চুয়াডাঙ্গায় চিকিৎসকসহ নতুন আক্রান্ত ৭ : সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ড বন্ধ

আলমডাঙ্গার হাড়োকান্দি ও জীবননগরে ৪টি এবং দর্শনার একটি ওয়ার্ডে আংশিক রেডজোন ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার আইসোলেশন ওয়ার্ডের এক চিকিৎসক এবং একই পরিবারের তিন সদস্যসহ নতুন করে ৭ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট ১৯৬ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হলেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে আসা ২০টি নমুনার ফলাফলে ৭ জনের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে বলে নিশ্চিত করেছে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিস। আলমডাঙ্গা উপজেলার হাড়োকান্দি গ্রামের ৬ জনের করোনা পজিটিভ হয়েছে। এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার আলমডাঙ্গার হাড়োকান্দি গ্রাম, জীবননগর পৌর এলাকার ৪টি ওয়ার্ডের আংশিক ও দর্শনা পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের আংশিক এলাকা রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে গত ১৬ জুন থেকে দর্শনা পৌর এলাকার দুটি ওয়ার্ড আংশিক রেড জোন হিসাবে ঘোষণা করা হয়। অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে সাধারণ রোগে (ননকোভিড) চিকিৎসাধীন এক রোগীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। ফলে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ড। করোনার উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য গতকাল জীবননগর ইসলামী ব্যাংকের ১২ জনসহ নতুন মোট ২১ জনের নমুনা প্রেরণ করা হয়েছে। জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মোট ১৯৬ জনের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১১০ জন। হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে রয়েছেন ৮৪ জন।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে চুয়াডাঙ্গার ২০টি নমুনা পরীক্ষার ফল আসে। এর মধ্যে ৭ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাস ইউনিয়নের হাড়োকান্দি গ্রামের ৬ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের একজন চিকিৎসকের করোনা ভাইরাস পজিটিভ হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন রোগির করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। জীবননগর পৌর এলাকার দৌলতগঞ্জপাড়ার চালক ওই রোগী গত শুক্রবার পেট ব্যাথা ও বমি নিয়ে সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি হন। শনিবার ওই রোগীর জ্বর ও কাশি বেশি হওয়ায় তাকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের হলুদ জোনে রেফার করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। সেখান থেকে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সোমবার রাতে ওই রোগীর রিপোর্ট করোনা পজিটিভ আসে। রাতেই তাকে হলুদ জোন থেকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার দুপুর থেকে সদর হাসপাতালের পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ড বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন বেশির ভাগ রোগীকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। কয়েকজন রোগীকে চক্ষু ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে। ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগী করোনা আক্রান্ত হওয়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে সাধারণ রোগীদের মাঝে। করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য আইসোলেশন ইউনিট ও সাধারণ রোগীর চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা করা হয়। যার কারণে সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যরা স্বাভাবিকভাবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিলেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে দায়িত্বরত অবস্থায় একজন মেডিকেল অফিসার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ওই চিকিৎসক বর্তমানে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। করোনা ইউনিটের দায়িত্ব পালন করায় তিনি শহরের একটি আবাসিক হোটেলে থাকতেন। আলমডাঙ্গার হাড়োকান্দি গ্রামের এক ব্যক্তি কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইসলামী ব্যাংক শাখায় চাকরি করতেন। ব্যাংকের কয়েকজন করোনা আক্রান্ত হলে লকডাউন করা হয়। পরে তিনি নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। অসুস্থ বোধ করলে হারদী হাসপাতালে নমুনা দিলে ১৮ জুন তার করোনা পজিটিভ হয়। এরপর তার ছোট ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী ও ৫ বছরের কন্যাসন্তান করোনা পরীক্ষা করালে তাদেরও পজিটিভ হয়। তারা বর্তমানে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। হাড়োকান্দি গ্রামের অপর একজন স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে কাজ করতেন নাগদাহ গ্রামে। তারও করোনা পজিটিভ হয়েছে। হাড়োকান্দি গ্রামের একটি পরিবার বেড়াতে যান নরসিংদী জেলায়। সেখান থেকে ফিরে তারা গ্রামে এসে এক নারী অসুস্থ বোধ করেন। করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিলে ১৬ জুন রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ওই নারীর স্বামী ও ৫ বছরের শিশু সন্তান করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেয়। শিশু সন্তানের করোনা পজিটিভ হয়। হোম আইসোলেশনে রয়েছে শিশুটি। হাড়োকান্দি গ্রামের ৬০ বছর বয়সী এক নারী ঢাকা থেকে কয়েক দিন আগে নিজ বাড়িতে আসেন। ঢাকায় মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। ওই নারীর মেয়ে ঢাকা ক্যান্সার হাসপাতালের নার্স হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। করোনা পরীক্ষায় তারও পজিটিভ হয়। এখন নিজ বাড়িতে আছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নতুন করে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাড়োকান্দি গ্রাম, জীবননগর পৌর এলাকার ৪টি ওয়ার্ডের আংশিক ও দর্শনা পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের আংশিক রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাস ইউনিয়নের হাড়োকান্দি গ্রাম রেডজোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডপাড়া রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জীবননগর পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের লাভলীপাড়া, ৪নং ওয়ার্ডের বড় মসজিদের পশ্চিম পাশে আকরামের চালের দোকান হতে মহানগর সিনেমা হল পর্যন্ত ও কসাইপাড়া, ৮নং ওয়ার্ডের চুয়াডাঙ্গা সড়কের পূর্ব দিকের তেল মিলের মোড় হতে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের অফিস হয়ে হালিম বিশ্বাসের বাড়ি পর্যন্ত, ৯নং ওয়ার্ডের ডিগ্রি কলেজ সড়কের মনিরের বাড়ি হতে মহিলা মাদরাসা মোড় পর্যন্ত রেডজোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
দর্শনা পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা নতুন করে রেডজোন ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বৃদ্ধ মারা যায়। তার সংস্পর্শে আসা ৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। আলমডাঙ্গার হাড়োকান্দি গ্রামে ৮ দিনে নতুন করে ৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পজিটিভ হওয়ায় রেডজোন ঘোষণা করা হয়েছে। আর জীবননগর পৌর এলাকায় একদিনে ৬ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় ৪টি ওয়ার্ডে আংশিক রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান বলেন, কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাব থেকে আসা ২০টি রিপোর্টে ৭ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ হয়েছে। কিছু এলাকায় করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ায় জেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি ওইসকল এলাকা রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করেছে। স্বাস্থ্য বিধি না মানায় জেলায় করোনার বিস্তার ঘটছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিতভাবে কাজ করছি। সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, দর্শনা আলমডাঙ্গা ও জীবননগরের কিছু এলাকা আংশিক রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে মঙ্গলবার বিকাল থেকে। রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণার লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে তথ্য প্রেরণ করা হয়েছে। ২৩ জুন থেকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে তা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More