বাতিল হচ্ছে পিইসি পরীক্ষা : বাতিল হতে পারে ইইসি জেএসসি ও জেডিসিও

স্টাফ রিপোর্টার: এবারের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষাও হচ্ছে না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই পরীক্ষা বাতিলের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের ‘বাড়ির কাজ’ দিয়ে মূল্যায়নের মাধ্যমে নতুন শ্রেণিতে তুলে দেওয়া হবে। কাউকে অটোপাশ দেওয়া হবে না। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সম্মতির পর এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা হবে। এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, পিইসির মতো ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী (ইইসি) পরীক্ষাও না নেয়ার চিন্তা চলছে। ইতোমধ্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, এবারের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষাও হবে না। একই রকম সিদ্ধান্ত হতে পারে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ব্যাপারে। এ দুটিই অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা। করোনা পরিস্থিতির কারণে উল্লিখিত চার পরীক্ষা গত বছরও নেয়া যায়নি। তবে গত বছর এ ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল আগস্টের প্রথম সপ্তাহে। এবার আগেভাগেই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। পিইসি ও ইইসি পরীক্ষার ভিত্তিতে পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মেধাবৃত্তি দেয়া হয়ে থাকে। আর জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে নবম-দশম শ্রেণিতে মেধাবৃত্তি ভোগ করে ছাত্রছাত্রীরা। এই চারটি পরীক্ষায় প্রতিবছর প্রায় ৫৫ লাখ শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে থাকে। গত বছর পরীক্ষা না নেয়ায় কাউকেই মেধাবৃত্তিও দেয়া হয়নি। গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সবকিছু বন্ধ আছে। যদিও আমরা বিকল্প পদ্ধতিতে পাঠদান করে যাচ্ছি। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের একদিনের জন্যও সরাসরি ক্লাসে আনতে পারিনি। তাই এবারের পিইসি পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা আমাদের নেই। এ ব্যাপারে শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ পাঠানো হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরীক্ষা না নেওয়া হলেও ছাত্রছাত্রীদের শিখন ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আগে থেকেই টেলিভিশন ও বেতারে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরে গুগলমিটের মাধ্যমে শিক্ষকদের ক্লাস নিতে বলা হয়েছে। ঘাটতি পূরণের পদক্ষেপে সর্বশেষ যুক্ত করা হয় ‘বাড়ির কাজ’। এ লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে ‘অন্তরবর্তীকালীন পাঠপরিকল্পনা’। তাতে বিষয়ভিত্তিক বাড়ির কাজ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা হিসাব করে শিক্ষকরা তা ফটোকপি করবেন। এরপর সপ্তাহে একদিন শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়ে তা বুঝিয়ে দিয়ে আসবেন। শিক্ষার্থী অভিভাবকের সহায়তায় বাড়ির কাজ করে রাখবে। পরের সপ্তাহে গিয়ে তা সংগ্রহের পাশাপাশি নতুন কাজ দিয়ে আসবেন। দ্বিতীয় সপ্তাহে গিয়ে সেটা সংগ্রহ করে আবার তৃতীয় বাড়ির কাজ দিয়ে আসবেন। এই পাঠ পরিকল্পনাটি তৈরি করেছে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ)।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম জানান, এখন পিইসি পরীক্ষার্থীদের বাড়ির কাজের মাধ্যমে মূল্যায়ন কাজ চলবে। তাদের ক্লাসে আনা সম্ভব হলেও বার্ষিক পাঠপরিকল্পনার আলোকে পড়ানো হবে। এই প্রক্রিয়ায় তাদেরকে মূল্যায়নের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। কেউ অটোপাশ পাবে না।
ইইসি পরীক্ষা : পিইসির মতো ইইসি পরীক্ষাও নিয়ে থাকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ইইসি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিচালিত একটি খাত। এ ব্যাপারেও তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি তারা পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত জানায়, তাহলে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, যেহেতু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই পরীক্ষাটি নিয়ে থাকে, তাই তারা এ ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেবে তাতেই সম্মতি দেব। তবে পিইসি যদি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত তারা নিয়ে থাকে, তাহলে ইইসির ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা শেষে জানানো যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জেএসসি-জেডিসি : শিক্ষার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ২৬ মে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ বছরের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি বলে সেদিন জানান তিনি। পাশাপাশি এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা নেওয়ার পরিস্থিতি হলে নেওয়া হবে। আর না হয় অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে। অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা যায় কি না, সেটা দেখা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নভেম্বরে নেওয়া হয়। অন্য বছর এই সময়ে রেজিস্ট্রেশন, ফর্ম পূরণসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করা হয়। শুরু হয় প্রশ্নপত্র তৈরি ও মুদ্রণকাজ। এ বছর এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা এখনো পাওয়া যায়নি। এতে বলা যায়, পরীক্ষাটি এবার নাও হতে পারে। এ নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি বলতে কেবল রেজিস্ট্রেশন করে রাখা হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More