বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যায় ২০ আসামির মৃত্যুদ- : ৫ জনের যাবজ্জীবন

নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি : বিচারক; আপিল করবে আসামিপক্ষ
স্টাফ রিপোর্টার: বহুল আলোচিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ আসামিকে ফাঁসি ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায় দিয়েছেন আদালত। গতকাল দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। আসামিদের সবাই বুয়েটের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের কর্মী। তাদের মধ্যে ২২ জনের উপস্থিতিতে আদালত এই রায় ঘোষণা করেন। বাকি তিনজন মামলার শুরু থেকেই পলাতক। বিচারক বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একে অপরের সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদ রাব্বির বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। যা বাংলাদেশের সকল মানুষকে ব্যথিত করেছে। নৃশংস হত্যাকা-ের মতো এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনো না ঘটে তা রোধকল্পে এ ট্রাইব্যুনালে সকল আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত হলো। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ২০ আসামি হলেন- বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু (মেকানিক্যাল ইঞ্জনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), সদস্য মোজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুর রহমান মাজেদ (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), এস এম নাজমুস সাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোসের্স, ১৬তম ব্যাচ), শামছুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল) এবং এসএম মাহামুদ সেতু (কেমিকৌশল)।
যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামি হলেন- বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ), আইন বিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), সদস্য আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) ও মোয়াজ আবু হোরায়রা (সিএসই, ১৭ ব্যাচ)। পলাতক ৩ জন হলেন- এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল জিসান এবং মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল)। দুই বছর আগে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে এ হত্যাকান্ডের পরদিন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় মামলা করেন। মামলার রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এই রায়ে তিনি সন্তুষ্ট। এখন দ্রুত এই রায় কার্যকর হবে, এটাই তার প্রত্যাশা। অন্যদিকে আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট না। আমরা উচ্চ আদালতে যাব। মাস্টারমাইন্ড ও বড় ভাইদের নাম জাজমেন্টে আসা উচিত ছিলো।’ এর আগে আলোচিত এ মামলার রায় ঘিরে আদালতপাড়ায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। জোরদার করা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি। আদালতপাড়ার প্রধান ফটক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেন তারা। সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২২ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালতে পুলিশের নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়। রায়ে আবরারের পরিবার, রাষ্ট্রপক্ষ ও বুয়েটের পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এ রায়ে সন্তুষ্ট নন আসামিপক্ষ। তারা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
রায় ঘোষণার আগে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে আসামিদের এজলাসের ডকে (আসামি রাখার নির্ধারিত স্থান) তোলা হয়। এরপর সকাল ১১টা ৫৭ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাসে প্রবেশ করেন। এরপর শুরু হয় রায় পাঠ। দুপুর ১২টা ১৪ মিনিটের দিকে সংক্ষিপ্ত এ রায় পাঠ শেষ হয়। রায় ঘোষণার পর আদালতে উপস্থিত ২২ আসামিকে এক রকম স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল। তাদের কাউকেই তেমন বিচলিত হতে দেখা যায়নি। আসামিদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। আর পলাতক তিনজনের বিরুদ্ধে রায়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। নিঃসন্দেহে সব আসামি পরস্পর যোগসাজশে শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদ রাব্বীর বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। ভারতীয় হাইকোর্টের এক রায় উল্লেখ করে বিচারক আসামিদের এমন ক্রিমিনাল কর্মকা-কে ‘দানবীয়’ বলে উল্লেখ করেন। পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বী হত্যা বাংলাদেশের সব মানুষকে ব্যথিত করেছে। এমন নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনো না ঘটে, তা রোধকল্পে এই ট্রাইব্যুনাল সব আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
আদালতে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন-স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মো. মোশাররফ হোসেন কাজল, মো. আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা, মো. আব্দুস সোবহান তরফদার (বাদীপক্ষের নিয়োজিত আইনজীবী), মো. মিজানুর রহমান খান, মো. শহিদুল ইসলাম, মো. আলমগীর হোসেন, মো. মশিউর রহমান, প্রশান্ত কুমার কর্মকার ও নাছিমা বেগম। তারা রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। রায় ঘোষণার পর মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে নিহতের পরিবারের পাশাপাশি দেশবাসী তাদের কাঙ্ক্ষিত ন্যায়বিচার পেয়েছে। এ রায় সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের জঘন্য কাজ করতে অপরাধীরা নিরুৎসাহিত হবে।
