রাজনীতিতে কৌতূহল : কী করবে জাপা-জামায়াত

ভোটের মাঠে জোটের হিসেব মেলাচ্ছে দলগুলো : বাড়ছে তৎপরতা

স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। বাড়ছে নির্বাচনী তৎপরতা। ভোটের মাঠে জোটের হিসাব মেলাচ্ছে দলগুলো। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র বাইরে জোটের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ দুই দল জাতীয় পার্টি ও জামায়াত। জাতীয় পার্টি এখন সংসদের প্রধান বিরোধী দল। জামায়াত নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দলের তালিকায় নেই। তাদের নিবন্ধনের বিষয়টি ঝুলে আছে আদালতে। এ অবস্থায় দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে না পারলেও নির্বাচনে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। প্রায় দুই যুগ বিএনপি’র জোটসঙ্গী হয়ে থাকা জামায়াতের আমীর এক অনুষ্ঠানে একলা চলার ঘোষণা দিয়েছেন। তার এই ঘোষণার পর সবাই ধরে নিয়েছেন এখন জামায়াত আর বিএনপি’র জোটসঙ্গী নয়। তবে দল দুটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে হয়তো অদূর সময়ে এমন কোনো ঘোষণা নাও আসতে পারে। তবে এটা পরিষ্কার যে, দল দুটির জোটবদ্ধ অবস্থান আর নেই। জোট ছেড়ে জামায়াত এখন নির্বাচনের মাঠে কি ভূমিকা নেয় এটি এখন বড় প্রশ্ন। এ নিয়ে কৌতূহল নানা মহলে। একইভাবে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়েও নানা কৌতূহল। প্রতিবার জাতীয় নির্বাচন আসলেই অনেকটা সার্কাস পার্টি হয়ে ওঠে দলটি। থাকে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জীবিত থাকতে নির্বাচনের আগে নানা নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। সকাল-বিকাল সিদ্ধান্ত বদল হয়েছে।

এবার নির্বাচনের বেশ আগে থেকেই আলোচনায় জাতীয় পার্টি। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ দীর্ঘদিন থেকেই অসুস্থ। গত বুধবার অকস্মাৎ তার তরফে ঘোষণা আসে নভেম্বরে দলের কাউন্সিল করার। এই ঘোষণা আসার পর দলের ভেতরেই নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। রওশন এরশাদ কাউন্সিল ডাকতে পারেন না এমন কথা বলা হয় নেতাদের পক্ষ থেকে। প্রশ্ন ওঠে রওশন এরশাদ হঠাৎ কেন কাউন্সিল ডাকলেন। অবশ্য এই প্রশ্নের অনেকটা উত্তর ছিলো রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। এতে তিনি দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। দলের নেতারা কেন পদ্মা সেতুর উপকারিতা নিয়ে সাফাই গাইলেন না সে প্রশ্ন তুলেছেন রওশন। নেতারা দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাজ করছেন না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। কাউন্সিল করতে তিনি যে প্রস্তুতি কমিটির তালিকা বিজ্ঞপ্তিতে দিয়েছেন সেখানে থাকা নেতারা অবশ্য জানিয়েছেন, কাউন্সিল এবং কমিটিতে থাকার বিষয়টি তারা জানেন না। রওশন এরশাদের কাউন্সিল ডাকার পরের দিন বৃহস্পতিবার দলের এমপিরা নজিরবিহীন এক চিঠি দিয়েছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে। চিঠিতে বলা হয়েছে সংসদের বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থার কারণে তারা আর তাকে বিরোধী দলের নেতার আসনে রাখতে চান না। এ পদে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে বসাতে চান।

ওই চিঠিতে দলের ২৪ জন এমপি সমর্থন দিয়েছেন। দলীয় সূত্র বলছে, রওশন এরশাদ ও তার পুত্র সাদ ছাড়া বাকি সব এমপি জিএম কাদেরের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সংসদের নিয়ম অনুযায়ী নতুন সংসদ শুরুর সময়েই বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতা ঠিক করা হয়। জাতীয় পার্টির এই চিঠি একেবারেই ব্যতিক্রম। যদিও নিয়ম অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপিদের মতামতের ভিত্তিতে যে চিঠি দেয়া হয়েছে তা স্পিকারের গ্রহণ করা এবং ব্যবস্থা নেয়ার কথা। সেটি হলে বিরোধী দলের নেতার আসন হারাতে বসেছেন রওশন এরশাদ। অন্যদিকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের বড় অংশই জিএম কাদেরের সঙ্গে আছেন। এমন অবস্থায় রওশন এরশাদ কাদের নিয়ে কাউন্সিল করবেন এটি দেখার বিষয়। অনেকে বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখেই দলের এই নয়া মেরূকরণ। রওশন এরশাদ বরাবরই সরকারের সঙ্গে থাকতে চান বলে দলের নেতারা মনে করেন। দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর নেতৃত্ব নিয়ে যে টানাপড়েন শুরু হয়েছিল সেই সংঘাতই এখন নতুন করে সামনে এসেছে। দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের দলের নিজস্ব সিদ্ধান্তে সামনে পথ চলতে চাইছেন। তার সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্যে তা অনেকটা পরিষ্কার। তিনি সরকারেরও নানা বিষয় নিয়ে সমালোচনা করছেন। কিন্তু বিরোধী দলের নেতা হিসেবে রওশন এরশাদ যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তাতে সরকারের সাফাই গাওয়ার পাশাপাশি সরকার ঘেঁষা কথা বার্তাই বলেছেন বেশি।

