পদযাত্রা বনাম শোভাযাত্রায় একজন নিহত আহত ৫ শতাধিক

পৃথক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আ.লীগ-বিএনপি : পুলিশ-নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ-গুলি

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীসহ সারাদেশে বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে। অন্যদিকে এ কর্মসূচির বিপরীতে আওয়ামী লীগ রাজধানীসহ সারা দেশে ‘শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করেছে। দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বগুড়া, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, খাগড়াছড়ি, কিশোরগঞ্জ ও জয়পুরহাটে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বিএনপির অন্তত পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে পুলিশের অনেক সদস্য ও আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। লক্ষ্মীপুরে বিএনপি, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে সজীব নামে এক যুবদল নেতা নিহত হয়েছেন। বগুড়ায় বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় ফাঁকা গুলি, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে পুলিশ। টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে।

রাজধানীর মিরপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গাবতলী থেকে শুরু হওয়া বিএনপির পদযাত্রার একটি অংশ মিরপুর বাঙলা কলেজ এলাকা অতিক্রম করার সময় ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত হন। সংঘর্ষকালে একটি মোটরসাইকেল ও একটি বাইসাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাবতলী থেকে বিএনপির পদযাত্রা গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মিরপুর বাঙলা কলেজের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। পদযাত্রার একটি অংশ বাঙলা কলেজ এলাকা অতিক্রম করার সময় ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মিছিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিরোধের চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে কলেজের গেটে থাকা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এই সংঘর্ষের পরও পদযাত্রাটি থামেনি, সামনে এগিয়ে যায়। নেতাকর্মীদের লাঠিতে জাতীয় পতাকা ঝুলিয়ে মিছিল করে যেতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মো. জসিম উদ্দীন মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, বাঙলা কলেজ খোলা ছিলো। বিএনপির মিছিলটি কলেজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা ঢিল ছুঁড়লে একটু উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তবে কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।

লক্ষ্মীপুর: বিএনপির পদযাত্রা চলাকালে শহরের সামাদ মোড়ে আওয়ামী লীগের লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় সজীব (২৫) নামে যুবদলের ওই কর্মীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। প্রাণে বাঁচতে তিনি কলেজ সড়কের মদিনউল্যা হাউজিংয়ের পাশের ফিরোজা টাওয়ার নামে একটি ভবনের নিচে আশ্রয় নেন। সেখানে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। নিহত সজীবের বাড়ি সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ এলাকায়। তার মৃতদেহ সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে।

এদিকে জেলা শহরের ঝুমুর সিনেমা হল এলাকা, রামগতি সড়কের আধুনিক হাসপাতাল, মটকা মসজিদ এলাকায় আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে অন্তত ২০০ জনের বেশি লোক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।

মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে জেলা শহরের ঝুমুর সিনেমা হল এবং রামগতি সড়কের আধুনিক হাসপাতালের সামনে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয়। বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। অন্যদিকে পুলিশও টিয়ারশেল এবং রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কর্মীরা যোগ দিলে সংঘর্ষটি ত্রিমুখী সংঘর্ষে রূপ নেয়। ঝুমুর সিনেমা হল এলাকা এবং রামগতি সড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আহতদের অনেকের গায়ে গুলি লেগেছে। ঘটনার পর থেকে শহরজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাসিবুর রহমান বলেন, নিহত সজীব যুবদলের কর্মী। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এছাড়া পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলায় আমাদের দেড় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে।

পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, কীভাবে সজীবের মৃত্যু হয়েছে, আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। এখনই এ বিষয়ে বলতে পারবো না। বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের পদযাত্রা থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশ আত্মরক্ষা ও জানমাল রক্ষায় টিয়ারশেল এবং রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় পুলিশের ২৫-৩০ জন আহত হয়েছে।

জয়পুরহাট: মঙ্গলবার বিকেলে জয়পুরহাট শহরের রেল গেইট এলাকায় বিএনপির পদযাত্রা ও আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা শেষে উভয় দলের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছে। আহতদের জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করা রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল ৪টার দিকে জয়পুরহাট শহরের রেল গেইটের পূর্ব পাশে জেলা আওয়ামী লীগ অফিস হতে নেতাকর্মীরা শোভাযাত্রা বের করে। শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে দলীয় কার্যালয়ে ফিরছিলো নেতাকর্মীরা। ঠিক একই সময় শহরের নতুন হাট এলাকা হতে বিএনপি ও অংগসংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসের পশ্চিম পাশে বিএনপি অফিসে ফিরছিলো। এ সময় রেল গেইট এলাকায় উভয় দলের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে আওয়ামী লীগের ১৫ জন ও বিএনপির ২৫জনসহ মোট ৪০জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের আসবাবপত্র। এদের মধ্যে ছাত্রলীগের সিফাত নামে একজনকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। শহরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বগুড়া: বগুড়ায় বিএনপির পদযাত্রায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষ ঠেকাতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে শহরের ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় পুলিশসহ অনেক বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। দুপুর আড়াইটায় শহরের নবাববাড়ী সড়কে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আরেক দফা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল হামলা চালায় বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ও ফাঁকাগুলি ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। বিএনপি নেতারা পুলিশ ফাঁড়িতে ভাঙচুর চালায়। এ সময় একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।

