আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিরোধীদলের মিছিল মিটিং সমাবেশে বাধা নয়
সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গুরুত্বারোপ
স্টাফ রিপোর্টার: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিয়েই আলোচনা হয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায়। এতে বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। তিনশ আসনেই ইভিএমে ভোট করার কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই নির্বাচন হবে অবাধ ও নিরপেক্ষ। এবার সবকিছু কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এদিক মাথায় রেখেই নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে বলেও সভাকে অবহিত করা হয়। সেভাবেই দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়।
ডিসেম্বরে দলের জাতীয় সম্মেলন হতে পারে। এর আগে তৃণমূল আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলনের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিরোধী দলের মিছিল-মিটিং, সমাবেশে বাধা না দেওয়ার কথাও হয়। তারা যেন স্বাধীনভাবে কর্মসূচি পালন করতে পারেন এ বিষয়ও আলোচনায় উঠে আসে। ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে সারা দেশে ওই দিন ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত বর্ণাঢ্য আয়োজনের কথা বলা হয়।
দীর্ঘ সাড়ে ৫ মাস পর শনিবার আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সুনির্দিষ্ট বারোটি এজেন্ডা ছিল এই সভার। কিন্তু এসব এজেন্ডার বাইরেও নানা ইস্যুতে টানা প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা বৈঠক চলে। সভায় ৬ জন সাংগঠনিক সম্পাদক নিজ নিজ বিভাগের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এসময় কিছুটা হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গত নির্বাচন নিয়ে এখনো আন্তর্জাতিক পরিম-লে তাকে জবাব দিতে হয়। তাই আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও কঠিন হবে। সবকিছুই কঠিন থেকে কঠিনতর হবে এবার। বিএনপির নেতা তারেক রহমান এবার রমজানে ওয়ার্ড নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সভা করেছেন। পশ্চিমা দেশগুলোতে অন্তত ৫০টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছেন। তারা চুপ করে বসে নেই। দল গোছাতে হবে। সর্বস্তরে সম্মেলন করে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।
বৈঠকে উপস্থিত নেতারা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে করণীয় বিষয়ে মূলত কেন্দ্রীয় নেতাদের দিকনির্দেশনা দেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ আলোচনায় পরবর্তী সংসদ নির্বাচন কেমন হবে তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলে। এ সময় অনির্ধারিত আলোচনায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, তেলের মূল্যবৃদ্ধি, ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন, তৃণমূলে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের মদদদাতা নেতাদের কর্মকা- এবং পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গ উঠে আসে।
রুদ্ধদ্বার সভায় শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দেন যে, সংসদ নির্বাচনে দলের কোনো প্রার্থীকে জেতানোর দায়িত্ব তিনি নেবেন না। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সারা দেশে ইভিএমে হবে। ফলে বিকল্প উপায়ে বা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোটে জেতার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন করেই সবাইকে জিতে আসতে হবে। জনগণ আগামী নির্বাচনে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়ী করবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রসঙ্গ তোলা হলে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দল করতে হলে সিদ্ধান্ত মানতে হবে। সিদ্ধান্ত না মানলে দল করার প্রয়োজন নেই। যারাই নৌকার বিরোধিতা করেছে তাদের দলীয় সব পদপদবি থেকে বহিষ্কার করতে হবে। যেখানে এখনো সম্মেলন হয়নি কিন্তু বিদ্রোহী ব্যক্তি দলীয় পদে আসীন, তাকে বাদ দিয়ে প্রস্তুতি কমিটি করে সম্মেলন করতে হবে। কোনোভাবেই বিদ্রোহীদের মাফ করার সুযোগ নেই।
প্রধানমন্ত্রী জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ইভিএমে। ৩০০ আসনেই এ পদ্ধতি থাকবে। এ নির্বাচন হবে অবাধ ও নিরপেক্ষ। এ কারণে যোগ্য প্রার্থী বেছে নিতে সারা দেশে জরিপ চলছে। তিনি সবকিছু বিবেচনা করেই এবার দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন।
তিনি বলেন, এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন ইভিএমে হয়েছে। সেখানে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী ছিল। মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছে। এ ভোট নিয়ে কোনো অভিযোগ কেউ করতে পারেনি। কাজেই আমি দেখতে চাই, দেশের মানুষের জন্য এত করলাম, দেশের মানুষ আমাকে কী দেয়? ইভিএমে ভোটে যাতে কোনো ধরনের অভিযোগ না থাকে। এজন্য দলীয় নেতাকর্মী এবং এমপিদের এলাকায় যোগাযোগ বাড়াতে হবে। কর্মীবান্ধব হতে হবে।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন যথাসময়ে হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই পদ্মা সেতু তৈরি করেছি। দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে সেতুর উদ্বোধন করব।
দ্রুত জেলা-উপজেলার সম্মেলনের মাধ্যমে দলের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম মেয়াদোত্তীর্ণ সংগঠনের নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির তাগিদ দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করলেই শেষ হবে না। সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলনও শেষ করতে হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More