চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গাসহ ৪৭ উপজেলায় আ.লীগের পরাজয়ের নেপথ্যে

স্টাফ রিপোর্টার: তৃতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের চেয়ে স্বতন্ত্রদের জয় বেশি হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে ৩৩টি জেলার ৪৭ উপজেলার ফলাফল। এসব উপজেলায় ৪০১টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। সেখানে ২৬০ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জিতেছেন ১২০টিতে। এছাড়া জাতীয় পার্টি ১২টিতে ও অন্যান্য দলের প্রার্থীরা তিনটিতে জয়ী হন। এ ৪৮টি উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন পরিষদের ফল স্থগিত রয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের সবকটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হেরে গেছেন। এসব উপজেলায় নৌকা প্রার্থীদের পরাজয় মূলত এ ধাপের সার্বিক ফলে প্রভাব ফেলেছে। তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদের ফল বিশ্লেষণে করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এ ধাপে ভোট হওয়া ৯০১টি উপজেলায় স্বতন্ত্ররা ৪৪৫টিতে জয় পেয়েছেন এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জিতেছেন ৪২৬টিতে।
এতে আরও দেখা যায়, ১৩টি উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সমান সংখ্যক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এসব উপজেলায় ১০৪টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়েছে। এই ১০৪টির মধ্যে ৫০টিতে আওয়ামী লীগ ও ৫০টিতে স্বতন্ত্ররা জয়ী হয়েছেন। দুটিতে জাতীয় পার্টি ও দুটির ফল স্থগিত রয়েছে। এছাড়া সাতটি উপজেলার সবকটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। মাদারীপুর সদর ও শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদে কাউকে মনোনয়ন দেয়নি দলটি। এ ধাপে অন্তত ১৮০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় অবস্থানেও ছিলেন না আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা।
তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে এমন ফলাফলের অনেক কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান। তিনি বলেন, এ ফলের পেছনে অনেক কারণ আছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে- আমাদের দলে বিএনপি-জামায়াত থেকে অনুপ্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে। দল থেকে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অন্য জনপ্রিয়দের উসকানি দিয়ে প্রার্থী করছে যাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা যায়। দ্বিতীয়ত, আবেগের বশবর্তী হয়েও অনেক প্রার্থী নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। তৃতীয়ত, আগের নির্বাচনগুলোতে বিদ্রোহীদের ওইভাবে বহিষ্কার করা হয়নি। এসব কারণে এসব ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি বলেন, সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নিজ নিজ এলাকায় কতটিতে নৌকা ও বিদ্রোহী হয়েছেন তা বের করার। সেই আলোকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে।
২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে এক হাজার ১টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। ওই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ৯৯ জনসহ মোট ৫২৫টিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। আর একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীসহ ৪৪৬টিতে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।
দেখা যায়, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় তৃতীয় ধাপে ভোট হওয়া ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে মাত্র একটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয় পেয়েছেন। বাকি ৮টিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন। একই জেলার বিরামপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চারটিতে স্বতন্ত্র ও তিনটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জিতেছেন। একইভাবে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় এ ধাপে ৮টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। সেখানে মাত্র একটিতে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তিনটিতে স্বতন্ত্র ও একটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বাকি তিনটির ফলাফল স্থগিত রয়েছে। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে মাত্র একটিতে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। বাকি ছয়টিতে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। একই চিত্র দেখা গেছে সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায়। এ উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী। বাকি চারটিতেই জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর তুলনায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জিতেছেন এমন উপজেলার মধ্যে আরও রয়েছে-পঞ্চগড় সদর; দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ; লালমনিরহাট সদর ও কালীগঞ্জ; রংপুর সদর ও তারাগঞ্জ; কুড়িগ্রামের নাগেরশ্বরী ও সদর; গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ; বগুড়ার ধুনট ও বগুড়া সদর। বাকিগুলোর মধ্যে রয়েছে-নওগাঁর মান্দা; নাটোরের লালপুর ও বাগাতিপাড়া; কুষ্টিয়ার দৌলতপুর; চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা; ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর; মাগুরার মোহাম্মদপুর; নড়াইলের কালিয়া; সাতক্ষীরার দেবহাটা ও কালীগঞ্জ। পিরোজপুরের কাওখালী; শেরপুরের নকলা ও নালিতাবাড়ী; ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা; নেত্রকোনার পূর্বধলা ও কলমাকান্দা; কিশোরগঞ্জ সদর; মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী; নরসিংদীর রায়পুর; এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও চর ভদ্রাসন। সুনামগঞ্জ সদর; সিলেটের জৈন্তাপুর; হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল, নবীনগর; কুমিল্লার হোমনা; নোয়াখালীর সেনবাগ; কক্সবাজারের পেকুয়া এবং খাগড়াছড়ির দিঘিনালা ও মহালছড়ি।
এ ৪৭টি উপজেলায় মোট ৪০১টি ইউপিতে ভোট হয়েছে। এরমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ২৬০টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয়। আর নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন ১২০টি ইউপিতে। ১২টি ইউপিতে জয় পেয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। তিনটি পেয়েছে অন্যান্য দল। আর ৬টি ইউপির ফল স্থগিত রয়েছে।
১৩টিতে সমানে সমান : ইসির সমন্বিত ফলাফল থেকে আরও জানা যায়, ১৩টি উপজেলায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমান সংখ্যক চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন। উপজেলাগুলো হলো-রংপুরের কাউনিয়া (আওয়ামী লীগ : স্বতন্ত্র ৪:৪), গাইবান্ধার পলাশবাড়ী (২:২), চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ (৬:৬), মেহেরপুর সদর (১:১) ও গাংনী (২:২), যশোরের শার্ষা (৫:৫), ময়মনসিংহের ত্রিশাল (৬:৬), টাঙ্গাইলের নাগরপুর (৫:৫), সিলেটের গোয়াইনঘাট (৩:৩), হবিগঞ্জ সদর (৪:৪), কুমিল্লার দাউদকান্দি (৬:৬), কক্সবাজারের চকরিয়া (৫:৫) ও বান্দরবানের আলিকদম (২:২)। এ ১৩ উপজেলায় মোট ১০৪টি ইউপিতে ভোট হয়েছে। এর মধ্যে ৫০টিতে স্বতন্ত্র এবং ৫০টি ইউপিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন। দুটিতে জয় পেয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। আর দুটি ইউপির ফল স্থগিত রয়েছে।
সাত উপজেলায় সবকটিতে আওয়ামী লীগ : ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাতটি উপজেলার যেসব ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়েছে সেগুলোর সবকটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে-জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ৫টি, রাজশাহীর মোহনপুরের ৬টি, বরগুনার পাথরঘাটায় ৪টি, জামালপুরের মেলান্দহে ১০টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের ১১টা, ফেনীর পরশুরামে তিনটি ও ছাগলনাইয়ায় ৫টি ইউনিয়ন পরিষদ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More