ভারতও এখন তাদের ওপর খুশি নয় : মির্জা ফখরুল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর

স্টাফ রিপোর্টার: জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং ভোলা ও নারায়ণগঞ্জে ‘পুলিশের গুলিতে’ তিন কর্মী হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে বিএনপি। চলতি মাসে রাজধানীর ১৬টি স্থানে একই ধরণের সমাবেশ করবে দলটি। গতকাল বিকালে নয়া পল্টনে সমাবেশের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। চলবে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। মহানগর দক্ষিণের মতিঝিল-পল্টন-শাহজাহানপুর থানার যৌথ উদ্যোগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আন্দোলন আমাদের থেমে নেই। গত মাস থেকে যে আন্দোলন শুরু করেছি সেই আন্দোলন চলছে। আমাদের এই আন্দোলন চলতেই থাকবে। ঢাকা মহানগরীর ১৬টি স্পটে বা জোনে এই প্রতিবাদ সমাবেশ আমরা করব। যা আজকের সমাবেশের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গেছেন, মানুষ ভাবলো হয়তোবা এবার আমাদের তিস্তার পানি বণ্টন হবে। অভিন্ন নদীগুলোর পানি আমরা পাব। তারা ভাবলো সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে, বাণিজ্যের ব্যবধানগুলো কমে আসবে; আরও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আসতে পারবে। এবং তারাও সে আশাই করে গিয়েছিল যে, ভারত তাদের সেগুলো দিয়ে দেবে। কিন্তু ভারতও এখন আর তাদের ওপর খুশি নয়। সীমান্তে হত্যার ঘটনার উল্লেখ করে বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, যখন নাকি আমার দেশের মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে, যখন আমার মাকে তার সন্তান থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, তখন তারা জয়পুর বিমানবন্দরে গিয়ে নাচানাচি করছে। এই দেশের মানুষ এটা ক্ষমা করবে না। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমরা অবশ্যই ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। আমরা অবশ্যই আশা করি যে, ভারত যেহেতু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সহযোগিতা করেছিল, এখন বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য যে সংগ্রাম, তাতেও তারা সহযোগিতা করবে। কারণ, গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কাছে আমরা সেটাই আশা করি। খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা না নিয়ে, বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন না নিয়ে এখানে কেউ কখনো কিছু করতে পারবে না। ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালে হানাদার বাহিনী যে ভূমিকা পালন করেছিল, বর্তমান সরকার একই ভূমিকা পালন করছে। আমরা দেখেছি নারায়ণগঞ্জে বেআইনি চায়নিজ রাইফেল তাক করে তারা আমাদের শাওনকে হত্যা করেছে। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম প্রমুখ। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক হারুন উর রশীদ। প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে কী এনেছেন, প্রশ্ন ফখরুলের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় থাকার জন্যই ভারত সফরে গিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘ইতি প্রকাশন’-এর উদ্যোগে ‘রাজনীতি: পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খুব নাচতে নাচতে চলে গেলেন ভারতে। একটা মাত্র আশায় যে, ভারতে গিয়ে আবার কীভাবে ক্ষমতায় থাকা যায় তার জন্য একটা ব্যবস্থা করে আসবেন। কি এনেছেন? কিছুই না। আমরা পরিষ্কার করে বলছি, কি এনেছেন? ১৫৩ কিউসেক পানির কথা বলেছেন। এ ছাড়া তো কিছুই দেখছি না। যেদিন সমঝোতা স্মারক সই হয় সেদিনই আমাদের সীমান্তে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বাংলাদেশি এক ১৪ বছরের বালককে। আরও দুজন নিখোঁজ আছে। এটা অহরহ ঘটছে। সেটা (সীমান্ত হত্যা) কিন্তু এখন পর্যন্ত বন্ধ হয়নি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক হোক- এটা আমরা সবাই চাই। ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা সহযোগিতা করেছে আমরা তার জন্য কৃতজ্ঞ। আপনারা তো বলতে থাকেন যে, এমন পর্যায় আপনাদের সম্পর্ক গেছে, সেই সম্পর্কটা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক- আপনাদের মন্ত্রী বলেছেন। মানুষকে প্রতারিত করে এবং মানুষকে পুরোপুরিভাবে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না, একটা জাতির নির্মাণ হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন জয়পুর এয়ারপোর্টে নৃত্যগীতে ভরপুর। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও সেখানে অংশ নিয়েছেন। আমরা ছবিতে দেখলাম। দেশের মানুষ যেখানে গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য আন্দোলন করতে যাওয়ায় আপনি গুলি করে মারছেন, যখন জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় আপনি গুলি করে মারছেন, যখন চাল-ডাল- তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার বিরুদ্ধে কথা বলায় গুলি করে মারছেন, যখন দেশে চরম একটা অর্থনৈতিক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সেই সময়ে জয়পুরে গিয়ে আপনি নৃত্যগীতের সঙ্গে একসঙ্গে যোগ দিচ্ছেন তা কখনোই এদেশের মানুষ মেনে নেবে না, মেনে নিতে পারে না। ‘হাওরে উড়াল সেতুর প্রকল্পে প্রশ্ন’ মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল দেখলাম হাওরের ওপর দিয়ে উড়াল সেতু নির্মাণ করবে। সেখানে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বাজেট দিয়েছে। দেখা যাবে, সেটা পৌঁছাবে ২৬ হাজার কোটি টাকায় এবং এটার প্রয়োজন আছে কিনা, কতোগুলো গাড়ি চলবে, ওখানে কী প্রয়োজন আছে তার সম্পর্কে কোনো কথা নেই। আজকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই সমস্ত মেগা প্রজেক্ট, অপ্রয়োজনীয় প্রজেক্ট নিয়ে মূল জায়গা থেকে সরে ভিন্ন জায়গায় চলে এসেছে সরকার। তিনি বলেন, সরকারকে বলছি, এই যে হাজার হাজার লোককে আহত করছেন, গুলি করছেন, মামলা করছেন। আবার আগের মতো একই কায়দায় মামলা করছেন। এসব করে ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখা যাবে না। এসব করে বাংলাদেশের মানুষকে বোকা বানাতে বানাতে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে, বাংলাদেশের মানুষ আজ রুখে দাঁড়িয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রামী মানুষ। বাংলাদেশের মানুষ সবসময় তাদের অধিকার আদায় করে সংগ্রামের মধ্যদিয়ে, লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে। সেই সংগ্রাম শুরু হয়েছে, সেই সংগ্রাম অবশ্যই মানুষ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে, সংগ্রামের মধ্যদিয়েই তারা অর্জন করবে। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে এবং ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, গ্রন্থের লেখক হারুন-অর-রশিদ ও প্রকাশক মো. জহির দীপ্তি বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More