রংপুরে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১০ জন নিহত

দুর্ঘটনার আগে বাসচালক গাঁজা সেবন করেছিলেন বলে অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: রংপুরের তারাগঞ্জে দুই বাসের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে। গত রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে উপজেলার খারুভাজ সেতুর কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনাকবলিত বাসে থাকা যাত্রীদের অভিযোগ-ঘটনার আগে হেলপারের সঙ্গে গাঁজা সেবন করে বেপরোয়া গতিতে বাস চালাচ্ছিলেন চালক। এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন। রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর-দিনাজপুর সড়কের তারাগঞ্জ উপজেলার খারুভাজ সেতু এলাকায় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে। এতে আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক যাত্রী। তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালসহ আশপাশের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাহের হোসেন জানান, আহতদের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেছেন। নিহতরা হলেন বাসচালক জীবন, ইসলাম পরিবহণের হেলপার ও রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়াল কুঠি এলাকার আনোয়ারুল ইসলাম, একই উপজেলার সয়ার এলাকার পল্লী চিকিৎসক আনিছার রহমান, আনিছুল ইসলাম, ধনঞ্জয়, আনোয়ার হোসেন, নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌর এলাকার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও তাহসিন পরিবহণের ম্যানেজার মোহসিন আলী সাগর, গাইবান্ধার সাদেক আলী ও নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি অলিউর রহমান জুয়েল। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক শরীফুল হাসান জানান, দুর্ঘটনায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬৬ জনের মধ্যে ৪ জন মারা গেছেন। ভর্তি রয়েছেন ৬২ জন। এদের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হাসপাতালে নিহত ৪ জনের মধ্যে একজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ৩ জনের লাশ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলে তাদের হস্তান্তর করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাস দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান নিহত ও আহতদের স্বজনরা। সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আহতদের চিকিৎসা দিতে বেশ বেগ পেতে হয় চিকিৎসক ও নার্সদের। এ সময় আহতদের সেবা দিতে এগিয়ে আসেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও বিভিন্ন স্বেছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা ওষুধপত্রসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী প্রদান করেন আহতদের। দুর্ঘটনাকবলিত জোয়ান পরিবহণের যাত্রী মোবারক হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘রংপুরের মডার্ন মোড় থেকে বাসটি নীলফামারীর সৈয়দপুরের উদ্দেশে যাচ্ছিল। এ সময় চালক ও সহকারী গাঁজা মিশ্রিত সিগারেট সেবন করছিলেন। এতে করে বাসের ভিতরে উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। তখন যাত্রীরা নিষেধ করলে চালক তাদের কথায় কর্ণপাত করেননি। গাঁজা সেবনের পর চালক বেপরোয়া গতিতে বাস চালাতে থাকেন। এর পাশাপাশি ছিল মুষলধারে বর্ষণ। দুর্ঘটনা মূলত এজন্যই ঘটে।’ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অপর যাত্রী আশেক আলী জানান, রংপুর মেডিকেল কলেজ মোড় থেকে বাস ছাড়তে রাত সাড়ে ১১টা বেজে যায়। সিট বাদেও বাসের ছাদে অনেক যাত্রী তোলেন হেলপার, সুপারভাইজার ও চালক। চালক ও সহকারীকে (হেলপার) গাঁজা সেবনে বাধা দিলেও মানেননি তারা। দ্রুতগতিতে নিয়ন্ত্রণহীন বাস চালিয়ে সৈয়দপুরের দিকে যাচ্ছিলেন তারা। পথে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। এর মধ্যেও চালক বাসের গতি কমাননি। এরপর হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। আর কিছুই বলতে পারেন না তিনি। জ্ঞান ফেরার পর তিনি তাকে দেখতে পান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। একই কথা জানালেন রোকেয়া বেগম নামে আহত আরেক যাত্রী। তিনি জানান, বাসে উঠতেই ভেতরে গন্ধ পান তিনি। কিসের গন্ধ তা তিনি জানেন না। বাসটি ছিল সৈয়দপুর যাওয়ার শেষ বাস। এ কারণে অন্য বাসের জন্য অপেক্ষার সুযোগ ছিল না।’ তারাগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ওসি মাহবুব মোরশেদ জানান, রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর থেকে জোয়ানা পরিবহণের বাসটি সৈয়দপুরে যাচ্ছিল। বিপরীত দিক থেকে আসা ইসলাম পরিবহণের একটি বাস সৈয়দপুর থেকে রংপুরের দিকে আসছিল। রংপুর-দিনাজপুর সড়কের তারাগঞ্জ উপজেলার শলেয়াশাহ খারুভাজ সেতুর কাছে আসামাত্রই দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘনাস্থলেই ৫ জন নিহত হন। আহত হন অন্তত অর্ধশতাধিক। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে হতাহতদের উদ্ধার কাজ শুরু করেন। মুষলধারে বৃষ্টিপাতের কারণে উদ্ধার তৎপরতায় কিছুটা ব্যাহত হয়। এরপর ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করেন। আহতদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত আরও ৫ জন মারা যান।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More