গুলি সহিংসতায় নিহত ৩ : আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়জয়কার

প্রথম ধাপে ইউপি ও ৯ পৌরসভা নির্বাচনে কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট

স্টাফ রিপোর্টার: বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ, গুলি, ধাওয়া-পালটা ধাওয়া, কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের মধ্যদিয়ে সোমবার প্রথম ধাপের স্থগিত ১৬০ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে (ইউপি) ভোটগ্রহণ হয়েছে। এসব ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭০ বছর বয়ীস নারীও রয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। নিহতদের দুজন ভোটগ্রহণ চলাকালে এবং একজন আগের রাতে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে মারা যান। ভোটের সময়ে নিহত দুজনের একজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে, আরেকজন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের গুলিতে মারা যান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কক্সবাজার ছাড়াও সাতক্ষীরা, খুলনা, নোয়াখালী ও বাগেরহাটের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনিয়ম ও সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। এসব ইউপিতে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও ভোটকেন্দ্রের বাইরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নোয়াখালীতে জাল ভোট দেয়ার সময় সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। বাকি ইউনিয়ন পরিষদগুলোয় শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়। নির্বাচন কমিশন বলেছে, প্রার্থীদের আবেগের কারণে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। হতাহতের ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে। কেন্দ্র দখল, জাল ভোট ও সহিংসতার ঘটনায় ৪টি ইউনিয়নের পাঁচটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এগুলো হলো সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কেঁড়াগাছি ইউনিয়নের একটি, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের দুটি, কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়নের একটি এবং খুলনার কয়রার ইউনিয়নের একটি কেন্দ্র।
এছাড়া এদিন ৯ পৌরসভা, দুটি উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও দুটি পৌরসভার একটি করে ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এসব জায়গায় বড় ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। ভোটের আগেই ৪৪টি ইউপি ও তিনটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয় পান। রাত ১০টা পর্যন্ত পাওয়া ভোটের ফলাফলে বাকি ছয়টি পৌরসভার মধ্যে পাঁচটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং একটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। এছাড়া বেশির ভাগ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিজয়ী হন।
কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে ভোটকেন্দ্রে গুলিতে আওয়ামী লীগ নেতাসহ দুজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩৫ জন। নিহতরা হলেন- কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়নের নৌকার এজেন্ট আবদুল হালিম (৩৫) ও মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক আবুল কালাম (৩৮)। জানা গেছে, দুপুর ১২টার দিকে কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের পিলটকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে আবদুল হালিম নিহত হন। অপরদিকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কুতুবজোম ইউনিয়নের কুতুবজোম দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী শেখ কামালের সমর্থকদের গুলিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশারফ হোসেন খোকনের সমর্থক আবুল কালাম নিহত হন। তিনি স্থানীয় পশ্চিমপাড়ার ছোট মিয়ার ছেলে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১০ জন। ঘটনার পর ওই দুটি কেন্দ্র এবং কুতুবজোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কয়েক ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল।
