স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সেই কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। গতকাল বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, বরিশালের সমাবেশস্থলে তিনদিন ধরে অবস্থান করছেন নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। অধিকার ফিরে পাওয়ার দাবিতে সমাবেশে এসেছেন তারা। আওয়ামী লীগ দেশের সব অর্জন ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা ’৭৫ সালে বাকশাল কায়েম করেছিল। ১৪ বছর ধরে একই কায়দায় দেশ শাসন করছে। ওপরে শুধু গণতন্ত্রের খোলস। তারা বিএনপির লাখ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। জেলে পুরেছে। তাদের হাতে এ দেশের কেউ নিরাপদ নয়। বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা সমস্ত টাকা বিদেশে পাচার করেছে। বিদ্যুৎ নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়েছে। শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিয়েছে। হাতিরঝিলে বিদ্যুতের উৎসব করেছে। এখন বিদ্যুৎ নেই। রিজার্ভ নেই। কিছুই নেই। তারা ১০ টাকা কেজি দরে চাল এবং ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা বলেছিল। এখন চালের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকায় ওঠানামা করছে। সাধারণ মানুষকে কোনো চাকরি দেয়নি। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের চাকরি দিয়েছে। প্রত্যেকের কাছ থেকে তারা ২০ লাখ করে টাকা নিয়েছে। আওয়ামী লীগ ‘বর্গি’র রূপ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তারা যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই ভোট চুরি আর সন্ত্রাস করে। এখন আবার নতুন করে ভোট চুরির পাঁয়তারা করছে ইভিএম দিয়ে। মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকার এতদিন মানুষকে উন্নয়নের গল্প শুনিয়েছে। এখন দুর্ভিক্ষের কথা বলছে। দেশে এখনো ৪২ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। ৩০ ভাগ মানুষ এখনো খাবার পায় না। এ দেশের মানুষ তাদের হাত থেকে মুক্তি চায়। তিনি বলেন, এ আন্দোলন বিএনপির জন্য নয়, সমগ্র জাতিকে রক্ষার। এ আন্দোলনের ফয়সালা হবে রাজপথে। এ আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সব বাধা উপেক্ষা করে বরিশালের বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল হয়েছে। গণসমাবেশ যাতে গণমাধ্যমে প্রচার হতে না পারে সেজন্য ফ্রিকোয়েন্সি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যম লিখতে পারে না। এডিট করে তাদের মূল কথা বাদ দিয়ে লিখতে হয়। সারা দেশে গণগ্রেফতার চলছে। শত বাধা উপেক্ষা করে যেভাবে বরিশালের সমাবেশে মানুষ এসেছে এর চেয়ে বড় আন্দোলন আর হতে পারে না। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, দেশে সততা নেই। মানবাধিকার নেই। নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নেই। জনগণের অধিকার নেই। ব্যাংকে টাকা নেই। তারা (আওয়ামী লীগ) সত্য কথা বলে না। মুখে যা বলে তা করে না। আর যা করে সেটা মুখে বলে না। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বরিশালের মানুষ আন্দোলন বিপ্লবে পরিণত করেছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, তিনি মাঠে খেলার কথা বলেছেন। বিএনপি তো প্রথম ডিভিশন টিম। আওয়ামী লীগের মতো সেকেন্ড ডিভিশন টিমের সঙ্গে বিএনপির খেলা মানায় না। আগে পদত্যাগ করে মাঠে আসুন তখন খেলা হবে। বেগম সেলিমা রহমান বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে এ দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না। মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সাম্প্রতিক আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দেন। ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম বলেন, দেশে এখন চাঁদাবাজি লীগ, হাইজ্যাক লীগসহ দুর্বৃত্ত সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ যার রিজার্ভ পর্যন্ত চুরি হয়েছে। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মজিবর রহমান সরোয়ার, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, নাজিম উদ্দিন আলমসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা: সমাবেশস্থল এবং আশপাশে মোবাইল ও ইন্টারনেটওয়ার্ক বিভ্রাট হয়। এ কারণে আগতরা অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। অনেক টেলিভিশন সমাবেশ সরাসরি সম্প্রচার করতে পারেনি। নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির সমাবেশ গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচার ঠেকাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখা হয়েছে।
ড্যাবের চিকিৎসাসেবা: গণসমাবেশে গ্যাস্ট্রিক, গলাব্যথা ও পানিশূন্যতায় ওষুধ নেয়ার হিড়িক পড়েছিল। সমাবেশস্থলের এক পাশে বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ড্যাবের একটি ক্যাম্প থেকে তাদের বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়। এছাড়া প্রাথমিক সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল বলে জানিয়েছেন ড্যাব নেতারা।
হামাগুড়ি দিয়ে সমাবেশে যোগদান: বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে এসেছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী মজিবর রহমান। জেলার হিজলা উপজেলা থেকে এসেছেন তিনি। সমাবেশ মঞ্চের কাছে হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করতে দেখা গেছে তাকে। মজিবর জানান, হিজলা থেকে ট্রলারে বরিশাল এসেছেন তিনি। কীর্তনখোলা নদীর তীরে নামার পর হামাগুড়ি দিয়ে এসেছেন সমাবেশস্থলে। দলকে ভালোবেসে সমাবেশে এসেছেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, বেগম জিয়ার মুক্তি এবং সুষ্ঠু ভোটের দাবি জানান তিনি। এ দাবির বাস্তবায়ন করতে বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে এসেছেন বলে জানান শারীরিক প্রতিবন্ধী মজিবর।
পটুয়াখালীতে সাবেক এমপির ওপর হামলা: পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, বরিশালে গণসমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. শাহজাহান খানের ওপর হামলা হয়েছে। শুক্রবার রাতে তিনি মোটরসাইকেলে বরিশাল বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার সময় পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের গাবুয়ায় তার ওপর হামলা করে ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা-কর্মী। পরে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে শহরের নিজ বাসায় আছেন তিনি।
জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি মো. শাহজাহান খান বলেন, ‘আমি নেতা-কর্মী নিয়ে বরিশালের সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার সময় গাবুয়া পৌঁছুলে আওয়ামী লীগের লোকজন পথরোধ করে বরিশাল যেতে বাধা দেন। আমি কারণ জিজ্ঞাসা করলে আমার ওপর হামলা করে আহত করেন। আমার কর্মীদেরও মারধর করেছেন। আমাদের মোটরসাইকেলগুলো ভাঙচুর করেছে। আমি সমাবেশে যেতে পারিনি তাই কষ্ট লাগছে। কিন্তু পটুয়াখালী থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক বরিশালের জনসভায় যোগ দিয়েছেন।’ সদর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি।’