বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে রাষ্ট্রনায়কদের পদচারণে মুখর হবে ঢাকা

স্টাফ রিপোর্টার: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান উপলক্ষে দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রনায়কদের পদচারণে মুখর হবে ঢাকা। টানা ১০দিনে বাংলাদেশে সরব উপস্থিতি থাকবে পাঁচ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর। ১৭ মার্চ থেকে একে একে ঢাকা আসবেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সোলিহ, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে, নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভা-ারি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সশরীরে না থাকলেও একই সময়ে ভিডিওবার্তায় উপস্থিতি থাকবে চীনের প্রেসিডেন্ট, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী। প্রেসিডেন্টের বার্তা নিয়ে চীনের একজন মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি আসবেন ঢাকায়। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চ ঢাকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে থাকবেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইবরাহিম মোহাম্মদ সোলিহ। এদিন সকালে এসে পৌঁছে তিনি জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করবেন। পাশাপাশি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের অমর শহীদদের প্রতি ও ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
ইবরাহিম মোহাম্মদ সোলিহ ঢাকায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন তিনি। বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে একাধিক চুক্তি সই হবে। ১৮ মার্চ মধ্যরাতে ঢাকা ছাড়বেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। পরদিন ১৯ মার্চ ঢাকা সফরে আসবেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। দুই দিনের সফরে ২০ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা অবস্থান করবেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী। মাঝে এক দিনের বিরতি দিয়ে ২২ মার্চ আসবেন নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাা-ারি। দুইদিনের সফর শেষে ২৩ মার্চ দেশে ফিরবেন তিনি। এরপর স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দিন ২৬ মার্চ আসবেন প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ঢাকায় নানা আয়োজন শেষে ২৭ মার্চ দুইদিনের সফর শেষ করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সূত্র জানান, শীর্ষ নেতারা সবাই ঢাকার তেজগাঁও প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি’ বক্তৃতা দেবেন। বিগস্ক্রিনের মাধ্যমে এসব বক্তৃতা বিভিন্ন স্থানে দেখানো হবে। পাশাপাশি সব নেতার সঙ্গেই দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক হবে। এর মধ্যে নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভা-ারি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। অবশ্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজধানী ঢাকার বাইরে গোপালগঞ্জ ও সাতক্ষীরা সফর করবেন।
গতকাল ঢাকার এক অনুষ্ঠানের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এবারের সফর হবে শুধুই উদ্যাপনের। এ সময় দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো আমরা আলোচনায় আনবো না। কারণ নরেন্দ্র মোদি আসছেন, এতেই আমরা অনেক খুশি। শুধু উনি নন, উনার দেখাদেখি আরও চারজন রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান আসছেন। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও ভারতের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান আসছেন। আমরা খুবই আনন্দিত, ইট শোজ দ্য হাইট অব ডিপ্লোম্যাটিক ম্যাচুরিটি অ্যান্ড অ্যাচিভমেন্ট। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা সবাই আমাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আমাদের স্বাধীনতা দিবস, সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনে আসছেন- এটাই তো আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। নরেন্দ্র মোদির সফরে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা তিস্তা চুক্তির বিষয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরে কোনো আলোচনা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমাদের বড় আনন্দ উৎসবে সবাই আসছেন এতে আমরা আনন্দিত। আর অন্য ছোটখাটো বিষয় যেগুলো- ভারতের সঙ্গে তো আমাদের যে ধরনের বড় বড় সমস্যা, সব আমরা আলোচনার মাধ্যমেই দূর করেছি। আর যদি কিছু থাকে সেগুলো আস্তে আস্তে করব। বাট দিস ইভেন্ট শুড নট বি অ্যান অকেশন ফর রিজলভিং…। কারণ এ ইভেন্ট হচ্ছে ভেরি স্পেশাল ইভেন্ট। এটা হচ্ছে এ দেশগুলোর বাংলাদেশের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য পুরো জীবন উৎসর্গ করা বঙ্গবন্ধুর প্রতি আগ্রহ। এবারের সফরে নরেন্দ্র মোদির কী কী কর্মসূচি থাকছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মহামারীর মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বিদেশ সফর হবে বাংলাদেশে। আর কোথাও যাননি এ কভিডের সময়। তিনি শুধু ঢাকায় আসছেন না, আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যাবেন। সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, ওড়াকান্দি যাবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেসব দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান আসছেন না তারাও বার্তা পাঠিয়েছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট, কানাডার প্রধানমন্ত্রী, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বার্তা পাঠিয়েছেন। বার্তাটা হলো, আমাদেরফ্রুবর্ণজয়ন্তীতে তারা আমাদের সঙ্গে আছেন এবং সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর যে উদ্যাপন এবং উনার যে ত্যাগ, সেগুলো অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। জানা যায়, জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ১৭ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা আয়োজনের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অনুষ্ঠানমালায় প্রতিদিন পৃথক থিমভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, অডিওভিজুয়াল এবং অন্যান্য বিশেষ পরিবেশনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। ১০ দিনের অনুষ্ঠানমালার থিমগুলো হলো- ‘ভেঙেছ দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়’, ‘মহাকালের তর্জনী’, ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা’, ‘তারুণ্যের আলোকশিখা’, ‘ধ্বংসস্তূপে জীবনের গান’, ‘বাংলার মাটি আমার মাটি’, ‘নারীমুক্তি, সাম্য ও স্বাধীনতা’, ‘শান্তি-মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত’, ‘গণহত্যার কালরাত্রি ও আলোকের অভিযাত্রা’ এবং ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর ও অগ্রগতির সুবর্ণরেখা’।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More