জহির রায়হান সোহাগ: সুরেলা কণ্ঠী জয়নাব পুতুল। সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ ছিলো খুব ছোট থেকেই। সেই পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়ার সময় থেকেই শুরু করেন সঙ্গীতে তালিম নেয়া। ধাপে ধাপে তালিম নিয়েছেন বিভিন্ন ওস্তাদের কাছে। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে আয়োজিত নজরুল সঙ্গীত, রবীন্দ্র সঙ্গীত ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করতেন তিনি। সম্প্রতি সুযোগ পেয়েছেন বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন বাংলা আয়োজিত আগামীর তারকা সিজন-২’তে। সারাদেশের মধ্যে থেকে সেরা কণ্ঠশিল্পী ও নৃত্যশিল্পীদের খুঁজে বের করে আনতে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এটিএন বাংলা। নতুন প্রতিভা খোঁজার প্রতিযোগিতার তৃতীয় রাউন্ডে অংশ নিতে এটিএন বাংলার চিফ কো-অর্ডিনেটর ও আগামীর তারকা সিজন-২ এর পরিচালক সাজেদুর রহমান মুনিম তাকে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছেন। আগামীর তারকা সিজনে সুযোগ পাওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন শুভাকাক্সক্ষীরা।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পৌর এলাকার আনোয়ারপুর গ্রামের মেয়ে জয়নাব পুতুল। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে তৃতীয় জয়নাব। বাবা কিতাব আলী চাকরি করতেন কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের পরিবহণ বিভাগে। ২০০১ সালে মারা যান তার বাবা। তখন খুব ছোট ছিলো জয়নাব। চার সন্তানকে লেখাপড়া শিখে মানুষ হওয়ার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন মা জমিলা বেগম। জয়নাব পুতুল কেরু উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শেষ করেন। ২০০৯ সালে কেরু উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আশানুরূপ ফলাফল অর্জন করেন। ২০১১ সালে দর্শনা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক সম্মানে ভর্তি হন। সর্বশেষ ২০১৯ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। তবে, লেখাপড়ার মাঝেই সঙ্গীত চর্চাও অব্যাহত রাখেন সুরেলা কণ্ঠী পুতুল। বর্তমানে পূর্ব রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিশোর কিশোরী ক্লাবে সঙ্গীত শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি। কলেজে লেখাপড়ার সময় প্রতিবছর আয়োজিত শিক্ষা সপ্তাহে দামুড়হুদা উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে নজরুল সঙ্গীত, রবীন্দ্র সঙ্গীত ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করতেন তিনি। ২০১৪ সালে চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠে মিউজিক রাউন্ড পর্যন্ত ছিলেন তিনি। ২০২১ সালে এনটিভির অন্যন্য প্রতিভায় রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে ৩ হাজার ২০০ ছেলে-মেয়ের মধ্যে ৪ জন সঙ্গীতে ঢাকা রাউন্ডের জন্য নির্বাচিত হন। তার মধ্যে জয়নাব ছিলেন একজন।
সম্প্রতি এটিএন বাংলা আয়োজিত নতুন প্রতিভা খোঁজার প্রতিযোগিতা আগামীর তারকা সিজন-২ এর তৃতীয় রাউন্ডে সেরা ১০০ জনের মধ্যে সুযোগ পেয়েছে জয়নাব। তৃতীয় রাউন্ডে অংশ নিতে এটিএন বাংলার চিফ কো-অর্ডিনেটর ও আগামীর তারকা সিজন-২’র পরিচালক সাজেদুর রহমান মুনিম তাকে আমন্ত্রণপত্র পাঠিছেন। আগামীর তারকা সিজনে সুযোগ পাওয়ার পর দৈনিক মাথাভাঙ্গার প্রতিবেদকের সাথে আলাপ হয় জয়নাব পুতুলের।
সঙ্গীত জগতে প্রবেশ ও এটিএন বাংলার আগামীর তারকা সিজনে সুযোগ পাওয়ার বিষয়ে জয়নাব জানান, ছেলেবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ ছিলো আমার। আমার সঙ্গীতে হাতে খড়ি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনার সময় ২০০৩ সালে। তখন দর্শনার ওস্তাদ শাহাজাহান সাজুর কাছে তালিম নিতাম। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ওস্তাদ মশিউর রহমানের কাছে বেসিক শিখেছি। ২০২০ সালে এটিএন বাংলা আয়োজিত আগামীর তারকা সিজন-১ শুরু হয়। ওই অডিশন সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। পরে শুরু হয় এটিএন বাংলার আগামীর তারকা সিজন-২ এর অডিশন। ২০২২ সালের শুরু দিকে রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়। আমিও রেজিস্ট্রেশন করি। চলতি বছরের ২৯ মার্চ খুলনা বিভাগে অডিশন শুরু হয়। সেখানে প্রায় ৬ হাজার জন অংশ নেয়। পরে বিভাগীয় পর্যায়ে গানে ১৫ জন ও নৃত্যে ১৫ জন নির্বাচিত হয়।
তারকা সিজন-২ সম্পর্কে তিনি আরও জানান, আগামীর তারকা সিজন-২ তে সারাদেশের ৯টি ভেন্যুতে দেড় লাখ ছেলে মেয়ে অডিশন দেয়। গানে ১৫০ জন ও নৃত্যে ১৫০ জন ঢাকায় অডিশন দেয়। দ্বিতীয় রাউন্ডের ঢাকা রাউন্ডের মূল পর্ব শুরু হয় ২৭ ও ২৮ মে। মে ২৮ ছিলো আমার অডিশন। এখানে ১০০ জনকে গানে ও ১০০ জনকে নৃত্যে বাছাই করা হয়। তৃতীয় রাউন্ড শুরু হবে আগামী ২৯ ও ৩০ জুলাই। সেখানে গানে ও নৃত্যে মোট ২০০ জন প্রতিযোগী অংশ নেবেন। ৩০ জুলাই আমার অডিশন। ঢাকার মূল পর্বে বিচারক ছিলেন গানে নজরুল সংগীত শিল্পী ফাতেমাতুজ্জোহরা ও হাসান মাহমুদ চৌধুরী। এছাড়া নৃত্যে বিচারক ছিলেন মুনমুন আহমেদ ও নিলুফার ওয়াহিদ পাপড়ি।
জয়নাব বলেন, আমি চাই চুয়াডাঙ্গা জেলার মুখ উজ্জ্বল করতে। সবাই আমার জন্য দেয়া করবেন যেনো আমি কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি।
এদিকে, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খাঁন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত শিক্ষকবৃন্দ তার সফলতা কামনা করেছেন।