আলমডাঙ্গার পারলক্ষ্মীপুরের স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ১০ বছর পর অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন

স্টাফ রিপোর্টার: স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় প্রধান শিক্ষক আলমডাঙ্গার পারলক্ষীপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার দীর্ঘ ১০ বছর পর গতকাল সোমবার আদালতে চার্জ গঠন সম্পন্ন হয়।
পুলিশ ও মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের সত্যতা এবং ওই স্কুলছাত্রীর পোশাকের কেমিক্যাল টেস্ট ধর্ষণের আলামত পাওয়ায় গতকাল সোমবার বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে চার্জ গঠন করেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষের সাথে বাদীপক্ষকে আইনি সহায়তা দিয়ে আসছে মানবতা ফাউন্ডেশন।
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের পারলক্ষ্মীপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন একই গ্রামের ইসমাইল হোসেন। ২০১১ সালের ৯ আগস্ট একই গ্রামের দিনমজুরের কন্যা পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে অফিস কক্ষে ডেকে ধর্ষণ করেন প্রধান শিক্ষক ইসমাইল হোসেন। সেসময় বিষয়টি কাউকে জানালে ওই স্কুলছাত্রীকে প্রাণনাশের হুমকি দেন তিনি। তবে কিছুদিন পর থেকেই ওই স্কুলছাত্রীর শারীরিক পরিবর্তন শুরু হয়। ঘটনার দুই মাসের মাথায় অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার উপসর্গ দেখা দিলে প্রধান শিক্ষক ইসমাইল হোসেনের অপকর্মের কথা তার মাকে জানিয়ে দেয় ওই ছাত্রী। এরপর বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে সাধারণ মানুষ। উত্তেজিত জনতা বিদ্যালয় ঘেরাও করে প্রধান শিক্ষক ইসমাইলকে আটকে রাখে।
খবর পেয়ে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ ঘটনাস্থলে যান। তবে অবস্থা বেগতিক হওয়াই জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে ইসমাইল হোসেনকে আটক করে নেয়া হয় থানায়। এরপর ওই স্কুলছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে স্মাইল হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। পরে ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় জবানবন্দি দেয় স্কুলছাত্রী। এ ঘটনায় মানবতা ফাউন্ডেশন সহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা নির্যাতিতাদের পাশে দাঁড়ায়।
এর কিছুদিন পরই পঞ্চম শ্রেণীতে পড়–য়া নাবালিকা স্কুলছাত্রী সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে কন্যা সন্তান প্রসব করেন। নাম রাখা হয় সেবা। এদিকে, স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ধর্ষণের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিট দাখিল করেন। পুলিশ রিপোর্ট ও মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের প্রমাণ মিললেও ডিএনএ পরীক্ষায় মেলেনি শিশুকন্যার পিতৃপরিচয়। খুলনা ল্যাবে ভিকটিম, নবজাতক ও আসামীর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা সিআইডি’র ডিএনএ ব্যাংকে পরীক্ষা করা হয়। তাতে স্কুলছাত্রীর গর্ভে জন্ম নেয়া শিশুটির বায়োলজিক্যাল ফাদার আসামি নন মর্মে রিপোর্ট দেয়া হয়। এরপর স্কুলছাত্রীর পুনরায় ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন জানালে তা নামঞ্জুর করেন চুয়াডাঙ্গা আদালতের তৎকালীন জেলা জজ। পরে উচ্চ আদালতে আপিল করেন বাদীপক্ষ। অপরদিকে মামলা দায়েরের পর থেকেই অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
আসামি পক্ষ থেকে মামলা বিলম্বিত করার অপচেষ্টা করার কারনে, রাষ্ট্রপক্ষে পিপি অ্যাড. আবু তালেব বিশ্বাস ও বাদী পক্ষের নিয়োজিত আইনজীবী মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট মানি খন্দকার চার্জ গঠনের বিষয়ে তাগাদা দেন। আসামি পক্ষ থেকে ২০১৩ সালে ও ২০১৫ সালে ডিসচার্জের আবেদন করা হয়। গত এক মাসে দুই দফা উভয় পক্ষের শুনানি শেষে, বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের জজ মুসরাত জেরীন গতকাল ২০ সেপ্টেম্বর আসামী ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় অভিযোগ গঠন করেন। এখন এ মামলায় আগামী ধার্য তারিখ থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে। মামলার বিচারে আর কোন বাধা রইল না। চার্জ শুনানি করেন বাদীপক্ষে পিপি অ্যাড. আবু তালেব বিশ্বাস ও অ্যাড. মানি খন্দকার।
অপরদিকে আসামি পক্ষে ডিসচার্জ বিষয়ে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী আলহাজ মো. আব্দুস সামাদ। চার্জ গঠন হওয়ায় বাদী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। বাদী, ভিকটিম ও এলাকাবাসী আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- আশা করছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. মানি খন্দকার জানান, ভিকটিমের সন্তানটির পিতৃ পরিচয়ের বিষয়ে মামলা চলাকালীন যেকোন ধরনের আইনে গ্রহণীয় পদক্ষেপ নিতে বাধা নেই; বহু ভিকটিম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মাধ্যমে দেশের বাইরে সিঙ্গাপুরে ডিএনএ টেস্ট করায়ে কাক্সিক্ষত সঠিক ফলাফল পেয়েছেন। তিনি আরো বলেন, এখন এই ধর্ষনের বিষয়টি সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে প্রমাণ করে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাই রাষ্ট্রপক্ষের বড় দায়িত্ব। ধর্ষনের বিচার এর নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্র পক্ষের পাশাপাশি মানবতা ফাউন্ডেশন বাদীকে যাবতীয় আইনি সহায়তা দিয়ে যাবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More