কালীগঞ্জ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভা হয়েছে ২৮ বছর আগে। নানা নাগরিক সুবিধা বিবেচনায় ইতোমধ্যে প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদাও জুটেছে। শুধু ছিলো না বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ভাগাড়। তাই জমি কিনতে বছর বছর বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু পরে ওই অর্থ ব্যয় হয়ে যায় অন্য খাতে। জনবসতি এলাকায় ময়লার ভাগাড় করায় দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে এলাকাবাসী। তবে এসবের অবসান ঘটেছে পৌর মেয়রের উদ্যোগে। ২১ মাস নিজের ভাতা তোলেননি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ। এভাবে টাকা জমিয়ে তিনি ৮৬ শতক জমি কিনেছেন কালীগঞ্জ পৌরসভার নামে। জমিটা জনবসতি থেকে দূরে হওয়ায় মানুষজনকে আর দুর্গন্ধ সইতে হবে না। অনেকে বলছেন, মেয়র অনুকরণীয় এক কাজ করেছেন। একজন জনপ্রতিনিধির ভাতা’র টাকা জমিয়ে প্রতিষ্ঠানের নামে জমি কেনার কথা তারা আগে কখনও শোনেননি। জানতে চাইলে কালীগঞ্জ পৌরসভার সচিব আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, পৌর মেয়র আশরাফুল আলমের পক্ষ থেকে এটা মহতী একটা উদ্যোগ। তিনি নিজের টাকায় জমি কিনেছেন পৌরসভার নামে। শুধু পৌরসভার রেজুলেশনে লেখা হয়েছে মেয়র জমিটি পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য দান করেছেন। সেখানে ইতোমধ্যে ময়লা ফেলা শুরু হয়েছে। জমিটি কেনা হয়েছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার শহরে বাইরে ঈশ্বরবা এলাকায়।
কালীগঞ্জ পৌরসভার সমাজসেবক ও বাজার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক সদর উদ্দীন মিয়া বলেন, বেশির ভাগ নাগরিক সুবিধা ভালো। তবে বড় সমস্যা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে। ময়লা ফেলার জন্য পৌরসভার নিজস্ব জায়গা ছিলো না। অতীতে কোনো মেয়র এমন উদ্যেগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ইতোপূর্বে পৌরসভার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় বিপাকে পড়তে হয় কর্তৃপক্ষকে। মেয়রের ব্যক্তিগত উদ্যেগকে সাধুবাদ জানান তিনি। আশরাফুল আলম প্রথম মেয়রের পদে বসেন ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। ওই সময়ে তৎকালীন পৌর মেয়র মো. মকছেদ আলী মৃত্যুবরণ করেন। তখন ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব নেন আশরাফুল। এ আগে তিনি প্যানেল মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। পরে ভোট হলে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ পূর্ণাঙ্গ মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন। করোনা মোকাবেলা ও সমাজসেবায় পৌর এলাকায় তার রয়েছেন বেশ সুনাম ।
পৌর কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জকে পৌরসভা ঘোষণা করা হয় ১৯৯২ সালে। এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা পায় ২০১৫ সালে। পৌর এলাকায় রাস্তাঘাট নিয়ে কিছুটা সমস্যা আছে। এর বাইরে বেশিরভাগ নাগরিক সুবিধা ভালো। তবে বড় সমস্যা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে। আশপাশে জনবসতি থাকায় মানুষজনকে দুর্গন্ধ সহ্য করতে হতো। এ কারণে অনেক সময় ময়লা ফেলতে বাধাও এসেছে।
মেয়র আশরাফুল আলম বলেন, তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর দেখলেন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এখন পৌরসভার বড় সমস্যা। তাই শুর থেকেই সমস্যা নিরসনের উপায় নিয়ে ভাবছিলাম। শেষে সিদ্ধান্ত নেন মেয়র হিসেবে যে ভাতা পাবেন, তা নিজে নেবেন না। ওই টাকা জমিয়ে পৌরসভার বর্জ্য ফেলার জন্য জমি কিনবেন। শেষ পর্যন্ত সেটা করতে পারায় ভালো লাগছে।