দিনভর তল্লাশি চালিয়েও মিললো না লাশের খণ্ডিতাংশ

শিশু আয়াত হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি কাটার উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার: চট্টগ্রামে পাঁচ বছরের শিশু আয়াতের লাশের অপেক্ষায় তার পরিবার। হত্যা নিশ্চিত হলেও তাদের ধারণা, আসামি আবীর আলী লাশ গুম করে রেখেছে। তাই আবীরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে। গতকাল রোববার আবীরকে আবারও ঘটনাস্থলে নিয়ে যায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দিনভর খুঁজেও মেলেনি আয়াতের মরদেহের খ-িতাংশ। তবে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত একটি কাটার উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের বিশেষ পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা।

তিনি জানান, আবীরই আয়াতকে হত্যা করেছে এ বিষয়ে নিশ্চিত তারা। মূলত সিসিটিভির ফুটেজ ও তার মায়ের বাসায় রক্তের একটি প্রবাহের চিহ্ন পাওয়া গেছে; যেটি আয়াতের লাশের। এছাড়া তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী শিশু আয়াতের জুতো উদ্ধার করা হয়েছে। এখন আয়াতের মরদেহের খ-িতাংশ উদ্ধারের চেষ্টা করছে পুলিশ।

শিশু আয়াতের দাদা মঞ্জুর হোসেন বলেন, আবীর সত্য কথা বলছে না। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে। আমাদের ধারণা, ওর মা ও বোনও এ ঘটনা জানে। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। আয়াতের বাবা সোহেল রানারও একই দাবি।

গত ১৫ নভেম্বর পাঁচ বছরের শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজ হওয়ার পর ইপিজেড থানায় জিডি করে তার পরিবার। তার দাদা পিবিআইর কাছে আবেদন করেন নাতনির সন্ধান চেয়ে। পরে পিবিআই তদন্তে নেমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবীরকে আটক করে। গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকা-ের কথা স্বীকার করে আবীর। এ ঘটনায় আয়াতের বাবা সোহেল রানা বাদী হয়ে ইপিজেড থানায় মামলা করেছেন।

এদিকে আয়াত, বর্ষাসহ সকল শিশু হত্যার দ্রুত বিচার এবং শিশুদের নিরাপত্তার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শিশু কিশোর সংগঠন ‘শিশু কিশোর মেলা’। রোববার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধনে শিশু বর্ষার পরিবার, এলাকাবাসী ও নারী অধিকার কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সংগঠন ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে এতে অংশ নেয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ বক্তারা নগরীতে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

শিশু কিশোর মেলা চট্টগ্রামের সংগঠক পুষ্পিতা নাথের সভাপতিত্বে ও আবদুল আল জাওয়াদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্দ্রানী ভট্টাচার্য্য সোমা, নারী যোগাযোগ কেন্দ্রের আহ্বায়ক সালমা জাহান মিলি, সদস্য লেখিকা মহুয়া ভট্টাচার্য্য, অভিভাবক সোলায়মান খান, বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদের সদস্য সচিব প্রকৌশলী সিঞ্চন ভৌমিক, ধর্ষিত ও নিহত শিশু বর্ষার বড়বোন সালেহা আক্তার রুবি, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংগঠক সানজিদা তারিন, শিশু কিশোর মেলার সংগঠক লাবনী আক্তার শ্রাবণী বিশ্বাস, অর্পিতা নাথ প্রমুখ।

সভায় বক্তারা বলেন, ‘মাত্র পাঁচ বছর বয়সী কোমলমতি শিশু আয়াতকে অপহরণ, হত্যা এবং লাশ গুমের জন্য মধ্যযুগীয় কায়দায় ছয় টুকরো ও প্যাকেট ভরে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার নৃশংস ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত। শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রবল শংকিত। আমরা কোন সমাজে বাস করছি? ঘরে-বাইরে শিশু ও নারী কোথাও এক মুহূর্ত নিরাপদ নয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্র ও সরকারের। অথচ শিশু ও নারী অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যা অব্যাহত গতিতে বাড়ছে।’

তারা বলেন, এখন যুক্ত হয়েছে নৃশংস কায়দায় হত্যা। বিচারহীনতা, মাদক, পর্নোগ্রাফি, নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে এ ধরণের ঘটনা বাড়ছে। আমরা রাষ্ট্র, সরকারের কাছে দাবি জানাই, এগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি শিশু নারী হত্যা ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সমাজের সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।’

তারা আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রে আইনের শাসনের অনুপস্থিতি ও বিচারহীনতার ফলে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে, যার ফলে সবচেয়ে বেশি আক্রমণ নেমে আসছে শিশু ও নারীদের উপর। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মাদক, জুয়া, পর্নোগ্রাফি, অশ্লীলতা-অপসংস্কৃতি প্রসার তরুণ যুবকদের চরিত্র-মনুষ্যত্ব ধসিয়ে দিয়ে পশুতে পরিণত করছে। রেডিও-টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। ফলে পাঁচ বছরের শিশুকন্যা হতে ৭০ বছরের বৃদ্ধা কেউ আর নরপশুদের হাতে নিরাপদ নেই।’

সমাবেশে গত অক্টোবরে জামালখানে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হওয়া সাতবছরের শিশু বর্ষার বড় বোন সালেহা আক্তার রুবি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বর্ষাকে হারানোর শোকে আমাদের পরিবার এখনও স্তব্ধ। তাই বুঝতে পারি, আয়াতের মা-বাবার কী মানসিক অবস্থা হতে পারে। আমরা বর্ষা, আয়াতসহ সকল হত্যার দ্রুত বিচার চাই, যাতে আর কোনো শিশুকে এভাবে হারাতে না হয়।’

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More