মধু মাসের শুরুতেই চুয়াডাঙ্গার বাজারগুলোতে দেখা মিলছে মরসুমে ফল

কষ্টের টাকাই কেনা ফলটি যেনো না হয় বিষাক্ত : স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে বিষ থেকে সাবধান!!

দামুড়হুদা অফিস: বাংলা নববর্ষের পরের মাসকে (জ্যৈষ্ঠ) বলা হয় মধু মাস। আর এ মাসে বিভিন্ন বাজারগুলোতে দেখা মেলে মরসুম ফলের। মধু মাসের ফল আম (কাঁচা), লিচু, কাঁঠাল, তরমুজ, খরমুজ চুয়াডাঙ্গা জেলার সকল ফলের দোকান, হাট-বাজার ও রাস্তার পাশে আসতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে হালকা রং ধরা অপরিপক্ক আটির লিচু চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরসহ সকল উপজেলার বাজারে অনেককে বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে। তবে দাম বেশি পাওয়ার জন্য কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের মাঝে অপরিপক্ক সব ফল পাঁকানোর প্রতারণা দেখা যাচ্ছে। এ মরসুমে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ফলে বিষ স্প্রে করে পাঁকিয়ে বাজারজাত করার চেষ্টা করতে গিয়ে নজরে পড়ে প্রশাসনের বিশেষ করে আম দফায় দফায় ধরা পরে। যে সকল ফল বিষ স্প্রে করে পাকানো হয় সেই সব আম বিনিষ্ট করে ফেলা হয় এবং কোনো কোনো সময় ব্যবসায়ীকেও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানাও করা হয়। ধারণা করা যাচ্ছে এ বছরেও গত বছরের মতো কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা মরসুমে ফলে বিষ করে বাজারজাত করবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য থাকে আম আগাম বাজারজাত করে অধিক মুনাফা অর্জন করা। ব্যবসায়ীদের ফল বাজারজাত করার আগে ফল খাবার উপযোগী না অনুপযোগী দেখার বিষয় মনে করে না অসাধু ব্যবসায়ীরা।  ফল বেঁচে অধিক মুনাফা অর্জন করতে হবে এটাই মূল বিষয় হয়ে পড়ে তাদের। এ সকল অপরিপক্ক ফল পাঁকানোর জন্য ব্যবহার করা হয় ক্যালসিয়াম কার্বাইড যা একটি মারাত্মক বিষাক্ত উপাদান। যা মানব দেহের জন্য চরম ক্ষতিকর। এছাড়া মানবদেহে বিভিন্ন রোগ-বালাই বাসা বাধার প্রবল ঝুঁকি থাকে। এছাড়া জানা গেছে ভারতীয় এক প্রকার বিষ ¯েপ্র করলে অপরিপক্ক ফল কয়েক ঘন্টার মধ্যে পেঁকে যায় এবং ফলের সুন্দর ও লোভনীয় রং আসে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আম চাষি জানান, আম গাছে থাকা অবস্থায় এই বিষ স্প্রে করলে তা গাছেই পাঁকতে শুরু করে। সাধারণত ডাক্তাররা শরীর গঠনের জন্য বিভিন্ন ফল খাওয়ার পরামর্শ দেন।  কিন্তু এই ফলই যদি হয় মানুষের শরীরের ধ্বংসের কারণ তবে কি লাভ এই ফল খেয়ে। এ মধু মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যে সকল সরকারি কর্মকর্তারা রয়েছেন তাদের উচিত নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা। ভোক্তা সাধারণ খুচরা ক্রেতা মধু মাসে মরসুমে বিষাক্ততা থেকে সাবধান! আপনার কষ্টের টাকাই পরিবারের জন্য কেনা মরসুম ফলটি যেনো না হয় বিষাক্ত।

দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.আবু হেনা জামাল শুভ বলেন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ। এটি এক ধরণের যৌগ যা বাতাসে বা জলীয় সংস্পর্শে এলেই উৎপন্ন করে এসিটিলিন গ্যাস। যা ফলে প্রয়োগ করলে এসিটিলিন ইথানল নামক বিষাক্ত পদার্থে রূপান্তরিত হয়। তাই কার্বাইড কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল  খেলে মানুষ দীর্ঘমেয়াদি নানা রকম রোগে বিশেষ করে বদহজম, পেটের পিড়া, পাতলা পায়খানা, জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিক, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, লিভার ও কিডনি নষ্ট হওয়াসহ ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। এছাড়া মহিলারা এর প্রভাবে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিতে পারে। শিশুরা বিষাক্ত পদার্থের বিষক্রিয়ার ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জনসাধারণকে ফল ও সবজি কেনা এবং খাওয়ার ক্ষেত্রে কতগুলো বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। ফল কেনার সময় ক্ষতযুক্ত ফল কেনা উচিত নয়। কৃত্রিম উপায়ে পাঁকানো সব ফলের রঙ একই রকম হয় এবং এদের রঙ চকচকে আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। খাবার এবং রান্নার আগে ফল এবং সবজি পরিষ্কার প্রবাহমান পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। ফল-সবজি রান্নার আগেই এর খোসা ছাড়িয়ে নিলে বিষাক্ত কীটনাশক উপাদানের পরিমাণ কমে যাবে। খোলা বাজার থেকে কাটা ফল কেনা উচিত নয়। ছত্রাক সংক্রমিত ফল-সবজি কখনো খাওয়া উচিত নয়। ফল এবং সবজির মরসুম ছাড়া অন্য সময়ে বিক্রিত পাকা ফল কেনা উচিত নয়। কারণ এগুলো কৃত্রিম উপায়ে পাকানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফল ও সবজি ধোয়ার জন্য ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এর ফলে ডিটারজেন্টের রাসায়নিক উপাদান ফল ও সবজির ভেতরে প্রবেশ করে। আম ও লিচুর উপকারিতা, আম স্বাদ, পুষ্টি ও গন্ধে অতুলনীয়। পাকা আমে রয়েছে প্রচুর ক্যারোটিন। আম লিভার বা যকৃতের জন্য ভীষণ উপকারী ফল। রাতকানা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে কাঁচা ও পাঁকা আম অতুলনীয়। লিচুর রসালো অংশ তৃষ্ণা মেটাতে সহায়ক। এর আঁটি চর্মরোগে বিশেষ উপকারী। কাশি, পেটে ব্যথা ও টিউমার বৃদ্ধিরোধে লিচু অনেক উপকারী। এ দিয়ে জ্যাম তৈরি করে সংরক্ষণ করা যায়। তবে যাদের গ্যাসট্রিকের সমস্যা রয়েছে তাদের লিচু কম খাওয়াই ভালো।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More