করোনা আক্রান্ত খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা চলবে

স্টাফ রিপোর্টার: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আপাতত রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালেই ভর্তি থাকবেন। সব পরীক্ষা শেষে চিকিৎসকদের পর্যালোচনার পর বাসায় নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া নন-কোভিড ইউনিটে চিকিৎসাধীন। তার চিকিৎসার জন্য ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। করোনার কোনো উপসর্গ নেই। তিনি ভালো আছেন। শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। গত দেড় বছরে তার নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়নি। এজন্য তাকে এখন রুটিন চেকআপ করানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে সিটি স্ক্যান, হৃদযন্ত্রের ইসিজি ও ইকোসহ যেসব পরীক্ষা করা হয়েছে, তাতে বড় কোনো জটিলতা পাওয়া যায়নি।
চেয়ারপারসনের চিকিৎসক দলের প্রধান অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী জানান, মঙ্গলবার রাতে আমরা উনার (খালেদা জিয়া) চেস্টের সিটি স্ক্যান করেছি। প্রথম যে সিটি স্ক্যান করিয়েছিলাম, তার চেয়ে এবারের রিপোর্ট অনেক ভালো। সেই দিক দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ, উনি সার্বিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। কোভিডের অন্যান্য প্যারামিটার ডি-ডাউমার, ফেরিটিন্স, সিআরপ এগুলো ঠিক আছে।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসক দলের সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ৭ জন এবং তার ব্যক্তিগত ৩ চিকিৎসকসহ ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তার কিছু পরীক্ষা হয়েছে। আজ কিছু পরীক্ষা হবে। সেই রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করে ম্যাডামের চিকিৎসা প্ল্যানিংটা সম্পন্ন হবে। তারপর তাকে বাসায় আনার সিদ্ধান্ত হবে। তিনি বলেন, কিছু পরীক্ষা আছে যেগুলো করতে ২৪ ঘণ্টা সময় নিতে হয়। কিছু কিছু পরীক্ষা আছে এগুলো করতে হলে দুই দিনের প্রস্তুতি লাগে। কারণ গত দেড় বছর ধরে আমরা হাসপাতালে নিয়ে তার যেসব পরীক্ষা করা দরকার সে পরীক্ষাগুলো করাতে পারিনি।
ডা. জাহিদ বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকসহ আমাদের মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শক্রমে আরও কিছু নতুন ওষুধ যোগ করা হয়েছে। তার আরও কিছু পরীক্ষা করতে হবে। হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধায়নে এসব চেকআপ করা হচ্ছে। ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) অবস্থা স্টেবল (স্থিতিশীল) আছে। আমরা খুব আশাবাদী তিনি খুব শিগগিরই বাসায় ফিরবেন।
খালেদা জিয়ার সিটি স্ক্যান, ইসিজি, ইকোসহ কিছু পরীক্ষা পরীক্ষা হয়েছে উল্লেখ করে ডা. জাহিদ বলেন, এর আগে গত ১৫ এপ্রিল ম্যাডামের সিটি স্ক্যানে ফুসফুসে অত্যন্ত মিনিমাম সংক্রমণ ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার দ্বিতীয়বারের সিটি স্ক্যান বিন্দুমাত্র ইনভোলবমেন্ট (সংক্রমণ) নেই। কাজেই এটা ভালো দিক।
খালেদা জিয়া নন-কোভিড ইউনিটে চিকিৎসাধীন জানিয়ে অধ্যাপক জাহিদ হোসেন বলেন, উনার কোনো করোনা উপসর্গ নেই। আন্তর্জাতিক নিয়মে আছে কারও করোনা আক্রান্তের দুই সপ্তাহ পার হলে তার থেকে অন্যদের সংক্রমিত হয় না। সেই হিসাবে ম্যাডামের ২০ দিন হয়েছে। এখন ম্যাডামের অন্য চিকিৎসা চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. আল মামুন, বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার ও শায়রুল কবির খান। সিটি স্ক্যানসহ কয়েকটি পরীক্ষা করার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে মঙ্গলবার রাতে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এভারকেয়ারের একটি কেবিনে তিনি আছেন।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া প্রথমে হাসপাতালে ভর্তির পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমানের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত তিনি হাসপাতালে ভর্তি হতে রাজি হন। বারবার হাসপাতালে আনা-নেয়ার ঝামেলা এবং খুব ভোর বেলা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা থাকায় খালেদা জিয়াকে মূলত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে হাসপাতাল এলাকায় ভিড় না করতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি। এতে তার চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যাহত হবে বলেও জানানো হয়। এমনকি মঙ্গলবার খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে ‘অহেতুক’ উপস্থিত হওয়ায় কোনো কোনো নেতাকে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে ভর্ৎসনাও করা হয়।
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চিকিৎসা শুরু হয়। করোনা আক্রান্তের ১৪ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়ার করোনা টেস্ট করা হলে ফলাফল আবারও পজিটিভ আসে। ‘ফিরোজা’র বাসায় বিএনপি চেয়ারপারসন ছাড়াও আরও ৮ জন করোনায় আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে এখনও খালেদা জিয়াসহ চারজন করোনা পজিটিভ, বাকি সবার নেগেটিভ এসেছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More