করোনা টিকা কার্যক্রমে আপ্যায়নে বরাদ্দ ৯০ কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার: করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্ত স্বেচ্ছাসেবকদের আপ্যায়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরকে প্রায় ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার অর্থ বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কোভিড-১৯ প্রতিরোধী ভ্যাকসিন কার্যক্রমে আপ্যায়ন খাতে খরচের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর ওই বরাদ্দ চেয়েছিলো। অর্থ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়, চলতি বাজেটের ব্যয় বরাদ্দ থেকে মোট ৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা এ খাতে দেয়া হচ্ছে। অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফ শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা তহবিল থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনূকুলে আপ্যায়ন ব্যয় কোডে এই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগামীকাল রোববার সারাদেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরুর জন্য ইতোমধ্যে সব জেলায় টিকা পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সারাদেশে সব মিলয়ে ৬ হাজার ৬৯০টি টিম কাজ করবে। প্রতিটি বুথে দুইজন স্বাস্থ্যকর্মী ও চারজন স্বেচ্ছাসেবী থাকবেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, টিকাদান কার্যক্রমে জড়িত স্বেচ্ছাসেবকদের আপ্যায়নের জন্য ওই অর্থ ব্যয় করা হবে। সারাদেশে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও কয়েক হাজার ভলান্টিয়ার কাজ করবেন। তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে আসবেন। তাদের তো খাওয়াতে হবে। এজন্য এই আপ্যায়ন ভাতা। আমরা প্রথম দিকে চাহিদা দিয়েছিলাম। সে সময় অর্থ বিভাগের হয়তো বুঝতে ভুল হয়েছিলো। উনারা মনে করেছিলেন হয়তো স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের জন্য ওই অর্থ। কিন্তু এটা ব্যয় হবে স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য।

অর্থ বিভাগের (বাজেট অনুবিভাগ-১) এর যুগ্মসচিব ড. মোহাস্মদ আবু ইউসুফ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাবের প্রক্ষিতে কেভিড-১৯ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন প্রয়োগ সংশ্লিষ্ট ‘আপ্যায়ন ব্যয়’ বাবদ ৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা চলতি অর্থবছরের অর্থ বিভাগের বাজেটে ‘করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা তহবিল’ থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনূকুলে আপ্যায়ন ব্যয় কোডে বরাদ্দ দিতে সম্মতি দেয়া হলো। এর আগে স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের প্রস্তাবে আপ্যায়ন ব্যয়ের জন্য ৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং প্রচার ও বিজ্ঞাপন ব্যয়ের জন্য ১৪ কোটি ১৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করে। তবে প্রচার ও বিজ্ঞাপন খাতে কোনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে প্রচার ও বিজ্ঞাপনের ব্যয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিজস্ব বাজেট থেকে ব্যয় করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। আপ্যায়ন ব্যয় খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে কিছু শর্তের কথা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। শর্তগুলো হলো আপ্যায়ন ব্যয় খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারি প্রযোজ্য আর্থিক বিধিবিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। অব্যয়িত অর্থ যথাযথভাবে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে দ্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট-২০০৬ এবং দ্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস-২০০৮ অনুসরণসহ যাবতীয় আর্থিক বিধি-বিধান যথাযথভাবে পালন করতে হবে এবং এই অর্থ চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সংশ্লিষ্ট কোডে সমন্বয় করতে হবে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ বরাদ্দের একটি অনুলিপি এসেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরে। তবে এখানে আপ্যায়ন বিল বাবদ শব্দটাকে যেভাবে দেখা হচ্ছে তা সঠিক নয়। এখানে আপ্যায়ন মানে কিন্তু এমন না যে মন্ত্রণালয় বা অধিদফতরের কর্মকর্তাদের খরচ। বিষয়টা যদি এভাবে কেউ ব্যাখ্যা করে তবে ভুল হবে। সারাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য প্রায় ১০ হাজার ৪০০টি টিম গঠন করা হচ্ছে। এতে প্রতিটি টিমে থাকবে ছয়জন করে। এদের মধ্যে দুজন ভ্যাকসিনেটর অর্থাৎ যারা ভ্যাকসিন দিবে। এরা ছাড়াও রেজিস্টার রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য কাজে আরো চারজন থাকবেন। সেই হিসেবে দেখা যায় প্রায় ৬২ হাজার ৪০০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবেন ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য। পরিস্থিতি অনুযায়ী এর কম বেশিও হতে পারে। কিন্তু তাদের জন্য আলাদা কোনো ভাতার ব্যবস্থা নেই। সেক্ষেত্রে তাদের দুপুরের খাওয়া বাবদ ২০০ টাকার মতো বরাদ্দ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ছয় মাস এই স্বেচ্ছাসেবকরা ভ্যাকসিন প্রয়োগের কার্যক্রমে অংশ নেবে। এছাড়াও তাদের প্রশিক্ষণসহ নানা রকমের প্রচারের কাজেও কিন্তু এই অর্থ ব্যয় করা হবে। এর আগে নানাভাবে এগুলো নিয়ে অপপ্রচারের চেষ্টা চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমোদনের পর কিন্তু এ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। ছয় মাস কার্যক্রম শেষে যদি টাকা সাশ্রয় হয় তবে সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবগত করে ফেরত দেয়া হবে সরকারি কোষাগারে।’

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তৈরি ভ্যাকসিন নিতে ভারতীয় উৎপাদক সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত বছরের ৫ নভেম্বর চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে সেরাম ইনস্টিটিউট।

ভ্যাকসিনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর (ডিজিএইচএস) ১ হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করে। এর আগে ভ্যাকসিন কিনতে প্রস্তাবিত খরচের প্রথম ধাপে ৭৩৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় ধাপে ৭১৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।

উল্লেখ্য, ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হয়। পরবর্তীতে ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। এ দুই দিনে দেশে সর্বমোট ৫৬৭ জনকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে সরকার।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More