গানে ফিরছেন নব্বই দশকের জনপ্রিয় শিল্পী চুয়াডাঙ্গার সেলিম রেজা

কানাডায় নিজস্ব প্রোডাকশন হাউজের মাধ্যমে খুঁজে ফিরবেন বাংলা গানের সোনালি অতীত

কানাডায় নিজস্ব প্রোডাকশন হাউজের মাধ্যমে খুঁজে ফিরবেন বাংলা গানের সোনালি অতীত

চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের বেলগাছি এলাকার অভিজাত মর্যাদাশালী পরিবারের সন্তান সেলিম রেজা বেড়ে ওঠেন গায়ক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। পরিবারের সদিচ্ছা থাকায় খুব সহজেই প্রবেশ করেন সঙ্গীতাঙ্গনে। তালিম নেন ওস্তাদ আখতার সাদমানীর কাছে। মাজিদ মিয়ার ছেলে সেলিম রেজা নব্বই দশকে সঙ্গীতাঙ্গনে প্রবেশের পরপরই লাভ করেন জনপ্রিয়তা। বাংলা সিনেমায় প্লে­ব্যাকসহ দেশের কিংবদন্তি শিল্পীদের সাথে বিভিন্ন ধাচের অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। কানাডায় বসবাসরত সেলিম রেজা নানা কারণে দীর্ঘদিন অনিয়মিত থাকার পর আবারও ফিরছেন গানের ভূবনে। সম্প্রতি দৈনিক মাথাভাঙ্গার বিশেষ প্রতিনিধি উজ্জ্বল মাসুদ’র সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের সঙ্গীতজীবন এবং সঙ্গীত নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন সেলিম রেজা।

দীর্ঘ ২২ বছর পর শ্রোতাদের জন্য দারুণ এক খবর দিয়ে গায়ক সেলিম রেজা বললেন, নতুন গান নিয়ে সঙ্গীতে ফিরেছি। এরইমধ্যে বেশ কিছু গানের ভিডিও ইউটিউবে প্রকাশ করা হয়েছে। আরও কিছু গান প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি বলেন, কানাডায় এসে প্রথম দিকে আমাকে অনেক স্ট্রাগল করতে হয়েছে। ফলে অনেকদিন নিয়মিতভাবে গানের সঙ্গে থাকতে পারিনি। আলাহর রহমতে এখন অনেক ভালো আছি। স্ত্রী সন্তান নিয়ে ক্যালগেরি শহরে বসবাস করছি। গানের সাথে প্রেমের সূত্র থেকেই আবারও সঙ্গীত নিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু করেছি। কানাডায় থেকেই গান গাইবো। এখানে স্টুডিও করেছি এবং এসআরসি মিডিয়া নামে প্রোডাকশন হাউজও করেছি। শিগগিরই নতুন গানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবো।’

দেশে থাকাকালীন ব্যান্ডের সোনালী দিনের স্মৃতিচারণ করে সেলিম রেজা জানান, আশির দশকের শেষদিকে গানের আঙিনায় তার সরব বিচরণের শুরু। তখন ব্যান্ডের সোনালি দিন। এলআরবি, মাইলস, ফিডব্যাকের জয়জয়কার। সেই সময়টাতে আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তার। ১৯৮৮ সালে আইয়ুব বাচ্চুর সুর ও সংগীতে অ্যালবাম প্রকাশের পরিকল্পনা থাকলেও নানা কারণে তা আর করা হয়নি। অবশেষে ১৯৯৬ সালে সাউন্ডটেক থেকে আসে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘ছায়া’। বাংলাদেশের প্রথম ফিউশনধর্মী অ্যালবাম ছিলো এটি। এরপর আরেকটি অ্যালবাম প্রকাশ হয় ‘শোনো মন’ নামে। ১৯৯৮ সালে অ্যালবামটি বাজারে আনে সংগীতা। এতে রাহুল দেব বর্মন ও কিশোর কুমার জুটির গানের ১২টা রিমেক ছিলো। এছাড়া সিনেমাতেও গান গেয়েছেন। প্রথম প্লেব্যাক করেন রুনা লায়লার সঙ্গে দেবু ভট্টাচার্যের মিউজিকে ‘আসমান তারা’ সিনেমায়। তারপর পেব্যাক করেন রঙিন রংবাজ ও সাইক্লোন ছবিতে। ক্যারিয়ারের সোনালি দিনগুলোতে দেশের বাইরে গিয়েও তখন স্টেজ শো করেছেন। অডিও এবং সিনেমার গানে নিয়মিত থাকা অবস্থাতেই হঠাৎ করে ২০০১ সালে পাড়ি জমান কানাডা। এর আগে আশির দশকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে সেলিম রেজার একক সঙ্গীতানুষ্ঠানে শ্রোতা-দর্শকের উপস্থিতি একপ্রকার ইতিহাস করেছিলো।

কানাডায় সঙ্গীতজীবন নিয়ে সেলিম রেজা জানিয়েছেন, দীর্ঘ দু’দশক ধরে কানাডায় বসবাস করা সেলিম রেজা বিদেশেও মিশে থাকেন দেশের গানে, উপভোগ করেন বাংলা গান। শুধু তাই-ই নয়, প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চুর এলআরবি, মালইস এবং দেশের লিজেন্ডারি ব্যান্ডের সাথেও বাংলা গান গেয়ে মাতিয়েছেন কানাডার মঞ্চ। তবে পছন্দের তালিকায় রয়েছে উপমহাদেশের বিভিন্ন কিংবদন্তী শিল্পীদের গানও। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রবাসীরা দেশের মানুষের গান শুনতে চায়। অনেক চাহিদা দেখেই এলআরবি, মাইলসকে এনেছিলাম এখানে। তারা গান করে মন ভরিয়ে গেছে আমাদের। এই গান পাগল মানুষদের জন্যই আমি গান শুরু করার অনুপ্রেরণা পেলাম।’

দীর্ঘ ২২ বছর পর তিনি নতুন গান নিয়ে ফিরছেন গায়ক সেলিম রেজা। এরইমধ্যে বেশ কিছু গান তিনি তৈরি করেছেন। তার মধ্যে কয়েকটি গান ভিডিও আকারে প্রকাশও করেছেন। আরও কিছু আছে প্রকাশের অপেক্ষায়। কিংবদন্তি শিল্পীদের গানের রিমেকসহ রয়েছে মৌলিক বেশকয়েকটি গান। নিজস্ব প্রোডাকশন হাউজ ‘এসআরসি মিডিয়া’র মাধ্যমে খুঁজে ফিরবেন বাংলা ব্যান্ড তথা বাংলা গানের সোনালী দিন। শুধু গানই নয়, এলাকার মানুষের এবং সামাজিক উন্নয়নেও কাজ শুরু করেছেন তিনি। তার এ কাজ বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ছোটভাই হাসিবুল রেজা ওরফে শামীম রেজা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More