চুয়াডাঙ্গায় উন্নয়নমূলক কাজের মান বজায় রাখতে রেলওয়ের জমি থেকে বাড়িঘর ও দোকানপাট উচ্ছেদ শুরু

ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা : উচ্ছেদ হওয়া বস্তিবাসী খোলা আকাশের নিচেই কাটালো রাত
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় রেলওয়ের জমি থেকে তিনশতাধিক বাড়ি ও দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করা হয় ২৩ হাজার টাকা। গতকাল বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল জোনের কর্মকর্তারা
অভিযানসূত্রে জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সরকার রেলওয়ের উন্নয়নের জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। চুয়াডাঙ্গাসহ বেশ কয়েকটি স্টেশনে উন্নয়নমূলক কাজ চলমান। তাই কাজ করার সুবিধার্থে রেলওয়ের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। গত ২ মাস ধরে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশসহ মাইকিংও করা হয়েছে। দখলকারীরা তাদের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে না নেয়ায় তা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ সময় ২৩টি দোকান ভেঙে দেয়াসহ ২৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যারা সরিয়ে নিচ্ছেনা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বস্তি উচ্ছেদের পর শ্রমিক, হকার, কাজের বুয়া, রিকশা চালকসহ কর্মজীবী নারী-পুরুষ মাথাগোজার ঠাঁয় নিয়ে পড়েছে বিপাকে। এই তীব্র শীতে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুসন্তান নিয়ে খোলা আকাশের নিচেই বসে আছে প্রায় ২৫০ পরিবার। এখন থেকে অনিশ্চয়তায় কাটবে তাদের রাত। এদিকে বস্তিতে বসবাসকারিদের দাবি, তারা ভূমিহীন, থাকার কোন জায়গা নেই। সরকারের নিকট স্থায়ীভাবে বাসস্থানের দাবি তাদের।
উচ্ছেদ হওয়া ইদ্রিস আলী বলেন, মাত্র দুদিন আগে নোটিশ দিয়েছিলো। আজ ঘর আমরা নিজেরায় সরিয়ে নিয়েছি। খোলা আকাশের নিচে আমার বৃদ্ধা স্ত্রী ময়না খাতুনকে নিয়ে বসে আছি। সামনের দিন কিভাবে কাটাবো এটা আমি জানিনা। এলাকার মেম্বাররাও একটু খোঁজ নেইনি। সরকার এতো উন্নয়ন করছে দেখছি। আমাদের একটা মাথা গোঁজার যেন ঠাঁই করে দেয় এই আবেদন করছি।
রোকেয়া খাতুন নামে এক বৃদ্ধা বলেন, আমার বয়স ৭৫ ছুইছুই। চার মাস পূর্বে আমার স্বামীটা মারা গেছে। আমি চোখেও দেখি না। এই রেলবস্তিতে প্রায় ৩৫ বছর যাবত বসবাস করছি। আমারসহ প্রায় ২৫০টি ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করেছে। আমার ঘরে থাকা চোখের ডাক্তার দেখানোর জন্য জমানো ৩৫ হাজার টাকাও আর খুঁজে পাচ্ছি না। এখন আমি কোথায় যাবো। এই শীতে থাকবো কোথায়? কোন জমিজমাও নেই আমার। আজ সারাদিন না খেয়ে আছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও আমাদের খোঁজ খবর নেয়নি। সরকারের নিকট আমাদের দাবি স্থানীয়ভাবে যেন বাসস্থানের ব্যবস্থা যেন করে দেয়া হোক।
শাহিন নামে এক যুবক বলেন, ১৫ বছর যাবত এখানে মা-বাবা ও স্ত্রী সন্তানের নিয়ে বসবাস করে আসছি। গত ৫/৬ দিন আগে একটি দোকান দিয়েছিলাম। দুদিন আগে নোটিশ দিয়েই বাড়িসহ দোকান ভেঙে দিয়েছে। এখন আমার থাকার জায়গাটাও নেই। জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন আমাদের যেন একটা বাসস্থান করে দেয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল ও ডিভিশনাল (ভূ-সম্পত্তি) অফিসার মো. নুরুজ্জামান বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে রেলওয়ের উন্নয়নের জন্য সরকার যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে তার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন একটি। কাজ করার সুবিধার্থে অন্যান্য রেলওয়ে জমি থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে চুয়াডাঙ্গায় ২ মাস যাবত চেষ্টা করছি অবৈধ স্থাপনা সরানোর জন্য। নোটিশ এবং মাইকিং করেও কোন কাজ হয়নি। ফলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে রেলওয়ের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা ২৩টি দোকানঘর উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রায় ৩০০ বাড়িঘর নিজেরাই সরিয়ে নিয়েছে। কারো জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করে উচ্ছেদ অভিযান করা হয়নি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, রেলওয়ে তাদের জমিতে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। শীত বিবেচনায় বস্তিবাসীদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হবে। যারা প্রকৃত অসহায় তারা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানাবো। আমরা বাসস্থানের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবো।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিএম তারিক-উজ-জামান। সহযোগিতা করেন সদর থানা পুলিশের দল ও চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More