চুয়াডাঙ্গায় করোনা ভাইরাস ও উপসর্গ নিয়ে আরও ৬ জনের মৃত্যু : নতুন শনাক্ত ১২৮

হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যায় অমিল : শনাক্তকৃত সক্রিয় রোগীদের মধ্যে নিজ নিজ বাড়িতে রয়েছেন ১৮০২

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনা ভাইরাস ও উপসর্গ নিয়ে আরও ৬ জন মারা গেছেন। তবে সিভিল সার্জন বলেছেন, রোববার চুয়াডাঙ্গায় মৃতের সংখ্যা ৩ জন। নতুন সংক্রমিত হয়েছেন ১২৮ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলার ৫৩ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ২৩ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ৩১ জন ও জীবননগর উপজেলার ২১ জন। চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে জেলায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিলো ১৪০ জন। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় মারা গেছেন ১২৪ জন ও ১৬ জন মারা গেছেন চুয়াডাঙ্গার বাইরে আইসোলেশনে থাকা অবস্থায়। গতরাতে হাসপাতালের রেডজোন ও হলুদ জোনে বেশ ক’জন রোগীর অবস্থা ছিলো খুবই শংকটাপন্ন।
চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ গতকাল রোববার নতুন ৪৪৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ১৭২০৫ জনের নমুনা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে গতকালের ৪৭৩ জনের নিয়ে মোট ১৬৭৭৫ জনের। নতুন ১২৮ জনকে নিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাস সংক্রমিত তথা কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৪৬৭৭ জন। রোববার সুস্ত হয়েছেন ২৬ জন। এ নিয়ে মোট ২৬০৮ জন সুস্থ হলেন। বর্তমানে জেলায় শনাক্তকৃত সক্রিয় রোগী রয়েছেন ১ হাজার ৯শ ২৯ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে আইসোলেশনে রয়েছেন ১২৭ জন, বাড়িতে রয়েছেন ১৮০২ জন। এছাড়াও উপসর্গ নিয়ে ১০৯ জন রোগী হাসপাতালের হলুদ জোনে ভর্তি রয়েছেন। বাড়িতেই ভুগছেন বহু মানুষ। এদের অনেকেই করোনা সংক্রমিত কিনা তা নিশ্চিত হতে পরীক্ষা করাতে এগিয়ে আসছেন না। নতুনা পরীক্ষা অনুপাতে গত এক সপ্তাহে চুয়াডাঙ্গা ৩৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের ৮৩ জন আক্রান্ত হলেও এর মধ্যে ৭১ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জনের দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি ১২৭ জন। অথচ বাস্তবে খোঁজ নিয়ে পাওয়া গেছে ভিন্ন চিত্র। হাসপাতালের হলুদ জোনে ১০৯ জন। আর রেডজোনে ৮৮ জন। অপরদিকে, সিভিল সার্জনের দেয়া তথ্যের সাথে হাসপাতালে মৃতের সংখ্যার চরম অমিল পাওয়ার বিষয়টি পত্রস্থ করা হলে তিনি মৃতের তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে কড়াকাড়ি আরোপ করেছেন বলে একাধীক সূত্র জানিয়েছেন। এ কারণে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা যথাসময়ে সঠিক তথ্য না পেয়ে ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। তথ্যে গড়বড়ের বিষয়ে সাংবাদিকদের অনেকেই প্রশ্ন তুলে বলেছেন, সারা দেশসহ গোটা বিশে^ই যখন করোনা ভাইরাসের বাস্তব চিত্র প্রকাশের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে তখন চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য দিতে সিভিল সার্জনের এহেন আচরণ কেনো?
রোববার করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাজরাহাটীর শরিফ জোয়ার্দ্দারের ছেলে শিপন হোসেন। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে সর্দি কাশি জ¦রে ভুগছিলেন। নমুনা পরীক্ষা করে করোনা ভাইরাস পজিটিভ হয়। গতকাল সকালে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মারা যান ৩৮ বছর বয়সী শিপন হোসেন। করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ডিঙ্গেদহের আহম্মেদ আলীর ছেলে আশকার আলী। ৫৫ বছর বয়সী আশকার আলী গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে মারা গেছেন বলে জানা গেছে। জীবননগর আন্দুলবাড়িয়ার আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী নাসিমন খাতুন করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল রাত সোয়া ৮টার দিকে সদর হাসপাতালে মারা গেছেন। তাকে গতপরশু শনিবর দুপুরে হাসপাতালে নিয়ে হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। এছাড়া করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, হারদী ওসমানপুরের আকবরা আলী, জেলা সদরের নেহালপুরের শ্রী মৃত্যুঞ্জয়, ও দর্শনার রেলকুলীর আনোয়ার আহমেদ।
এদিকে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে তথা রেডজোনে রোগীর নিকটজনদের অনেকেই নিবির্ঘেœ যেমন আসা যাওয়া করতে দেখা যাচ্ছে, তেমনই কিছু স্বেচ্ছাসেবিকে রোগীর পাশে গিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে দেয়ার পরও তাদের জনসাধারণের সাথে নির্বঘেœই মেলা মেশাও করতে দেখা যাচ্ছে। তা ছাড়া করোনা আক্রন্ত হয়ে মারা গেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দাফনে শতভাগ স্বাস্থ্য বিধি মানা হচ্ছে না। উপসর্গ নিয়ে যারা মারা যাচ্ছে তাদের দাফনে স্বাস্থ্য বিধি মানার নূন্যতম তাগিদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। করোনা ওয়ার্ডে আসা যাওয়া ব্যাক্তিদের মাধ্যমেও যেমন সংক্রমণ বাড়ছে, তেমনই মৃতদেহ দাফনে স্বাস্থ্য বিধি যথাযথ না মানার কারণেও সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুকি রয়েছে। স্বাস্থ্য সচেতন অনেকেই এ অভিমত ব্যাক্ত করে বলেছেন, প্রশাসনের আশু পদক্ষেপ নেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More