এ কারণে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে নেতাকর্মীরা মনে করেন। এমন পরিস্থিতি দলের দুটি ধারার একসঙ্গে থাকা এখন দুরূহ হয়ে পড়েছে। অনেকে বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে দলটি আবার ভেঙে যেতে পারে। বাইরে কোনো পক্ষের পরামর্শেই রওশন এরশাদ নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিষয়টি হয়তো দলের নেতারাও বুঝতে পেরেছেন। এ কারণে তারা তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সংসদীয় দলের জরুরি সভা হয়। এতে দলের ২৬ এমপি’র ২৩ জন উপস্থিত থেকে রওশন এরশাদকে সরিয়ে দেয়ার পক্ষে মত দেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন না এমন একজন এমপি’র মতামত নেয়া হয় টেলিফোনে। তিনিও জিএম কাদেরকে বিরোধী দলের নেতা করার পক্ষে মত দিয়েছেন। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কি অবস্থান নেবে সেটি এখন বড় প্রশ্ন। দলের চেয়ারম্যান অবশ্য আগেই ঘোষণা দিয়েছেন এককভাবে নির্বাচন করার। এককভাবে নির্বাচন করলেও সামনের পরিস্থিতি দলটির গতিপথ পাল্টে দিতে পারে। বিরোধী দলগুলোর যুগপৎ কোনো আন্দোলন শুরু হলে সেখানে জাতীয় পার্টিকে নয়া ভূমিকায় দেখা যেতে পারে। গত নির্বাচনের মতো জাতীয় পার্টির মূল অংশ নির্বাচনী খেলার ঘুঁটি হবে কিনা এটি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ওদিকে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোট ছাড়ার বিষয় স্পষ্ট হওয়ার পর জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতের অবস্থান নিয়েও কৌতূহল রাজনৈতিক মহলে। দলটি এখন কি করবে।

কেমন হবে তাদের পরবর্তী কর্মসূচি। জাতীয় নির্বাচনে কি ভূমিকা নেবে দলটি এমন জিজ্ঞাসা রাজনৈতিক মহল এবং দলের নেতাকর্মীদের মাঝেও। যদিও দলের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সাম্প্রতিক দেয়া বক্তব্যে তার কিছুটা ইঙ্গিত মিলেছে। দলটি যে আগামী নির্বাচনে ভালো প্রস্তুতি নিয়েই নামছে এটাও স্পষ্ট তার বক্তব্যে। প্রশ্ন হলো বিরোধী দলগুলো যে যুগপৎ আন্দোলনের ছক কষছে সেখানে জামায়াত থাকবে কিনা? থাকলে তাদের কি ভূমিকা হবে। বাম-ডান ও মধ্যপন্থি দলগুলোর সঙ্গে কি ধরনের সমঝোতায় যাবে জামায়াত। বিএনপি’র জোট ছাড়ার বক্তব্য আসার পর বিএনপি এবং জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে নেতিবাচক কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়া যায়নি। বরং বলতে গেলে দল দুটির নেতারাই খুশি। তারা বলছেন, অনেক দিন থেকেই দুই দলে দূরত্ব ছিল। জোট ছেড়ে দেয়ার আলোচনা ছিল। এ নিয়ে বাইরে আলোচনা-সমালোচনা ছিল। এখন বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ায় ভালো হয়েছে। তবে কৌশলগত কারণে বিএনপি বা জামায়াত এখনো আনুষ্ঠানিক জোট ভাঙার ঘোষণা দেয়নি। সামনে একসঙ্গে আন্দোলন বা কর্মসূচি পালন করার বিষয় আসতে পারে এমন চিন্তা থেকেই এমন কোনো ঘোষণা আসছে না। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সময় ঘনিয়ে আসলে জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতের অবস্থান আরও স্পষ্ট হবে। জোট আর ভোটের রাজনীতির গতিপথও পাল্টে দিতে পারে এই দুই দলের অবস্থান।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More