ইউনিয়নে আ.লীগ-বিএনপির শোডাউন কাল : উত্তেজনা-শঙ্কা

দীর্ঘদিন পর তৃণমূলের কর্মসূচিতে ফিরেছে বিরোধী দলগুলো

স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘদিন পর তৃণমূলের কর্মসূচিতে ফিরেছে বিরোধী দলগুলো। আগামীকাল শনিবার সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। একইদিন পাল্টা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ও শোডাউন ঘিরে তৃণমূলে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন অনেকে। এতদিন উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসূচি পালন করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এসব কর্মসূচির বিপরীতে আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে সরব ছিলো। সরকার পতনসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করছে বিরোধী দলগুলো। জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে প্রথমবারের মতো ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি ও সমমনা দল। আগামী ১১ই ফেব্রুয়ারি দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে পদযাত্রা করবে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। ঘোষিত পদযাত্রার সকল শ্রেণির মানুষকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি’র হাইকমান্ড। তবে একইদিন ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন দলটির নেতারা। এতে জনমনে নানা আশঙ্কা, আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। দুই দলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মাঠে উত্তাপ বাড়ছে। কর্মসূচিকে ঘিরে কোথাও কোথাও নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকার পতনের দাবিতে গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি দেশের ১০টি বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিএনপি।

আওয়ামী লীগও ৮টি বিভাগীয় শহরে পাল্টা কর্মসূচি পালন করে। এতে কোথাও কোথাও দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সেদিন রাজধানীর নয়াপল্টনে ঢাকার বিভাগীয় বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১১ই ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তখন তিনি বলেন, ১১ই ফেব্রুয়ারি দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে। বিএনপি কোনো সহিংসতায় জড়াতে চায় না। বিএনপি’র কর্মসূচি ঘোষণার পরই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সব ইউনিয়নে একইদিন শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়। যদিও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এটি বিএনপি’র কর্মসূচির পাল্টা কোনো কর্মসূচি নয়। নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবেই এই কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ সরব থাকবে। একইদিনে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে সব সময়ই সংঘাতের আশঙ্কা থাকে। ১১ই ফেব্রুয়ারি নিয়েও সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। তৃণমূল থেকে রাষ্ট্রের যেকোনো স্তরেই এই সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করা ঠিক নয়। বিএনপি আগেই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এক দুইদিন পর আওয়ামী লীগ কর্মসূচি দিয়েছে। এটা সুষ্ঠু রাজনীতি হতে পারে না। বিএনপি নেতারা বলছেন, ১১ই ফেব্রুয়ারি বিএনপি’র পদযাত্রা কর্মসূচির দিনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তারা দেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

ইউনিয়নে বিএনপি’র পদযাত্রায় আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের নামে হামলা করার আশঙ্কা রয়েছে। বিএনপি’র কর্মসূচি পূর্বঘোষিত। আমাদের চলমান প্রতিটি আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। সেখানেও আওয়ামী লীগ ইচ্ছা করেই বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে। বিএনপি’র অসংখ্য নেতাকর্মী হতাহত হয়েছে। এখনো সরকার ও আওয়ামী লীগ নানাভাবে উস্কানি দিচ্ছে। মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক নাছির মিয়া, শিমুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক লিটন মোল্লা, একই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বিএনপি’র ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেন, ইউনিয়নে ১১ই ফেব্রুয়ারি পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। কর্মসূচি ঠেকাতে এরইমধ্যে গ্রাম ও ইউনিয়নগুলোতে নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতারা নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন। পদযাত্রায় যেন কেউ অংশ না নেয় সেজন্য হুমকি দিচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার ইচ্ছা করে দেশকে অরাজকতা ও গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ।

বিএনপি জনগণের জন্য আন্দোলন করছে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। এদিকে সহিংসতা এড়াতে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপি’র পদযাত্রা কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগের ডাকা কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ইচ্ছাকৃতভাবে একেবারে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। যেকোনো শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। সেভাবে আমরা কর্মসূচি পালন করে আসছি। আওয়ামী লীগ প্রথমদিক থেকে চেষ্টা করছে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য। আমরা সেই সংঘাতকে এড়িয়ে চলেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিএনপি’র সভা সমাবেশসহ দলীয় কর্মসূচি পালন করা সাংবিধানিক অধিকার। এখানে বাধা দেয়া ঠিক না। সরকারি দলও কর্মসূচি পালন করবে। তবে একইদিনে সংঘাত ঘটার আশঙ্কা রয়েছে-এমন কর্মসূচি দেয়া ঠিক নয়। এতে সংঘাত ও সহিংসতার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। তৃণমূলে সহিংসতা বাড়লে গৃহযুদ্ধের সম্ভবনা তৈরি হয়। সরকারকে এই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর দিলারা চৌধুরী বলেন, দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ছেলেমানুষি কর্মকা-ে লিপ্ত। পুরাতন একটা দল খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে আসছে। বিএনপি তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে। সহিংসতা পরিহার করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সহিংসতা বাড়াতে একইদিনে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে আসছে। আগামী ১১ই ফেব্রুয়ারি বিএনপি ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে। তারা আগেই দিনক্ষণ ঠিক করেছে। আওয়ামী লীগ তা জেনেও একইদিনে একই পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ নামে কর্মসূচি ঘোষণা করছে। এতে সহিংসতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এই ধরনের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি কোনোভাবেই সমীচীন নয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More