স্থানীয়রা জানান, কুতুবদিয়ার পিলটকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কিছু লোক ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। এটি ঠেকাতে জটলার ভেতর ঢুকে যান হালিম। এ সময় ছিনতাই ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে আহত হন আবদুল হালিমসহ অন্তত ২৫ জন। পরে কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক হালিমকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত হালিম বড়ঘোপ ইউনিয়নের গোলদারপাড়া এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে এবং ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। নির্বাচনে তিনি ৫নং ওয়ার্ডের পিলটকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার এজেন্ট ছিলেন। ওই সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে টেকনাফে ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাময়িকভাবে দুই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হলেও পরে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। কেন্দ্র দুটি হলো- টেকনাফের উনছিপ্রাং ও লম্বাবিল ভোটকেন্দ্র। এ ঘটনায় নির্বাচন কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে উত্তেজিত জনতা। ঘটেছে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও।
মোংলা (বাগেরহাট): চাঁদপাই ইউনিয়নে দুপক্ষের সংঘর্ষে ফাতেমা বেগম (৭০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার রাত ৯টায় চাঁদপাই মোড়ে ইউপি সদস্য ও প্রার্থী মতিয়ার রহমান মোড়ল এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শফিকুল ইসলাম কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় তাদের বিরোধ মেটাতে সেখানে আসেন ফাতেমা বেগম নামে ওই বৃদ্ধা। পরে দুপক্ষের সংঘর্ষে বৃদ্ধা ফাতেমা ও প্রার্থী মতিয়ার মোড়লসহ চারজন আহত হন। তাদের হাসপাতালে নিলে বৃদ্ধা ফাতেমা মারা যান। হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সিরাজুল ইসলাম জানান, তার মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মোংলা থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে।
খুলনা: জেলার কয়েকটি ইউপিতে ভোটগ্রহণকালে ব্যাপক সংঘর্ষ, ভোটকেন্দ্র দখল ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনায় কয়রা সদর ইউনিয়নের ৪নং কয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া একই উপজেলার আমাদী ইউনিয়নের চ-ীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করে সিল মারায় ৩০০ ব্যালট বাতিল করেছে। তবে অপরাপর ইউনিয়নগুলোতে স্বতস্ফূর্তভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টায় খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর মিনাপাড়া এলাকায় দুই ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণে ৫ জন আহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ৭টি ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সাতক্ষীরা: রাতে ব্যালট কেটে বাক্সে ঢুকানোর অভিযোগে স্থগিত করা হয় কলারোয়ার কেড়াগাছি ইউনিয়নের কেড়াগাছি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ। ব্যালট এনে তা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে এবং মেম্বার পদপ্রার্থী ও নারী সদস্য প্রার্থীর অনুকূলে ১৫০০, ৫০০ এবং ৩০০ ভোট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে মনসুর আলি ও ইয়ার আলিসহ কয়েক প্রার্থীর বিরুদ্ধে। তবে ইয়ার আলি তা অস্বীকার করেন। জালালপুর ইউনিয়নে ভোটগ্রহণকালে কেন্দ্রের বাইরে দুটি বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এছাড়া কয়েকটি কেন্দ্রে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ফেনী: নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুুলিশ সাবের পাইলট হাইস্কুল কেন্দ্র থেকে কাউন্সিল প্রার্থী শেখ মামুনের স্ত্রী ফারজানা আক্তার, এনায়েত উল্যা মহিলা কলেজ কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খোকনের ভাগ্নি জামাতা কামরুল হাসান ও মঙ্গলকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার হোমা মিয়াসহ ১২ জনকে আটক করেছে।
শরণখোলা (বাগেরহাট): উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের ১নং উত্তর রাজাপুর ও ৯নং ঝিলবুনিয়া ওয়ার্ডে মেম্বার প্রার্থীদের সমর্থকদের পৃথক সংঘর্ষে ২৭ জন আহত হয়েছেন। তাদের শরণখোলা উপজেলা হাসপাতাল ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে রয়েছেন নাজমা বেগম, সালমা বেগম, ফাহিমা বেগম, শাহজাহান হাওলাদার, রেজাউল খান, নাইম তালুকদার, সেলিম সর্দার, বাদশা।
নোয়াখালী ও হাতিয়া: হাতিয়ার চরঈশ্বর ইউনিয়ন ও জাহাজমারা ইউনিয়নে দুটি কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার সময় চার সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও ২ পোলিং অফিসারকে আটক করেছে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হোসেন চৌধুরী ও হাফিজুল হক। এদিকে কবিরহাট পৌরসভা নির্বাচনে নির্বাচনী ফলাফল না মেনে প্রিসাইডিং অফিসারের টেবিল থেকে প্রিন্ট করা নির্বাচনী ফলাফলের শিট ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টার ঘটনায় ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More