অস্ত্র উদ্ধারে দেশজুড়ে হঠাৎ বিশেষ অভিযান

ইউপি নির্বাচনে খুনোখুনি : ৬৪ জেলার এসপিকে চিঠি
স্টাফ রিপোর্টার: তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন নির্বিঘœ ও রক্তপাতহীনভাবে সম্পন্ন করতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। গতকাল সোমবার মধ্যরাত থেকে দেশের ৬৪ জেলায় শুরু হয়েছে অস্ত্র উদ্ধারের বিশেষ অভিযান। প্রাথমিকভাবে টানা ৭ দিন এই অভিযান চলবে। প্রয়োজনে অভিযানের সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে। অভিযানের ব্যাপারে সার্বিক নির্দেশনা দিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সব জেলার এসপিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল অন্তত ৫টি জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা পেয়ে তারা অভিযানে নেমে পড়েছেন। অস্ত্রসহ অনেকে গ্রেফতারও হয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স) হায়দার আলী খান বলেন, অস্ত্র উদ্ধার করতে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সামনে তৃতীয় ধাপের নির্বাচন রয়েছে। সেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও পরিবেশ নির্বিঘœ রাখতে পুলিশের তরফ থেকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা আর একজনেরও প্রাণহানি চাই না।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার জন্য যে ব্যবস্থাপনা দরকার তা এখনও পুরোপুরি অনুপস্থিত। সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করাও বৃথা। মাঠে সরকারদলীয় লোকজন ছাড়া তেমন কেউ নেই। তারাই নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়াচ্ছে। এবার দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ ও হামলায় প্রকাশ্যে অস্ত্রের ব্যবহার হয়। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াও কোনো কোনো জায়গায় পিস্তল ও রাইফেল ব্যবহার করে খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে। প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে ৫ জন ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৪টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৪টি জেলায় সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ছিল। নির্বাচন ঘিরে এত রক্তারক্তি হলেও দ্বিতীয় ধাপের আগে অস্ত্র উদ্ধারে দৃশ্যমান বড় ধরনের কোনো সমন্বিত অভিযান চোখে পড়েনি।
দায়িত্বশীল একাধিক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, রোববার পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ ভার্চুয়ালি সব জেলার পুলিশ সুপার ও ইউনিটপ্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে নির্বাচন ঘিরে মাঠ পর্যায়ের সার্বিক বিষয় আলোচনা হয়। যেসব এলাকায় সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে তার পেছনে কী কী কারণ রয়েছে মাঠ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তা জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া সামনে সহিংসতা রোধে করণীয় নিয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে এক হাজার ৭ ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই ধাপে বেশ কিছু জেলায় রক্তপাতের আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এরই মধ্যে প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে প্রায় প্রতি দিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে সহিংসতা। এতে হতাহত হচ্ছেন অনেকে। সহিংসতা মোকাবিলায় আগাম গোয়েন্দা তথ্য রাখার ওপর জোর দেন পুলিশের নীতিনির্ধারকরা। এছাড়া পুলিশের বিট অফিসারদের আরও কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালনের বিষয়টিও সামনে আসে। সংশ্লিষ্ট বিটে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কারা উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে আগাম সেই তথ্য নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। নির্বাচন ঘিরে কী কী ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে মাঠ পর্যায় থেকে তা তুলে আনবেন বিট অফিসার।
পুলিশের আরেকজন কর্মকর্তা জানান, মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন- একই দিনে একযোগে এত বিপুল সংখ্যক এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ায় চাহিদা মাফিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা সম্ভব হচ্ছে না। এই সুযোগে অনেক এলাকায় সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ
করতে বেগ পেতে হচ্ছে। নির্বাচনের ধাপ বাড়ানো গেলে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ভোটকেন্দ্রে নিয়োজন করা সম্ভব হতো। নির্বাচন ঘিরে বাড়তি ফোর্সের চাহিদা মেটাতে অনেক সময় ভিন্ন ভিন্ন ইউনিট থেকে পুলিশ যে এলাকায় ভোট সেখানে পাঠানো হয়। তবে হঠাৎ ভিন্ন ইউনিট থেকে নতুন এলাকায় গিয়ে পুলিশ সদস্যরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন না। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে তারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছেন না।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More