নজরুল ইসলাম: পাকাঘর নির্মাণকাজের অন্যতম উপকরণ রড, সিমেন্ট ও ইট। এক যুগের মধ্যে এবারই এসব উপকরণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিক হারে। দফায় দফায় এসব সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পেয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে মধ্যবিত্তরা ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন। মাঝ পথে থেমে গেছে নির্মাণ কাজ। অপেক্ষায় আছে দাম স্বাভাবিক হলে শুরু করবে কাজ। বিশ্ববাজারে রড ও সিমেন্ট তৈরি কাাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এসব উপকরণের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে গেছে বলে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা মনে করছেন।
করোনা পরিস্থিতিতে ব্যক্তি জীবনের সাথে থমকে গেছে বিশ্ব। সেই সাথে বন্ধ রয়েছে সকল প্রকার অবকাঠামো নির্মাণ কাজ। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় শুরু হয় সরকারি, বে-সরকারি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন নির্মাণ কাজ। বাজারে চাহিদা বেড়েছে নির্মাণ সামগ্রীর মধ্যে রড, সিমেন্ট ও ইটের। চাহিদা মোতাবেক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠনগুলো মালামাল জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে এসব নির্মাণ সামগ্রীকের দাম। একযুগের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। নির্মাণকাজের অন্যতম প্রধান উপকরণ রড, সিমেন্ট, ইট ও পাথর। এসব নির্মাণ সামগ্রীর দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। দফায় দফায় বেড়ে এই পণ্যের দাম এখন ওয়ান-ইলেভেনের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।
২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের সময় দেশজুড়ে অনিয়শ্চয়তার মধ্যে ভালো মানের (৬০ গ্রেডের ওপরে) এক টন রডের দাম ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। এটাই দেশের বাজারে এখন পর্যন্ত রডের সর্বোচ্চ দাম। সম্প্রতি রডের দাম বেড়ে ওই সময়কার কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ভালো মানের এক টন রড কোম্পানিভেদে এখন খুচরা পর্যায়েও বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকায়। রডের এই দাম বাড়ার কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে নির্মাণ কাজ থমকে যায়। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে বন্ধ থাকা কাজ আবারও শুরু হয়। ফলে কয়েক মাস ধরে রড ও সিমেন্ট বিক্রি বেড়ে গেছে। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও বেড়েছে। দেশের বাজারে যে রড ও সিমেন্ট উৎপাদন হয় তার সিংহভাগ কাঁচামাল আসে বিদেশ থেকে। আন্তর্জাতিক বাজারে রড ও সিমেন্ট তৈরির কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে। এমনকি চাহিদার তুলনায় কাঁচামালের ঘাটতিও রয়েছে। মূলত কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে রড ও সিমেন্টের দাম বেড়ে গেছে। রড ও সিমেন্টের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি গাড়ি প্রতি (২ হাজার) ইটের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকা করে। সিমেন্ট তৈরির প্রধান পাঁচটি কাঁচামাল হলো ক্লিঙ্কার, লাইমস্টোন, সø্যাগ, ফ্লাই অ্যাশ ও জিপসাম। কো¤পানিভেদে বস্তাপ্রতি সিমেন্টের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। সামনে সিমেন্টের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
একসূত্রে জানা গেছে, কাঁচামাল ও জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় সিমেন্টের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ। এর সঙ্গে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া দাম বাড়ার আর একটি কারণ। কয়েকজন ঠিকাদারের সাথে কথা হলে তারা বলেন, সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করে নির্মাণ কাজের টেন্ডার দিয়েছে কাজ শুরু করতে গিয়ে এখন দেখছি অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়েছে রড, সিমেন্ট, ইট ও পাথরের। বিধায় কাজ বন্ধ করে রেখেছি। দাম স্বাভাবিক না হলে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। লাভের আশায় কাজ করতে গিয়ে এ মূল্যে কাজ করলে লোকসান হবে অনেক বেশি। বাড়ি তৈরি করা ছলেমান, জহির, তোবারক, খোরশেদ, বিমল, শুকুর আলী, জমির, হযরত আলী জানালেন, যখন কাজ শুরু করে ছিলাম তখন রডের মূল্য ছিলো ৫৮ টাকা থেকে ৬১ টাকার মধ্যে। এখন সেই রডের মূল্য ৭২ থেকে ৭৫ টাকার মধ্যে। কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ১৭ টাকা। রড সিমেন্টের দাম না কমলে আপাতত কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। যে পর্যন্ত হয়েছে এখানেই আপাতত থামতে হচ্ছে। হিজলগাড়ি বাজারের রড সিমেন্ট খুচরা বিক্রেতা বাবুল, দর্শনা বাসস্ট্যান্ডের কবির, দোস্ত বাজারের সাহেব আলীসহ কয়েকজন বলেন, হঠাৎ করে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যারা কাজের মধ্যবর্তী অবস্থায় আছে তারাই শুধু কাজ করছে। নতুন করে কেউ কাজে হাত দিচ্ছে না। কয়েকদিন আগেও প্রতিদিন ৩শ থেকে ৪শ বস্তা সিমেন্ট বিক্রি করতাম। এখন প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ বস্তা সিমেন্ট বিক্রি করছি। চাহিদা কমে গেলে দামও কমে যাবে বলে মনে করছি। ব্যক্তিসহ সার্বিক উন্নয়ন করতে গেলে এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ শনাক্ত করে নির্মাণ সামগ্রীক মালামালের স্বাভাবিক মূল্য ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে নির্মাণকারিররা।
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