচাবিক্রি শেষে খুচরা ব্যবসায়ীদের খুব বেশি লাভ থাকে না। কেজিদরে বিক্রি প্রসঙ্গে আরিফ আহমেদ বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গায় আগে কেজিদরে কিক্রির নিয়ম ছিলো না। এটা কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করছি।’

এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর চুয়াডাঙ্গার সহকারী পরিচালক সজল আহম্মেদ দৈনিক মাথাভাঙ্গা বলেন, ‘তরমুজ কেজি দরে বিক্রির ফল নয়। এ নিয়ে গত বছর আমরা বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়েছি। শেষমেশ কেজিদরে বিক্রি রোধ করতে পেরেছিলাম। এ বছর আবার ব্যবসায়ীরা কেজিদরে তরমুজ বিক্রি করছে বলে জানতে পারছি। আমরা যেকোনো সময় চুয়াডাঙ্গার আড়তগুলোয় যাবো। দেখবো তারা কিভাবে বিক্রি করেন। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা কিভাবে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন। এতে সাধারণ ক্রেতা ঠকলে অবশ্যই একটা ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More