চুয়াডাঙ্গায় মাঘের প্রথম সপ্তাহেও অব্যাহত থাকবে শৈত্যপ্রবাহ

স্টাফ রিপোর্টার: মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত। সূর্যের দেখা মিলছে না দিনের বেশির ভাগ সময়। এতে বেশি দুর্ভোগে পড়ছে নিম্নআয়ের মানুষ। এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে, মাঘের প্রথম দিকেও এ শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে শুক্রবার জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শনিবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, রোববার দিনভর গোটা জেলা ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছিলো। এর আগে শুক্রবার ও শনিবারেও জেলায় সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। হিম বাতাস আর ঘন কুয়াশায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। এবং আরও কয়েক দিন শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। শৈত্য প্রবাহের কারণে বেশি দুর্ভোগে রয়েছে নিম্ন আয়ের ও খেটে খাওয়া মানুষ। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। দিনের বেশিরভাগ সময় সূর্যের দেখা মিলছে না। উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আলমডাঙ্গা উপজেলার সৃজনী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের সহকারী শিক্ষক জিল্লুর রহমান জানান, ঘন কুয়াশা এবং শীতের তীব্রতার কারণে বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি অনেক কম।’ শ্রমজীবী মানুষেরা বলছেন, কয়েকদিন ধরে এখানে সূর্যের দেখা মিলছে না। শীতের কারণে কাজ-কর্মে ব্যাঘাত ঘটছে। ঠিকমত কাজে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের খুদিয়াখালী আবাসনের বদর উদ্দিন জানান, প্রচ- শীতে কাজে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই বসে বসে খড়কুটো জ¦ালিয়ে আগুন পোহাচ্ছি।’
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার পুলিশ লাইন পাড়ার রিকশা চালক হারুন বলেন, ‘পেটের তাগিদে ঘরের বাইরে বের হতে হয়েছে। পেটে ভাত না থাকলে শীত, গরম আর বর্ষায় কী আসে যায়। রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি কম। ঘুরে ঘুরে তেমন একটা ভাড়া হচ্ছে না। অলস সময় পার করে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।’
চুয়াডাঙ্গা রেলবাজারের মুদি দোকানি ইমরান হোসেন বলেন, ‘সকাল থেকে দোকান খুলে বসে আছি। বেচা বিক্রি নেই। এত বেশি শীত ভাষায় বলে বোঝানো যাবে না।’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। জেলার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আকাশ ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়া থাকার কারণে সূর্যের দেখা মিলছে না। সূর্য না উঠায় শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। শৈত্য প্রবাহ আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। পৌষের শেষ দিকে মৃদু শৈত্য প্রবাহ শুরু হল, ফলে মাঘ মাসেও শীত থাকতে পারে।’
চুয়াডাঙ্গায় কম্বল বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন অবসরপ্রাপ্ত লেঃ কর্নেল সৈয়দ কামরুজ্জামান। গতকাল রোববার কর্মসূচির তৃতীয় দিনে শহরের গুলশানপাড়া ও বাগানপাড়া এলাকায় হতদরিদ্র, শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। অ্যাড. মসলেম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গার কৃতি সন্তান অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল সৈয়দ কামরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, অ্যাড. শামিম রেজা ডালিম, মো. শহিদুল ইসলাম রতন, আবু জাফর মন্টু, তৌফিক, চান্দু, মিলু, লুলু, ইঞ্জিনিয়ার বিশারত হোসেন, মোতালেব সাহেব, আলম মিয়া, মোশারেফ হোসেন, তৌহিদ প্রমুখ।
চুয়াডাঙ্গায় তীব্র শীতের কারণে ১০০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতাল, ৩টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের চেম্বারে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের ভিড় বাড়ছে। বিশেষ করে সদর হাসপাতালের শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ডগুলোয় ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, কয়েকদিন ধরে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘শীতে শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তীব্র শীতে বেশি নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এসব রোগীকে চিকিৎসা দিতে হবে। একই সঙ্গে সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শও দেন তিনি। তিনি বলেন, শীতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের টাটকা ও গরম খাবার খাওয়াতে হবে। কোনোভাবেই বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না। পানি ফুটিয়ে পান করাতে পারলে ভালো। আর শিশুদের সকাল-সন্ধ্যায় গরম পোশাক দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। কোনোভাবেই বেশি ঠান্ডা লাগতে দেয়া যাবে না।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, পৌষশেষের তীব্র শীতে জবুথবু পুরো দেশ। বেশ কয়েকটি জেলায় চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। হাড় কাঁপানো শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কুয়াশার দাপট। উত্তুরের হিম হাওয়ায় আলমডাঙ্গা উপজেলাসহ সারাদেশের মানুষই এখন শীতে অত্যন্ত কাবু। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত। আলমডাঙ্গায় চলতি মরসুমে টানা ৪ দিনের মতো মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলেছে। ঘন কুয়াশা বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে টুপটাপ ঝরছে। টানা ৪ দিনের এই শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন অনেকটা থমকে গেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ঘন কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা কমে আসায় যানবাহন চলাচল দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
সূর্যের দেখা মিললেও উত্তাপ না থাকায় এবং উত্তরের হিমেল বায়ু প্রবাহের কারণে তীব্র শীতের অনুভূতি বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েকগুন। সন্ধ্যা থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে গোটা জনপদ, যার ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষরা। তীব্র শীতের কারণে পশু-পাখির জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। শিশু ও বয়স্ক মানুষ শীতজনিত রোগের প্রকোপে পড়েছে।
এই তীব্র শীতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ছিন্নমূল ও হতদরিদ্রদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা দাস সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অবধি উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ঘুরে অসহায় ও ছিন্নমুল মানুষের হাতে শীত নিবারনের জন্য তাদের হাতে কম্বল তুলে দিচ্ছেন। এর আগেও একধাপ কম্বল তিনি বিতরণ করেছেন। উপজলা প্রশাসনের সাথে সাথে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরাও কম্বল বিতরণ করছেন। ১৪ জানুয়ারি রোববার সন্ধ্যার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা দাস হাটবোয়ালিয়ার ভূমিহীন ও গৃহহীন প্রকল্পে নির্মিত ১২টি বাসগৃহে বসবাসকারী পরিবারগুলোর মাঝে কম্বল ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক, ইউপি সদস্য সাহিবুল ইসলামসহ এলাকার কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More