কর্মমুখী শিক্ষা বিস্তারে শিক্ষিতজনদের ভূমিকা

…………….. অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী ………………..
পরিপূর্ণ কারিগরি শিক্ষা ছাড়া কল্যাণমুখী শিক্ষা কখনোই পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয় না, অসম্পূর্ণ থেকে যায়। অজানা কোন বিষয় জানা বা বোঝার প্রক্রিয়া পদ্ধতিই হচ্ছে শিক্ষা। মানুষের সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই শিক্ষার হাত ধরে মানুষ সভ্যতার পথে হেটেছে এবং নব নব জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে পৃথিবীটাকে মানুষের বাসযোগ্য করে প্রতিনিয়তই সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ অগ্রযাত্রায় দু‘ধরনের শিক্ষা প্রধানত মানুষের চলার পথে দৃশ্যমান হয়েছে। এক: পরিবেশ পরিপার্শীকতা থেকে শিক্ষা দুই: প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা। মানুষ তায় পুর্ব পুরুষদের কাছ থেকে একত্রে বসবাসের মাধ্যমে দেখে দেখে যে শিক্ষা অর্জন করেছে তা হচ্ছে পরিবেশ থেকে শিক্ষা। আর গবেষণার ভিত্তিতে নতুন নতুন আবিস্কারের মাধ্যমে উৎপাদন নির্ভর যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত হয়েছে তা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও দু‘ভাবে ভাগ করা যায়। যেমন- সাধারণ শিক্ষা ও কর্মমূখী শিক্ষা।
শিক্ষা বিপ্লবের প্রাথমিক ধাপে মানুষ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে মানুষে মানুষে সভ্যতা বৃদ্ধির প্রয়োজনে যে শিক্ষা গ্রহণ করেছে তা সাধারণ শিক্ষা। এ শিক্ষা সার্বজনীন। সকলের জন্যই আবশ্যক। তবে, মানবিক গুণের বিকাশ সাধনই সভ্যতার শেষ কথা নয়। মানব কল্যাণমুখী কর্মমূখী শিক্ষাই হচ্ছে কর্মমুখী শিক্ষার মূল প্রতিপাদ্য। সে কারণে সাধারণ শিক্ষার প্রসারের এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে কর্মমুখী শিক্ষার আবশ্যকতা বিষয়টি সামনে চলে এসেছে।
জীবনযাত্রার মানউন্নয়ন ও সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে মানুষ যে শিক্ষা শুরু করেছিল তায় ধাপে ধাপে দেখি; মানুষ আগুনের আবিস্কার করেছে, পর্যায়ক্রমে আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক আবিস্কারের দিকে ছুটতে ছুটতে লাঙ্গল থেকে ইঞ্জিন চালিত মেশিন আবিস্কার করেছে। উন্নত পদ্ধতিতে ঘর বাড়ি নির্মাণ করছে, রোগ নিরাময়ের পথ ধরে ঔষধ আবিস্কার করেছে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। বাহ্যদৃষ্টিতে এগুলির দৃশ্যমানতার জন্য কারিগরি শিক্ষা পদ্ধতি মূখ্য ভূমিকা পালন করলেও দেশে-বিদেশে কারিগরি শিক্ষার জন্য প্রয়োজন মাফিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। আমাদের দেশে কর্মমুখী শিক্ষার জন্য বিলম্বে হলেও প্রসারতায় পথে পা বাড়াচ্ছে সামাজিক অসচেতনার কারণে যতটুকু প্রসরতা বৃদ্ধি হবার কথা তা এখনও হয়নি। কার্যত সেকারণে প্রতি বছর সাধারণ শিক্ষা গ্রহণ করে হাজার হাজার উচ্চ শিক্ষা গ্রহণকারী তথাকথিত শিক্ষিত বেকার সমাজে ও রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে। এ সকল বেকাররা কেরানী নির্ভর শিক্ষা নিয়ে না হতে পারছে শীর্ষ কেরানী, না হতে পারছে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সঙ্গমতাসম্মান মানুষ। এদেরকে যদি যথাসময়ে কর্মমুখী শিক্ষা দিয়ে উপকৃত করে তৈরি করা যেত তবে এরা বেকার না হয়ে পরিবারের বা রাষ্ট্রের বোঝা না হয়ে সম্পদে পরিনত হয়ে কর্মীর ভূমিকা পালন করতে পারতো।
আনন্দের সাথে বলবো যে, বিলম্বে হলেও সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করে দেশের প্রতিটি প্রান্তরে সরকারি পলিটেকনিক ও ভকেশনাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করার পাশাপাশি বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করে কর্মমুখি শিক্ষার অনুকূলে শিক্ষা বিপ্লব ঘটানোর নন্দিত উদ্যোগ নিয়েছে, যা সফল হলে আমাদের উত্তরসূরীরা শুধু শিক্ষিতই হবে না হাতে কলমে কাজ শেখার বদৌলতে বিশেষ মর্যাদাপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় বীর হিসেবে, দেশপ্রেমিক কর্মী হিসেবে চাকুরি করবে, সফল উদ্যোক্তা হিসেবে বিভিন্ন সেক্টরে সফল ব্যবসায়ী হিসেবে অন্যদের চাকুরি দেবে এবং দেশ থেকে বেকারত্বের অবসান ঘটাতে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এনে বাংলাদেশকে তথা বিশ্ববাসীকে বাসযোগ্য করে তুলবে। এই স্বপ্ন সারথি চিন্তার বাস্তাবায়নে প্রয়োজন শিক্ষিতজনদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এনে আগামী প্রজন্মকে সাধারণ শিক্ষার সাথে সাথে অধিক গুরুত্ব দিয়ে কর্মমুখী শিক্ষার দিকে ধাবিত করার কাজে উৎসাহ দেয়া। এ কথা মনে রাখতে হবে, হাতে কলমে যারা ভালো কাজ জানে ভালো ভালো চেয়ার টেবিল তাঁদের জন্য এখনও ফুলের মালা হাতে অপেক্ষা করে।
সরকার কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে বহুটি পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠানকে ভবনের জন্য অর্থ্যায়নই করছে না এ-সকল প্রতিষ্ঠানের ছেলে- মেয়েদের সরকারি প্রনোদনার মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে। এ ছাড়াও শুধু দেশের নয় বিদেশেও শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দিচ্ছে। এসকল সুযোগ-সুবিধা বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কাজে লাগালে আর্থিক প্রনোদনা পাবার পাশাপাশি চাকুরির বাজারেও চাহিদা বিদ্যমান থাকবে। এ-সকল সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মদের নিকট পৌছে দেবার দায়িত্ব প্রত্যেকটি শিক্ষিত নাগরিকের, যা পালন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও দেশপ্রেমিকের কর্তব্য।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More