খোলা তেল মিললেও দেখা নেই বোতলজাত সয়াবিনের

মেহেরপুরে তেলের বাজার অস্থির : মনিটারিং না থাকায় ক্ষুব্ধ ক্রেতা

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরের বাজারগুলোতে কোনোভাবেই কমছে না সয়াবিন তেলের দাম। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তেলের মূল্য। দোকানগুলোতে খোলা তেল পর্যাপ্ত পরিমাণ মিললেও মিলছে না কোম্পানির বোতলজাত সয়াবিন তেল।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম চোখে না পড়লেও জেলা প্রশাসক বলছেন প্রশাসন নজরদারিতে রেখেছেন এবিষয় নিয়ে।
মেহেরপুর ও গাংনী উপজেলা শহরে প্রতি কেজি তেল ২০৫ থেকে ২১০ টাকা মূল্যে কিনতে পারলেও জেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ সে তেল কিনছেন ২১০ থেকে ২২৫ টাকা পর্যন্ত। বাজার মনিটারিং না করার কারণে ক্রেতাদের ঠকিয়ে অধিক মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন খুচরা ও পাইকার ব্যবসায়ীরা। তবে, তেল পাওয়া না পাওয়া নিয়ে ত্রি-মুখী দুষছেন তেল ডিপো, তেলের ডিলার ও খুচরা পাইকার ব্যবসায়ীরা।
মেহেরপুর জেলায় তীর, পুষ্টি, বসুন্ধরা, যমুনা, ফ্রেস, রুপচাঁদাসহ আরো কয়েকটি তেলের ডিলার রয়েছেন। এছাড়া গাংনীর চৌগাছা গ্রামে ও মেহেরপুরে রয়েছে খোলা তেলের কয়েকটি ডিলার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন তেলের ডিলার বলছেন, আমরা লক্ষ লক্ষ টাকা তেলের ডিপোতে টিটি করলেও তারা আমাদের তেল দিচ্ছে না। আমরা কিভাবে খুচরা ও পাইকার ব্যবসায়ীদের কাছে তেল দেবো? তবে, খুচরা ও পাইকার ব্যবসায়ীরা বলছেন গাড়ি গাড়ি তেল মেহেরপুরে এলেও ডিলাররা আমাদের তেল দিচ্ছেন না।
বিগত কিছুদিন ধরে মেহেরপুরের বাজারগুলোতে অল্পবিস্তর বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও গ্রামের অলিগলির দোকানগুলোয় তেলের বেশ স্বল্পতা ছিলো।
মেহেরপুর জেলা শহরের দোকানগুলোর দু-একটি ছাড়া অন্য দোকানগুলোতে ছিলো না সয়াবিন তেল। সরবরাহ আর গুদামে সয়াবিন তেল সংকটের কারণে বাজারে এ স্বল্পতা বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে মেহেরপুরে এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান অভিযান না চলায় প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কার্যক্রম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন সাধারণ নাগরিকরা।
মেহেরপুর বড়বাজার এলাকার মের্সাস মোখলেছুর এন্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মোখলেছুর জামান শাহিন বলেন, আমরা বোতলজাত তেল পাচ্ছি না। কয়েকদিন আগে আমি মাত্র ৬ কার্টন তেল পেয়েছিলাম। সেখানে সরকারি রেট দেয়া আছে ৭৬০ টাকা। আমি কিভাবে বিক্রি করবো। ওই তেল বোতল ভেঙে লুজ করে বিক্রি করলে আমি এক হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবো। তবে তিনি বলেন, শুনেছি তেলের দাম নির্ধারণ করেছেন সরকার। ৫ লিটার তেলের দাম নির্ধারণ করেছে ৯৮০ টাকা। আগের দিনের ৫ লিটার সয়াবিন তেলের ৭৬০ টাকা দাম থাকায় বাজারে তেলের সঙ্কট তৈরী হয়ে আছে। তিনি বলেছেন, কেউ যদি ৯৮০ টাকায় ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল কিনতে চাইলে পাবেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের চুয়াডাঙ্গা অফিসের সহকারী পরিচালক সজল আহমেদ বলেছেন, আমার অধিদফতরের লোকবল কম। আমরা জেলা প্রশাসন থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ধার নিয়ে অভিযান চালিয়ে থাকি। তাছাড়া আমাদের মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে থেকে বাৎসারিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পরিকল্পনা দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে মেহেরপুরে চলতি বছরে নির্ধারিত ৫০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথা থাকলেও জেলাতে ইতোমধ্যে ৪৯টি আদালত পরিচালনা করা হয়ে গেছে। তবে দু একদিনের মধ্যেই জেলাতে মোবাইল কোর্ট করা হতে পারে। তবে তিনি বলেছেন, ইতোমধ্যে ভোক্তা অধিকার অধিদফতর চুয়াডাঙ্গার দর্শনাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে ২ হাজার লিটার তেল জব্দ করে। পরে ওই অসাধু ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হয় এবং জব্দকৃত তেল নির্ধারিত মূল্যে বাজারে বিক্রি করে দেয়া হয়। এছাড়া আলমডাঙ্গাতে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ১ শ লিটার সয়াবিন জব্দ করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেহেরপুর বড় বাজারের একজন খুচরা ও পাইকার মুদি ব্যবসায়ী জানান, বাজারে বেশি দামে বিক্রির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দোকানের গুদামে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল মজুত করে রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় ক্রেতারা অধিক দামে তেল কিনতে হচ্ছে।
গাংনী উপজেলা শহরের বজলুর রহমান নামের এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, ঈদের দুই তিন দিন আগ থেকেই সয়াবিন তেল চাহিদা অনুযায়ী পাচ্ছি না। প্রতিদিন আমার দোকানে কমপক্ষে ২০০-৩০০ লিটার সয়াবিন বিক্রি হয়। ডিলারদের কাছে তেল এলেও তারা চুপিচুপি বেশি দামে বিক্রি করে দেন।
মেহেরপুর শহরের নাজমুল হোসেন ও আরাফাত হোসেন নামের ক্রেতা জানান, ‘মেহেরপুর বড় বাজারের কোনো দোকানে কিছুদিন যাবৎ বোতলজাত সয়াবিন তেল পায়নি। ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় বোতলজাত তেল খুলে বোতল ফেলে দিয়ে লুজ তেল কিনলাম।
জানা গেছে, গত ২০ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লিটারপ্রতি বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬০ টাকা নির্ধারণ করে। তখন পাঁচ লিটার বোতলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৭৬০ টাকা।
তবে বাজারে খোলা তেল ও পাম তেল না থাকার কথা জানিয়ে বিক্রেতারা বলেন, এখনও সংকট কাটেনি খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের। আর বিক্রি হলেও তা সরকারের নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
খোলা সয়াবিন না বিক্রি করার বিষয়ে একজন তেল বিক্রেতা বলেন, সরকার খোলা তেলের যে দাম নির্ধারণ করেছে, তা থেকে অনেক বেশি দামে কিনে আনতে হয়। এ জন্য আমরা খোলা তেল আনছি না।
এদিকে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের উচ্চমূল্যের কারণে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস অবস্থা। উচ্চদামে নাজেহাল ক্রেতারা বলেন, এ তো অসহনীয় দাম। আমরা তো তেল কেনা নিয়ে বেশ চিন্তায় থাকি যে কীভাবে কিনবো। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য এ দাম অনেক বেশি।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান বলেছেন, মেহেরপুর জেলায় রয়েছে ছোট ছোট বাজার। এখানে ব্যবসায়ীরা মজুদ গড়ে তুললে আমরা খবর পাবো। তবে, ব্যবসায়ীদের ওপর নজরদারী করা হচ্ছে সবসময়। এছাড়া বাজার মনিটারিং করা হচ্ছে নিয়মিত।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More