আবরার হত্যা মামলার রায়ে বুয়েটের পক্ষ থেকেও সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার মামলার রায় দ্রুত কার্যকর হওয়ার আশা প্রকাশ করেন। নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার দ্রুত, সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রভাব না থাকলে আরও স্বল্প সময়ে হতো। বিচারকরা সঠিকভাবে বিচার করেছেন। তাদের প্রজ্ঞা ও আইন অনুযায়ী বিচার করেছেন। তাদের ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে আমাদের শিক্ষার্থীদের এটাই মনে রাখতে হবে। যদি কেউ এ ধরনের কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত হয়, তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি ভোগ করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের দায় আছে কিনা সেটা বিচার বিভাগই দেখবে। তিনি আরও বলেন, আবরারের পরিবারের পক্ষ থেকে যেটুকু চাওয়া হয়েছে তা আমরা দিয়েছি। মাসিক সাহায্য করছি। প্রতি মাসে পঁচাত্তর হাজার টাকা দিচ্ছি। ওনারা আর্থিকভাবে সংকটে পড়েছেন। এজন্য আমি ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পাওয়ার পর জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে প্রতি মাসে ৭৫ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া আইনি সহায়তা ও আইনজ্ঞের ফি, সাক্ষী হিসেবে স্টুডেন্টদের আনা- নেয়ার খরচ এবং ঢাকায় থাকাসহ আনুষঙ্গিক সব খরচ বহন করেছি। প্রায় ৫৫ লাখ টাকা এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে। এর বাইরে প্রতি মাসে যেটা দেয়া হচ্ছে সেটা ১২ বছর দেয়া হবে। ভবিষ্যতে ওনি যদি আমাদের কাছে চান এই সাপোর্ট আমরা অবশ্যই দেব। উপাচার্য বলেন, রাজনীতি যে অপরাজনীতি হবে আমরা কেউ জানি না। রাজনীতির কিছু ভালো দিক আছে। দেশের জন্য কাজ করতে রাজনীতিই করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সজাগ থাকবে যেন কোনো ছাত্র বিপথে না যায়।
আদালতে এ মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে ছিলেন-মাহবুব আহমেদ, আমিনুল গণি টিটু, শহিদুল ইসলাম সরদার, আজিজুর রহমান দুলু, রেজাউল করিম সরকার, ফারুক আহম্মদ, শ্রী প্রাণনাথ প্রমুখ। তারা এ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানান। এছাড়া রায় ঘোষণার পর আসামির স্বজনদের কান্নায় আদালতের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্নার মা কুলসুম আরা শেলী বলেন, ঘটনার দিন মুন্না আমার সঙ্গে ওর এক কাজিনের বিয়েতে ছিল। তারপরও ওর কেন সাজা হলো বুঝতে পারছি না। মেহেদী হাসান রবিন (আসামি) ঘটনার বিষয়ে ওকে জানায়। বিয়ে বাড়িতে থাকার কারণে সে এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনি। পরদিন ভোরে সে ঢাকায় আসে। এরপর সন্দেহভাজন হিসেবে ওকে গ্রেফতার করা হয়। তখন বলা হয়েছিল, ওকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেবে। তিনি বলেন, আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আশা করছি, সেখানে ন্যায়বিচার পাবো।
মামলার রায় ঘোষণা ঘিরে আদালতপাড়ায় উৎসুক মানুষেরও উপচেপড়া ভিড় লেগে যায়। সকালে আবরারের বাবা ও আসামিদের স্বজনেরা আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষ, আইনজীবী, পুলিশ, সাংবাদিকদের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে। জনাকীর্ণ আদালতে ২০ আসামির সর্বোচ্চ সাজার রায় ঘোষণা করে বিচারক বলেন, ‘মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাদের গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলো।’ বাকি পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দেওয়ার পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড দিয়েছেন বিচারক। ওই অর্থ দিতে না পারলে তাদের আরও এক বছর সাজা ভোগ করতে হবে।
রায়ে আদালত বলেছে, ‘হত্যাকান্ডের সঙ্গে আসামিদের সবার সংশ্লিষ্টতা মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একে অপরের সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদ রাব্বির বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে তাকে হত্যা করেছে… যা বাংলাদেশের সকল মানুষকে ব্যথিত করেছে। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বির নৃশংস হত্যাকান্ডের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনো না ঘটে তা রোধকল্পে এ ট্রাইব্যুনালে সকল আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত হলো।’ মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সবাই বুয়েটের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের কর্মী। তাদের মধ্যে ২২ জনের উপস্থিতিতে আদালত এই রায় ঘোষণা করে। বাকি তিনজন মামলার শুরু থেকেই পলাতক। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। আবরারকে হত্যার পরদিন ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর তার বাবা বরকত উল্লাহ ১৯ শিক্ষার্থীকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ এজাহারের ১৬ জনসহ মোট ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে। পাঁচ সপ্তাহ তদন্ত করে তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান ওই বছর ১৩ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে যে অভিযোগপত্র জমা দেন, সেখানে আসামি করা হয় মোট ২৫ জনকে। অভিযোগপত্র গ্রহণ করে গত ১৮ নভেম্বর পলাতক চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। তাদের মধ্যে একজন পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে মামলাটি পরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ স্থানান্তর করে আদেশ জারি হয়। বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। গত বছরের ৫ অক্টোবর এ মামলার বাদী ও আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ আদালতে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। কারাগারে থাকা ২২ আসামি গত ১৪ সেপ্টেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তিন আসামি পলাতক থাকায় তারা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাননি। এরপর কয়েকজন আসামি নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্যও দেন। এ মামলার চার্জ গঠনের সময় শব্দগত ত্রুটি থাকায় ৭ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষ তা সংশোধনের আবেদন করে। পরদিন ২৫ আসামির বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগ গঠন করে আদালত। আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের পর দুইপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ১৪ নভেম্বর বিচারক এ মামলার রায়ের জন্য ২৮ নভেম্বর তারিখ রেখেছিলেন। কিন্তু আরও কিছু ‘সময় দরকার’ জানিয়ে সেদিন রায় পিছিয়ে ৮ ডিসেম্বর নতুন তারিখ রাখেন বিচারক।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More