বগুড়ায় বিএনপির পদযাত্রা থেকে বিনা উস্কানিতে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। অন্যদিকে নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির। পুলিশের দাবি, তাদের ১০ জন সদস্য বিএনপির হামলায় আহত হয়েছে। পুলিশের ছররা গুলিতে অন্ততঃ ২৫ জন বিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন বলে দাবি বিএনপি নেতাদের।

জানা গেছে, বগুড়ার বনানী এলাকা থেকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনার নেতৃত্বে পদযাত্রাটি শহরের দিকে আসে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পদযাত্রাটি শহরের ইয়াকুবিয়ার মোড়ে পৌঁছালে পেছনে থাকা নেতাকর্মীরা সাতমাথার দিকে যেতে চায়। এতে পুলিশ বাধা দিলে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল এবং হাতে থাকা লাঠি নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশ পরিদর্শক তারিকুল ইসলামসহ ১০ জন আহত হন। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে পুলিশ রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জ করে বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।

টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাদের স্থানীয় মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নেয়া হয়। ধোঁয়ার গন্ধে অনেক শিক্ষার্থী বমি করা শুরু করে। বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার শফিক আমিন কাজল জানান, অনেক শিক্ষার্থী হাসপাতালে এসেছিল। অনেককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু ২৭জন ছাত্রী বেশী অসুস্থ হওয়ায় তাদের সন্ধ্যা পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়। তিনি আরো জানান, স্কুলের পাশের রাস্তায় টিয়ারশেল নিক্ষেপের কারণে শিক্ষার্থীরা ধোঁয়ায় বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা ধোঁয়ার কারণে ভয় পেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা অবস্থায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী স্নেহা আক্তার বলেছিল, দুপুরে ক্লাস করছিলাম। হঠাৎ অনেক জোরে জোরে শব্দ হতে থাকে। এরপর ক্লাসের ভেতর ধোঁয়ায় ভরে যায়। তখন চোখ জ্বালা করছিল, নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। পরে ম্যাডাম এসে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফিয়ার মা খাদিজা বেগম জানান, বিদ্যালয় থেকে খবর পেয়ে হাসপাতালে আসি। মেয়ে টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে স্যালাইন দিয়ে রেখেছিলেন চিকিৎসকরা। পরে সুস্থ হলে বাড়ি আনা হয়েছে।

খবর পেয়ে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দেখতে হাসপাতালে যান জেলা বিএনপি সভাপতি রেজাউল করিম বাদশাসহ অন্য নেতাকর্মীরা। পরবর্তীতে বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু শিক্ষার্থীদের দেখতে যান।

ফেনী: বিএনপির পদযাত্রায় পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশ, বিএনপির নেতাকর্মীসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন। গতকাল বিকালে ফেনী শহরের শহীদ কায়সার সড়কের ইসলামপুর রোডের মাথায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার ও সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলালের নেতৃত্বে অন্তত ২০ হাজার নেতাকর্মী শহরের ট্রাংক রোড়স্থ দাউদপুর ব্রিজ সংলগ্ন স্থান থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। পদযাত্রাটি ট্রাংক রোড প্রদক্ষিণ করে ইসলামপুর রোডের মাথায় পৌঁছুলে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এ সময় পুলিশের ওপর বিএনপির নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ অন্তত ২০-৩০ রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। এ সময় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৬ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ ও পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে বলে বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল জানান। তবে এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত আহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, পদযাত্রা নিয়ে ইসলামপুর এলাকায় যাওয়ার পর হঠাৎ আমাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় নেতাকর্মীরাও ক্ষেপে ওঠে। সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এতে অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হন।

ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ নিরাপত্তার জন্য ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় আমাদের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ শহরে একটি শান্তি মিছিল বের করে।

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ি জেলা শহরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছে। সংঘর্ষে তিন পুলিশসহ উভয়পক্ষের অন্তত একশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইট পাটকেল নিক্ষেপ, লাটিসোটা নিয়ে হামলা পাল্টা হামলায় সমগ্র এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় শহরের পৌরসভা কার্যালয় চত্ত্বর, শাপলা চত্ত্বর আদালত সড়ক এলাকায় বেশ কিছু মোটর সাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আওয়ামী লীগের উন্নয়ন শোভাযাত্রা ও শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচির প্রস্তুতির সময় সকালে খাগড়াছড়ি পৌরসভা চত্তর ও জেলা বিএনপির অফিস সম্মুখে উভয় দলের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, জেলা আওয়ামী লীগ পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতিকালে বিএনপি পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে বানচাল করতে এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। তিনি বিএনপির এই পরিকল্পিত হামলার জন্য পুলিশেরা নিষ্ক্রিয় ভূমিকাকে দায়ী করেছেন।

খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমএন আবছার অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা পদযাত্রায় অংশ নিতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জমায়েত হওয়ার আগে আওয়ামী লীগ বিনা উস্কানিতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের মারধর করেছে । এতে বিএনপির ৫০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে।

জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কেএম ইসমাইল হোসেন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা চালিয়ে অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মীকে আহত করেছে।

প্রায় দুইঘণ্টাব্যাপী এই তান্ডব চলাকালে পুরো শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট ও বিপনী বিতানগুলো বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর বারোটা নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন জেলা শহরে বিজিবি মোতায়েন করলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকে। আহতদের অনেককে সদর আধুনিক হাসপাতালে ও বেসরকারি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে ও গুরুতর আহতদের ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে আওয়ামী লীগের শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রায় বিএনপি হামলা চালিয়ে অর্ধশত নেতাকর্মীকে আহত করায় ও পৌরসভাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগ। কলেজ রোড দলীয় কার্যালয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে হামলায় জড়িত বিএনপি নেতাকর্মীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতারা।

কিশোরগঞ্জ: পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের সময় বিএনপির সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা শহরের রথখলা ও সংলগ্ন এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে বিএনপিসূত্র দাবি করে।

পদযাত্রা কর্মসূচি পালনে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রথমে গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠে জড়ো হয়। পরে তারা পদযাত্রা শুরু করে। নেতাকর্মীরা পিটিআই সড়ক, আখড়া বাজার পার হয়ে রথখলা এলাকায় আসার পর পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি শুরু হয় এবং কিছুসংখ্যক নেতা-কর্মী পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য প্রথমে লাঠিচার্জ করে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় পুলিশের দিকে ব্যাপক ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। আধাঘন্টাব্যাপী শহরের রথখলা থেকে আখড়া বাজার এলাকা পর্যন্ত এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।

জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম সাংবাদিকদের জানান, বিএনপির শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশ বিনা উস্কানিতে পুলিশ হামলা করেছে। এ সময় পুলিশের রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জে গুলিবিদ্ধসহ তাদের শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন। কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মুস্তাক সরকার জানান, গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠ থেকে রথখলা ময়দান পর্যন্ত বিএনপির পূর্বনির্দ্ধারিত পদযাত্রা কর্মসূচি ছিলো। পদযাত্রার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুলিশ কোনো বাধা দেয়নি। কিন্তু মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ করতে চাইলে যানজট সৃষ্টির আশঙ্কায় বাধা দেয়া হলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়।

রাজবাড়ী: বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে দলটির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারী দলটির নেতাকর্মীরা জানান, গতকাল সকাল থেকেই রাজবাড়ী শহরের আজাদী ময়দান এলাকায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ে অবস্থান নেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী বাবু, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কামরুল আলম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ সহ নেতাকর্মীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম গ্রুপের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে জেলা বিএনপি’র দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে যায়। এ সময় আগে থেকেই জেলা বিএনপির কার্যালয়ে অবস্থান নেয়া লিয়াকত আলী বাবুসহ ওই গ্রুপের নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপির কার্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় দুই গ্রুপের মধ্যে প্রথমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল ছোঁড়াছুড়ি হয়। এ সময় দু’পক্ষই দলীয় কার্যালয়ের চেয়ার-টেবিল, দরজা-জানালা ও ৫-৬টি মোটরসাইকেল ভাঙচুরসহ প্রায় ২৫ জনকে নেতাকর্মীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এতে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি পন্ড হয়ে যায়।

খুলনা অফিস: খুলনায় তারুণ্যের সমাবেশে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে যুবদল-ছাত্রদলের ১৪জন নেতার নাম উল্লেখসহ বিএনপির অজ্ঞাত আরো ৭০-৮০জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় খুলনা সদর থানার সহকারী পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম এ মামলা দায়ের করেন।

ময়মনসিংহ: বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি চলাকালে অতিরিক্ত গরমে হিটস্ট্রোকে দক্ষিণ জেলা যুবদলের সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক রুহুল আমীন সরকার (৪০) মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি সদর উপজেলার পরাণগঞ্জ ইউনিয়ন পনিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছিলেন। ময়মনসিংহ নগরীর চরপাপড়া এলাকায় পদযাত্রা কর্মসূচি চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে প্রচন্ড গরমে পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নেয়া অসংখ্য নেতাকর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তাদেরকে পানি ঢেলে ও বাতাস করে সুস্থ করতে দেখা গেছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More