তরুণীর ছবিতে ‘হা-হা’ রিয়েক্টের জেরেই খুন ৩ তরুণ

স্টাফ রিপোর্টার: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের সূত্রে পরিচয় হয় মারিয়ার (২২) সঙ্গে নাঈমের (১৮)। কিছুদিন আগে মারিয়া ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করলে নাঈম এতে হা-হা রিয়েক্ট দেয়। এ নিয়ে ফেসবুক ও ইমোতে তাদের নানা উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এর পর মারিয়ার ছবি ব্যবহার করে নাঈম ‘টিকটক ভিডিও’ বানিয়ে তার কাছে পাঠিয়ে দেয়। এ নিয়ে তাদের মাঝে চলে চরম উত্তেজনা। এ ঘটনায় মারিয়া ও তার স্বামী ক্ষুব্দ হয়ে নাঈমকে দেখে নেয়ার হুমকি দিলে সে তার অবস্থান জানান দিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। পরে দলবল নিয়ে মারিয়া ও তার স্বামী গত শনিবার রাত ১১টার দিকে কাপাসিয়ার আড়ালবাজারের পূর্ব পাশে দক্ষিণগাঁও চরপাড়া গ্রামে এসে হামলা চালায়। এতে নাঈমসহ তিনজন নিহত হন। এ সময় আরও ছয়জন আহত হন। পরে স্থানীয়রা ছয়জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি ফেসবুকে ছবিতে হা-হা রিয়েক্টের জেরেই উপজেলার সনমানিয়া ইউনিয়নের চরআলীনগর গ্রামের মারিয়া ও তার স্বামী জাহিদের সঙ্গে নাঈমের বিরোধ দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে নাঈম টিকটকে মারিয়ার ছবি ব্যবহার করলে সে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এর আগে শনিবার রাতে এ নিয়ে ইমোতে কথা কাটাকাটি হলে মারিয়া ও তার স্বামী পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার দৌলতপুর এলাকার ৮-১০ জন যুবককে নিয়ে দক্ষিণগাঁও গ্রামে আলম আহমেদের মসজিদের সামনে এসে নাঈম ও অন্যদের ওপর হামলা চালায়। তাদের ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে উভয় পক্ষের অন্তত নয়জন গুরুতর আহত হয়।

মুম‚র্ষু অবস্থায় আহতদের কয়েকজনকে উদ্ধার করে মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক নাঈম হোসেন (১৮) ও ফারুক হোসেনকে (২৬) মৃত ঘোষণা করেন এবং অন্যদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। নিহত নাঈম হোসেন দক্ষিণগাঁও চড়পাড়া এলাকার মৃত আলম হোসেনের এবং ফারুক হোসেন একই গ্রামের আলম হোসেনের ছেলে।

পরে রোববার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুরুতর আহত রবিনের (১৬) মৃত্যু হয়। সে দক্ষিণগাঁও চড়পাড়া গ্রামের হিরণ মিয়ার ছেলে। আহতরা হলো দক্ষিণ গাঁও গ্রামের নয়ন সরকারের ছেলে রাব্বি (১৪), মির্জা নগর গ্রামের ইসমাইলের ছেলে হৃদয় (১৪), মাইনউদ্দিনের ছেলে ইমরান (১৪), মামুর্দি গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে ফাহিম ও চর আলী নগর গ্রামের জাহিদ হোসেন (২৮) ও মনোহরদীর কোচেরচর গ্রামের হারুনের ছেলে ইয়াছিন (১৬)। এ ঘটনায় দক্ষিণগাঁও গ্রামের ব্যবসায়ী আবিদ হাসান ও স্থানীয়রা সাংবাদিকদের কাছে মারিয়া ও তার স্বামী জাহিদকে রাতের বেলাই আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন বলে দাবি করলেও কাপাসিয়া থানার ওসি চারজনকে আটক করেছেন বলে জানান। মারিয়া ও তার স্বামী জাহিদ তাদের হেফাজতে নেই বলে তিনি দাবি করেন। বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত খবরে ‘মারিয়া ও তার স্বামী পলাতক রয়েছে’ মর্মে সংবাদ দেখে এলাকাবাসী ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

কাপাসিয়া থানার ওসি এএফএম নাসিম জানান, পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মনোহরদীর কোচেরচর এলাকার মোস্তফার ছেলে বেলায়েত (২৩), সিরাজুল ইসলামের ছেলে শাহেদ (২২) ও দৌলতপুরের রফিক মিয়ার ছেলে ফয়সালসহ চারজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় ফারুক হোসেনের বাবা আলম হোসেন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More