স্টাফ রিপোর্টার: দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের ওপর নির্মম হামলার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। এখনও ঘটনার কোনো ক্লু খুঁজে পায়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফলে কী কারণে, কেন এই হামলা-তা এখনও অজানা। ইউএনও ওয়াহিদা খানমের কর্মকালীন বিভিন্ন ঘটনার সূত্র ধরে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
স্থানীয়রা বলছেন, এসি ল্যান্ডের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করায় জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে অনেকের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। এদিকে বেঁধে দেয়া সময় বুধবার পেরিয়ে গেলেও প্রশাসনিক তদন্ত কাজ শুরু করেনি রংপুর বিভাগীয় কমিশনার গঠিত তদন্ত কমিটি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দিনাজপুর ডিবি পুলিশের ওসি ইমাম জাফর যুগান্তরকে জানান, মামলার প্রধান আসামি বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা আসাদুল ইসলাম, রংমিস্ত্রি নবীরুল ইসলাম ও সান্টু কুমার দাসকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে পুলিশের একটি বিশেষ টিমের সহযোগিতায় আলাদা আলাদাভাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কিন্তু এই হামলা সম্পর্কে এখনও তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে এদের দেয়া কিছু তথ্যানুযায়ী ঘোড়াঘাটের বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ওই তিন আসামির মধ্যে নবীরুল ও সান্টুর রিমান্ড শেষ হবে আগামীকাল শুক্রবার এবং আসাদুলের শনিবার।
পুলিশের রংপুর ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য জানান, এখনও বলার মতো কিছু হয়নি। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় আমরা অতি গুরুত্ব ও সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করছি। বলার মতো কিছু পেলেই আমরা জানাব।
ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের ওপর হামলার ঘটনায় রংপুর বিভাগীয় কমিশনার গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে বেঁধে দেয়া ৭ দিন সময় বুধবার শেষ হলেও এখন পর্যন্ত তারা তদন্ত কাজও শুরু করেনি। এ বিষয়ে জানতে তদন্ত কমিটির প্রধান রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. জাকির হোসেনকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওয়াহাব ভূঞা সাংবাদিকদের বলেন, প্রশাসনের তদন্ত প্রশাসনিক, সেটা কোর্টে সাবমিট করার জন্য নয়। প্রশাসনের কিছু কিছু বিষয় রয়েছে, আমাদের প্রশাসনিক কার্যক্রমগুলো ইন্টারনালিই করতে হবে। আপাতত তারা পুলিশি তদন্তকে সহযোগিতা করছেন বলে জানান তিনি।
স্থানীয়রা জানান, ১৪৮ দশমিক ১৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ঘোড়াঘাট উপজেলায় ১৪ হাজার ৮৭৪ হেক্টর জমি থাকলেও ২৫ বছর ধরে এই উপজেলায় এসি ল্যান্ডের পদটি শূন্য। এ কারণে ২০১৮ সালের নভেম্বরে এখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকে ইউএনও ওয়াহিদা খানমকেই অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এসি ল্যান্ডের দায়িত্ব পালন করতে হয়। এতে এলাকার ভূমিগ্রাসীদের বিভিন্ন অন্যায় আবদারসহ নানা চাপ আসতো তার ওপর। এ ছাড়া সম্প্রতি ইউএনওর বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ ঘোড়াঘাটে একটি জমি কেনায় তিনি ভূমিগ্রাসীদের চক্ষুশূলে পরিণত হন।
স্থানীয় এমপি শিবলী সাদিক বলেন, এখানে একটি গ্রুপ রয়েছে, যারা সব সময়ই জোরপূর্বক জমি দখলে লিপ্ত। এসি ল্যান্ডের দায়িত্বে থাকায় ইউএনওর কাছে জমি সংক্রান্ত নানা অবৈধ দাবি নিয়ে যেত তারা। এতে প্রশ্রয় না দেয়ায় তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল গ্রুপটি।
ঘোড়াঘাট পৌরসভার মেয়র আব্দুস সাত্তার মিলনও একই রকম মন্তব্য করেন। এ ছাড়া প্রায় ২ বছর ধরে ঘোড়াঘাটে ইউএনওর দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান, অবৈধ বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ, বিভিন্ন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, মাদকবিরোধী অভিযানসহ বিভিন্ন সরকারি দায়িত্ব পালনে অনমনীয় ভূমিকার কারণেও স্থানীয় দুষ্কৃতকারী ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে তার শত্রুতা তৈরি হতে পারে বলে জানান এলাকাবাসী।
উপজেলার ডুগডুগি বাজারের সরকারি জায়গায় বিভিন্ন সময়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তা হস্তান্তর করত কতিপয় প্রভাবশালী। সম্প্রতি কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন ইউএনও ওয়াহিদা খানম। হামলার ঘটনার পরদিনও ওই বাজারের একটি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার কথা ছিলো তার।