স্টাফ রিপোর্টার: বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ড অবসরে যাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি বড় অংশকে তাদের পাওনা চেক হস্তান্তরের বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। চলমান মুজিববর্ষের অবশিষ্ট ৮ মাসের মধ্যে অবসর বোর্ড ১২ হাজার এবং কল্যাণ বোর্ড ১৫ হাজার আবেদনকারীর চেক হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বিপুল সংখ্যক চেক প্রদানের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বোর্ড দুটির তহবিলে না থাকায় সরকারের কাছে অতিরিক্ত ১ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
অবসর ও কল্যাণের সদস্য সচিবদ্বয় যথাক্রমে অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী ও অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু এ তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলেন, মুজিববর্ষে বিভিন্ন সেক্টরের মানুষের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মানুষ গড়ার কারিগরদের জীবনের শেষ দিনগুলো যাতে ভালোভাবে কাটে, সে লক্ষ্যে তাদের জমানো টাকা যেন বুঝিয়ে দেয়া যায়, তার জন্য অতিরিক্ত কিছু অর্থ সরকারের কাছে থোক বরাদ্দ হিসেবে চাওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অবসরপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত ১২ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে তাদের পাওনা টাকা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য অবসর বোর্ড সরকারের কাছে ৮০৪ কোটি টাকা চেয়েছে। আর কল্যাণ বোর্ড ১৫ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন নিষ্পত্তির জন্য ১ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে। জানা গেছে, অবসর ভাতা বোর্ডে ২০১৮ সালের জুন থেকে এবং কল্যাণ বোর্ডের আবেদন জমা রয়েছে ২০১৮ সালের মার্চ থেকে। এরই মধ্যে ২৮ মার্চ কল্যাণ বোর্ড অবসরপ্রাপ্ত ৬৮৪ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে কল্যাণ সুবিধা বাবদ ২৭ কোটি ৫ লাখ ৭২ হাজার ৮৬৪ টাকার চেক হস্তান্তর করেছে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড এবং কল্যাণ সুবিধা বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালের ১ জুলাই যারা আবেদন করেছেন তারা এখনো টাকা বুঝে পাননি। অর্থাৎ অবসরে যাওয়ার প্রায় তিন বছর পরেও শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের পাওনা বুঝে পাচ্ছেন না। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নিষ্পত্তির জন্য অবসর বোর্ডে ২৫ হাজার ৩০৯টি আবেদন জমা পড়েছে। আর কল্যাণ বোর্ডে জমা পড়েছে ১৯ হাজারের বেশি আবেদন। মার্চ মাসে আরও ৮ হাজার আবেদন জমা পড়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে প্রতি মাসে ছয় শতাংশ হারে যে টাকা কেটে রাখা হয় তা দিয়ে ফি-বছর তহবিলে জমা হয় ৭২০ কোটি টাকা। ভাতা দেয়ার জন্য প্রয়োজন হয় বছরে এক হাজার কোটি টাকা। ফলে প্রতি মাসে ঘাটতি থাকে ২৮০ কোটি টাকা।
নিজের বেতন থেকে প্রতিমাসে ৬ শতাংশ হারে কেটে রাখা টাকা অবসরে যাওয়ার পর আবেদনের প্রেক্ষিতে এক মাসের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে নিষ্পত্তির বা পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার বিধান থাকলেও এটি মানা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে শিক্ষক-কর্মচারী অবসর ও কল্যাণের সদস্য সচিবদ্বয় যথাক্রমে অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী ও অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু এটি অস্বীকার করে বলেন, এ ধরনের কোনো নীতিমালা-নির্দেশনা-বিধান অবসর বা কল্যাণ বোর্ডের নেই। তবে, আবেদন প্রাপ্তির দ্রুততম সময়ের মধ্যেই দেয়া উচিত। কিন্তু না দেয়ার কারণ কেউ খুঁজছেন না, জানতে বা প্রতিকারের কথাও বলছেন না। সদস্য সচিবদ্বয় বলেন, প্রতিমাসে যে হারে শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে যাচ্ছেন, তাদের পাওনার পরিমাণ টাকা অবসর ও কল্যাণ বোর্ডের তহবিলে জমা হচ্ছে না। ফলে সংকট তৈরি হচ্ছে। প্রতি বছরের বাজেটেও এ খাতে সরকারের কোনো থোক বরাদ্দ নেই। ফলে পরিস্থিতি দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে।
অবসর বোর্ডের সদস্য সচিব শরীফ আহমদ সাদী বলেন, ‘মুজিববর্ষে আমরা চাই আলোর দীপ জ্বালানো শিক্ষকদের জন্য কিছু উপহার নিয়ে আসতে।’ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব মো. অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেন, ‘আমরা বেশিরভাগ আবেদন নিষ্পত্তি করতে কাজ করছি। ২৮ মার্চ কয়েক মাসের চেক বিতরণ করা হয়েছে। ‘
অবসরে যাওয়া শিক্ষকরা জানান, জমানো টাকা পেতে সংশ্লিষ্টদের পেছনে ঘুরে ঘুরে বিনা চিকিৎসায় অনেকের জীবন প্রদীপ নিভে যাচ্ছে। টাকা তুলতে না পেরে অনেকেই মেয়ের বিয়ে পর্যন্ত দিতে পারছেন না। অনেক শিক্ষক-কর্মচারী মারা যাওয়ার পর স্বজনরা পাওনা টাকার জন্য চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।’
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ
1 টি মন্তব্য
উত্তর দিন
উত্তর বাতিল করুনYou must be logged in to post a comment.
আমার বাবা ২০১৮ সালের সেপ্টম্বরে অবসরে গেছেন এখনো অবসরের টাকা পাননি কবে পাওয়া যাবে যানালে উপক্রিত হতাম