কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহসহ ২৬ জেলায় বাড়তি সতর্কতা

স্টাফ রিপোর্টার: কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহসহ দেশের ২৬ জেলার পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর। কুমিল্লার ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় যে সহিংসতা হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেজন্য নানা ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর এ নির্দেশনা দেয়া হয়। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং ঈদে মিল্লাদুন্নবী, সনাতন ধর্মাবলম্বীদে লক্ষ্মী পূজা ও বৌদ্ধদের প্রবারণা পূর্ণিমাকে সামনে রেখে এই বাড়তি সতর্কতার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের কর্মকর্তারা। আগামী ১০দিন এ বাড়তি সতর্কতা থাকবে। এ সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে ধাপে ধাপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি কমিয়ে আনা হবে। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে না হলে সতর্কতার মেয়াদ আরও বাড়বে। থানা এলাকায় টহল, গোয়েন্দা নজরদারি, সাইবার মনিটরিং বাড়ানোর পাশাপাশি বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিয়ন, গ্রামে সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দিতে কথা বলা হয়েছে। এই কাজে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, ইমাম ও ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করার পরামর্শও দেয়া হয়েছে। যেসব জেলাতে সতর্ক করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রংপুর বিভাগের সাতটি জেলা রয়েছে। এগুলো হলো পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী। রাজশাহী বিভাগের রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও পাবনা। খুলনা বিভাগের জেলা রয়েছে পাঁচটি। এগুলো হলো: বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মাগুরা, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ। যে জেলা থেকে ঝামেলার শুরু, সেই কুমিল্লা ছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগে রয়েছে চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী ও কক্সবাজার। ঢাকা বিভাগে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, নরসিংদী ও মুন্সিগঞ্জকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সিলেট বিভাগের চার জেলার মধ্যে সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক শান্তি বিনষ্টের জন্য কোনো বিশেষ চক্র বা গোষ্ঠী যাতে নতুন করে ভীতি ছড়াতে না পারে এজন্য বিভিন্ন পর্যায়ে নজরদারি বাড়াচ্ছে গোয়েন্দারা। যাতে এ ধরনের ষড়যন্ত্রের নীল নকশা তৈরি করার সময়ই তাদের দ্রম্নত আইনের আওতায় আনা যায়।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১০ দিন এ বাড়তি সতর্কতা চলমান থাকবে। এ সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে ধাপে ধাপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি কমিয়ে আনা হবে। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক অনুমেয় না হলে বিশেষ সতর্কতার মেয়াদ আরও বাড়বে। কেউ যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিতে না পারে সেজন্য প্রতিটি থানাকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা কাজ করছেন। একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রের তথ্যানুযায়ী, জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা তত বেশি অপতৎপরতা শুরু করেছে। সম্প্রতি জামায়াতের উচ্চপর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের কাছ থেকে দেশে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরির বিভিন্ন পরিকল্পনার তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে গত বুধবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মন্দির, স্থাপনা ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার পর্যন্ত ৭১টি মামলা হয়েছে। আরও কিছু মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সোমবার রাত পর্যন্ত এসব মামলায় ৪৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. কামরুজ্জামান। তিনি জানান, এসব ঘটনায় জড়িত বিপুলসংখ্যক দুষ্কৃতিকারী এখনো পলাতক রয়েছে। তাদের ধরতে বিভিন্ন জেলায় সাঁড়াশি অভিযান চলছে। এ ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যারা বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক পোস্ট ও ভিডিও ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানোর চেষ্টা করছে এসব সাইবার অপরাধীদেরও একটি বিশাল তালিকা তৈরি করের্ যাব-পুলিশ গ্রেপ্তার অভিযানে নেমেছে।
এদিকে রংপুরের পীরগঞ্জের জেলেপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর-দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় মঙ্গলবার পর্যন্ত অর্ধশত ব্যক্তি গ্রেপ্তার হলেও আতঙ্ক কাটেনি সেখানকার বাসিন্দাদের। বড় করিমপুরের এলাকাবাসী পুলিশকে জানায়, চোখের সামনে চেনা মুখগুলো এসে পেট্রোল ঢেলে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। হাতে-পায়ে ধরেও তাদের এ কাজ বন্ধ করা যায়নি। ঘরে ঢুকে টাকা, স্বর্ণ, গরু, ছাগল লুট করে নিয়ে গেছে। তবে তারা পুলিশের কাছে হামলাকারীদের নাম স্বীকার করতে ভয় পাচ্ছে।
কুমিল্লাতেও হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেও অনেকটা একই ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিশেষ করে যে পূজাম-প থেকে পবিত্র কোরআন শরীফ উদ্ধার করা হয়েছে, ওই এলাকার সংখ্যালঘু অনেক পরিবার এখন বিনিদ্র রজনী পার করছেন। তাদের ভাষ্য, সন্দেহভাজন অনেক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হলেও এ ঘটনার মূল ইন্ধনদাতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই যেকোনো সময় আবারও সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটতে পারে। পুরো ঘটনার সুষ্ঠু সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তারা স্বস্তি পাচ্ছেন না।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, কুমিল্লার ম-পে যিনি ঘটনাটি ঘটিয়েছেন, যে ঘটনার কারণে এতকিছু, তিনি শিগগিরই ধরা পড়বেন। তিনি বারবার স্থান পরিবর্তন করছেন, তাই ধরা পড়ছেন না। তবে বেশিদিন তিনি পালিয়ে থাকতে পারবেন না বলে আশা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আসাদুজ্জামান খান কামাল পীরগঞ্জের ঘটনা প্রসঙ্গে জানান, পরিতোষ নামে এক তরুণ ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দিয়েছিল। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বাড়ি পুলিশ পাহারা দিয়েছে। তার বাড়িতে হামলা হয়নি, তার পাশের গ্রামে হামলা হয়েছে। গোয়েন্দারা হামলাকারীদের শনাক্ত করেছে। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি অপপ্রচারের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে আরও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে ষড়যন্ত্রকারী কোনো চক্র যাতে নতুন করে কোনো হামলার ঘটনা ঘটিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে এজন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে। খোদ দলীয় সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি দেশবাসীকেও এ ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
সাম্প্রতিক ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যখন বিশ্বসভায় একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, ঠিক সে সময়ে একটি চিহ্নিত মহল পরিকল্পিতভাবে দেশে সাম্প্রদায়িক হানাহানি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। সরকার ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করেছে। ইতিমধ্যে অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে এবং বাকিদেরও আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সরকার পরিস্থিতির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছে এবং এই ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More